রাজ্যে আট বছর ধরে উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ নেই। পড়াবে কে?

পশ্চিমবঙ্গে আট বছর ধরে উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিই নেই। ফলে একাদশ ও দ্বাদশে বহু বিষয়ের শিক্ষক পদ শূন্য। প্রতি বছর বহু শিক্ষক অবসর নিচ্ছেন। অথচ নতুন শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। ইউডাইস (ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন)-এর তথ্য দেখাচ্ছে, বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় কয়েক হাজার করে শিক্ষকপদ শূন্য। অন্যান্য বিষয়েও তাই। ফলে ভয়ঙ্কর ভাবে ব্যাহত হচ্ছে পড়াশোনা।

শিক্ষাই জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়। সেই শিক্ষা নিয়ে চলছে চূড়ান্ত সরকারি অবহেলা। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার প্রতি সরকারি অবহেলা দীর্ঘ বছর ধরেই চলছে। এ সব দেখে বহু অভিভাবক সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মোহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে সম্পন্ন, তারা সন্তানদের পাঠাচ্ছেন বেসরকারি স্কুলে। যাদের তা নেই তারা নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।

শিক্ষার এই ছন্নছাড়া দশা তৈরি হল কেন? এস ইউ সি আই (সি) কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতিটি জনবিরোধী শিক্ষা নীতি, ছাত্র স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ করে বহু বছর আগেই দেখিয়েছে, সরকার শিক্ষার বেসরকারিকরণ চায় এবং সেই লক্ষে্যই বেসরকারি শিক্ষার বাজার তৈরি করে দিতে সরকারি শিক্ষার প্রতি মানুষের আকর্ষণ নষ্ট করে দিতে চায়। সেই লক্ষ্যেই এক সময় রাজ্যে সিপিএম সরকারের উদ্যোগে প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি ও পাশ-ফেল তুলে দেওয়া। একই উদ্দেশ্যে কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতিতেও পাশ-ফেল প্রথাকে গুরুত্বহীন করা। বুঝতে অসুবিধা হয় না, শিক্ষক নিয়োগ না করা বা শিক্ষক নিয়োগে তৎপর না হওয়া– সেই পরিকল্পনারই অংশ ।

সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে বেসরকারি মালিকদের শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিতে সরকারগুলির এই ষড়যন্তে্রর ফলে রাজ্যে শত শত স্কুল উঠে যাচ্ছে। শত শত স্কুল বন্ধ হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে। বেকার সমস্যা এমনিতেই ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে। এই অবস্থায় চাকরির এই স্থায়ী ক্ষেত্রগুলিকেও ধ্বংস করার ফলে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা কাজ পাওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

এক মাস হয়ে গেল একাদশ শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও ক্লাস শুরু হল না। অবিলম্বে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করার দাবিতে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছে ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য অতি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগে গুরুত্ব না দিয়ে ‘ক্লাস্টার অফ স্কুল’ গড়ে তোলার কথা বলছেন। এ এক নয়া বিপদ। সরকারের পরিকল্পনা, এর মধ্য দিয়ে কয়েকটি স্কুলের ছাত্রদের একসাথে ক্লাস নেওয়া হবে। এতে সরকার যদি সফল হয় তা হলে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের তাগিদ আরও কমে যাবে। তাতে ছাত্রদের সমস্যা শুধু আরও বাড়বে তা নয়, কর্মসংস্থানের একটা স্থায়ী ক্ষেত্রও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এই ক্লাস্টার সিস্টেম প্রতিরোধ আজ অত্যন্ত জরুরি কর্তব্য।