জুট শ্রমিকদের উপর শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ রাজ্য সম্মেলনে

70 Year 32 Issue 30 March 2018

পশ্চিমবাংলার ঐতিহ্যমণ্ডিত চট শিল্পের শ্রমিকদের উপর নির্মম শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার শপথে ভাস্বর হয়ে উঠল এআইইউটিইউসি অনুমোদিত বেঙ্গল জুট মিলস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সপ্তম রাজ্য সম্মেলন৷ ২৩ মার্চ হুগলির ভদ্রেশ্বরে (কমরেড সনৎ দত্ত নগর) বিভিন্ন জুটমিলের ৩০০ জন প্রতিনিধি নিয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ উদ্বোধন করেন এআইইউটিইউসি–র রাজ্য সভাপতি কমরেড এ এল গুপ্ত৷

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কমরেড অমল সেন বলেন, শ্রম আইনগুলিকে লংঘন করে ব্যাপক হারে ঠিকা শ্রমিক, ভাউচার শ্রমিক এবং বদলি শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে৷ আজ চটশিল্পে মাত্র ১৫ শতাংশ শ্রমিক পার্মানেন্ট, বাকিদের নেই কাজের কোনও গ্যারান্টি, সামাজিক সুরক্ষা৷ চটকল শ্রমিকদের মজুরি এত কম যে এতে শ্রমিকদের সংসার চলে না– তাই অপুষ্টি, অর্ধাহার, অশিক্ষা, বিনা চিকিৎসা তাদের নিত্যসঙ্গী৷ মালিকরা একতরফা ভাবে বারবার বেতন কাঠামো ভেঙে দিয়েছে, অমান্য করেছে লেবার ট্রাইব্যুনালের রায়, জুট ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ, সন্তোষ ভট্টাচার্য কমিশনের সুপারিশ এবং সর্বোপরি ত্রিপাক্ষিক চুক্তিকে তারা মানেনি৷ মালিকদের মুনাফা এবং লুঠের রাজত্বকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি৷ কেন্দ্রীয় সরকারে যেই থাকুক না কেন ইউপিএ এনডিএ অথবা সিপিএম সমর্থিত সরকার সকলেই খাদ্যদ্রব্য প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে চটের বস্তার বাধ্যতামূলক ব্যবহারের আইন জেপিএম অ্যাক্ট ১৯৮৭–কে শিথিল করে দিয়ে পরিবেশ দূষণকারী সিন্থেটিক বস্তার বরাত বৃহৎ পুঁজির মুনাফার স্বার্থে বাড়িয়ে দিয়েছে৷ চটশিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারের কোনও পরিকল্পনা নেই৷

সম্মেলনে ১৮ জন শ্রমিক প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন৷ সংগঠনের সভাপতি কমরেড দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, ২০০২ সালের ‘উৎপাদনভিত্তিক বেতন’ চালু করা এবং শ্রমিকদের মজুরি কমিয়ে ১০০ টাকা করার ‘কালাচুক্তি’র বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠন ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে৷  বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার সামাজিক সুরক্ষার আইন ইএসআই অ্যাক্ট এবং পিএফ আইনকে গুরুত্বহীন করে দিতে চাইছে৷ এর বিরুদ্ধেও আমাদের লড়তে হবে৷

সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসাবে এআইইউটিইউসি–র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড শংকর সাহা বলেন, চটকল মালিকরা যেভাবে শ্রমিকদের শোষণ করছে, যেভাবে সরকারও তাদের তাঁবেদারি করছে তাতে শ্রমিকদের আপসহীন লড়াইয়ের পথে যাওয়া ছাড়া তাদের জ্বলন্ত সমস্যাগুলির সমাধানের অন্য কোনও পথ নেই৷ আজ শ্রমিক আন্দোলনকে সুবিধাবাদ, নীতিহীনতা এবং আপসের ঘৃণ্য রাজনীতি গ্রাস করতে চাইছে৷ এর বিরুদ্ধে আপসহীন ঐক্যবদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনের দিকে শ্রমিকদের যেতে হবে৷ এর জন্য শ্রমিকদের চাই উন্নত চেতনা এবং আদর্শ চর্চা৷ সম্মেলন থেকে কমরেড দিলীপ ভট্টাচার্যকে সভাপতি ও কমরেড অমল সেনকে সম্পাদক করে ২৬ জনের কমিটি গঠিত হয়৷