বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে দলীয় আখড়ায় পরিণত করছে বিজেপি সরকার

ইউজিসি সম্প্রতি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়কে বলেছে, সতেরো ঊর্ধ্ব ছাত্রছাত্রীদের নাম ভোটার হিসাবে নথিভুক্ত করতে। কমিশন সচিব মনীশ জৈন ১৭ ডিসেম্বর সার্কুলারে বলেছেন, ভোটাধিকার সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলাই এর উদ্দেশ্য।কমিশন আরও বলেছে, শিক্ষার কারিকুলামে ভোটার এডুকেশন, ইলেকটোরাল লিটারেসি যুক্ত করা হবে। জাতীয় ভোটার দিবসে ব্যাপক কর্মসূচি রূপায়ণ করা, ভোটের সময় ভোট সচেতনতা বাড়াতে ছাত্রছাত্রীদের রাস্তায় নামানো সহ নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মিরান্ডা হাউস কলেজের ফ্যাকাল্টি মেম্বার আভাদেব হাবিব। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় হল শিক্ষা ও গবেষণার জায়গা। ভোটারদের নাম নথিভুক্তিকরণ এবং ভোট নিয়ে প্রচার প্রোপাগান্ডার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয় নয়। তিনি উদ্বেগের সাথে বলেন, এটা শুরু করলেই এবিভিপি এবং অন্যান্য সংগঠন ঝাঁপিয়ে পড়ে হাইজ্যাক করবে এবং দলীয় আদর্শ প্রচারে নেমে পড়বে।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ইউজিসি ক্যাম্পাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাটআউট দিয়ে সেলফি পয়েন্ট করার কথা বলেছে। সাথে রাখতে বলেছে সরকারের কাজকর্মের প্রচারবার্তা। সবটাই সাজানো হবে সাদা ও গেরুয়া রঙে।

তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, শিক্ষা সরকারের উদ্দেশ্য নয়। সরকার ক্যাম্পাসকে বলছে যোগা দিবস, স্বচ্ছতা দিবস, জাতীয় ঐক্য দিবস, আর্মি দিবস, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক দিবস ইত্যাদি পালনের জন্য (তথ্যসূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ ৩০ ডিসেম্বর ’২৩)।

এই সার্কুলার ঘিরে নানা প্রতিক্রিয়া উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, নির্বাচন কমিশন যখন নির্দিষ্ট সময়ান্তরে নতুন ভোটারদের নাম নথিভুক্ত করছে, তখন এ কাজে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়কে নামানো কী প্রয়োজন? কেন্দ্র, রাজ্য, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিটি নির্বাচনেই ভোট নিয়ে সচেতনতা প্রচার করে থাকে। তাতেও কি সচেতনতা হচ্ছে না? যে কারণে জরুরি ভিত্তিতে ছাত্রদের নামানোর পরিকল্পনা? আসলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে মোদির মহিমা প্রচারে নামিয়ে ভোট রাজনীতিতে ফায়দা তোলাই এর উদ্দেশ্য।

ভোটাধিকার একটা গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার।সেই অধিকারকে বিভিন্ন শাসক দল কেনাবেচার পণ্যে পরিণত করে ফেলেছে। সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় শাসক দল যেভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে নিলামে দর চড়িয়ে ভোট কিনে জিতল, তাতে এই অধিকারের মাহাত্ম্য ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভোটে জেতার জন্য ধর্মে-বর্ণে বিভেদ লাগিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটানোর নোংরা খেলা। রয়েছে বুথ দখল, ইভিএম মেশিনে কারচুপির শয়তানি রাজনীতি, রয়েছে খুন-সন্ত্রাস-রক্তপাত। সব মিলিয়ে ভোটের প্রতি মানুষের বিতৃষ্ণা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর উপর রয়েছে ভোটের মাধ্যমে সরকার বদল হলেও জনবিরোধী নীতির বদল না-হওয়া।

সরকার বদল ছাড়া অথবা আগের শাসকের নবীকরণ ছাড়া কী হয় ভোট দিয়ে? এই চিন্তাও সমাজে রয়েছে। ভোট দিতে হয়, দিই– এমন নিষ্পৃহ মানসিকতাই প্রবল। ছাত্রদের প্রচারে নামিয়ে একে পাল্টানো যাবে না। বিপরীতে পঠনপাঠনই মার খাবে।