হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ একর জমি ‘আইএমজি ভারত’ নামের একটি প্রাইভেট কোম্পানিকে দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তেলেঙ্গানার কংগ্রেস সরকার। এই জমিতে রয়েছে নানা প্রাকৃতিক সম্পদ, বন্যপ্রাণী। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে প্রাইভেট স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরির অজুহাতে এত বিপুল পরিমাণ জমি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলন তীব্র হয়েছে। এআইডিএসও, ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি সহ বিভিন্ন ছাত্র, পরিবেশ ও বিজ্ঞান সংগঠন এর বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদ ধ্বনিত করেছে।
১৯৭৫ সালে তৎকালীন অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রক একটি আদেশনামার মাধ্যমে সেরিলিঙ্গমপল্লী মণ্ডলের কাচি গাচিবৌলি গ্রামের ২,৩০০ একর জমির অছি করে হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। পরে আরও ২৪.০৫ একর, অর্থাৎ, মোট ২৩২৪.০৫ একর জমি দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। যদিও রেকর্ডে জমিটিকে ‘সরকারি’ বলে দেখানো রয়েছে এবং বিগত ৫০ বছরে তার মালিকানা পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে করা হয়নি। এর জন্য পরের পর সব সরকারই দায়ী।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দলের সরকার নানা সময়ে ২০টি সংস্থাকে ৮১২.১৩ একর জমি দিয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে আলোচ্য ৪০০ একর জমিও ২০০৪ সালে তৎকালীন তেলুগু দেশম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু আইএমজি ভারত নামে কোম্পানিটিকে স্পোর্টস পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য দেয়। ওই বছর বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে টিডিপি সরকার আইএমজি-র চেয়ারম্যানের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
২০০৬ সালে ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডির কংগ্রেস সরকার আইএমজি-র সঙ্গে সেই চুক্তি বাতিল করে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আদালতে যায় কোম্পানিটি। গত বছর মার্চে অন্ধ্র হাইকোর্ট সরকারের পক্ষে রায় দেয়, যার বিরুদ্ধে আইএমজি সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি) দায়ের করে। গত বছর মে মাসে সর্বোচ্চ আদালত সেই এসএলপি বাতিল করে দিলে সরকার সেই জমির উপর অধিকার পায়। কিন্তু তারপরে সম্প্রতি তেলেঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডির কংগ্রেস সরকার সেই ৪০০ একর জমিটির গাছ কেটে তা নিলাম করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই ৪০০ একর জমির বাজার-মূল্য বিপুল। রাজ্য সরকার সেই জমি বেচতে চায়। কিন্তু সেই জমিতে ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে স্কুলস অফ ইকনমিক্স, ম্যানেজমেন্ট, ম্যাথমেটিক্স, স্ট্যাটিস্টিক্স। সেখানে রয়েছে মাশরুম রক, পিকক লেক, হাই রক্স, বাফেলো লেক ইত্যাদি। সেই জঙ্গলে রয়েছে ৭৩৪ প্রজাতির ফুল গাছ। আছে ময়ূর, ইন্ডিয়ান রোলারের মতো পাখি, স্পটেড ডিয়ার, বুনো শুয়োর, খরগোশ, শজারু, বেজি, পাইথন, কচ্ছপ ইত্যাদি প্রাণী।
ফলে বিতর্ক কেবল ৪০০ একর জমির মালিকানা নিয়ে নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন করা নিয়েও তীব্র মতপার্থক্য রয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব ভারতেও কম নয়। পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর ধারাবাহিক আবেদন করছে সরকার বা পরিবেশ সংগঠনগুলি। আর তখন গাছ কেটে ৪০০ একর জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস সরকার। এর বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে।
আন্দোলনের চাপে সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের এক ডিভিসন বেঞ্চ তেলেঙ্গানা সরকারকে কাচি গাচিবৌলির সেই ৪০০ একর অরণ্য নিধন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আজ পৃথিবী জুড়ে পুঁজিপতিরা এবং তাদের সেবক সরকারগুলি মুখে পরিবেশ রক্ষার কথা বললেও বাস্তবে নানা অছিলায় পরিবেশ ধ্বংস করতে উদ্যত। অরণ্য নষ্ট করে সেই জমিতে নানা প্রকল্প তৈরি করছে তারা।
আন্দোলনের এই জয় দেখাল, এর বিরুদ্ধে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন গড়ে তুলে প্রতিরোধ করা ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই।