খবরে জানা গেল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছেন। যাঁরা কাজ করতে ভালোবাসেন, পড়াতে ভালোবাসেন, প্রচুর সেমিনার গবেষণা নিয়ে থাকেন, হঠাৎ সেই শিক্ষক-অধ্যাপকদের এমন লাগাতার আন্দোলনে নামার প্রয়োজন পড়ল কেন?
ইতিমধ্যেই বেতন কাঠামো সহ কয়েক দফা দাবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, গ্রন্থাগারিক, প্রশিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা একযোগে ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। টানা এক সপ্তাহ চলে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি। দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টি ক্যাম্পাস অচল এই শিক্ষক আন্দোলনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পঠনপাঠন গবেষণা প্রায় স্তব্ধ। ইতিমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি, সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলস ক্যাম্পাসের শিক্ষকরাও ধর্মঘটে যুক্ত হয়েছেন। অভূতপূর্ব এই আন্দোলনের বার্তা ইতিমধ্যেই গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলনের চাপে কর্তৃপক্ষ দাবিগুলির ন্যায্যতা স্বীকার করলেও বলছেন, আমরা টাকা দেব কোথা থেকে? সরকার তো আমাদের টাকা দেয় না।
১২ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি ছাড়াও এক সেমেস্টার পর্যন্ত সন্তান পালনের ছুটি, সন্তানদের স্তন্যপান করানোর উপযোগী ব্যবস্থা, অধ্যাপকদের কাজের ভার কমানো, সকলের জন্য উপযুক্ত শৌচাগারের মতো পরিষেবার দাবি তাঁরা তুলেছেন।প্রসঙ্গত, উন্নততর বেতন কাঠামোর দাবিতে গত মাসেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন। চলতি বছরে ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধর্মঘট, প্রতিবাদের ঘটনা ঘটে চলেছে। হলিউড অভিনেতা, লেখক, সাহিত্যিক, হোটেলকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীরাও ধর্মঘটে নেমেছিলেন। গত মার্চে লস অ্যাঞ্জেলসের হাজার হাজার স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের অভূতপূর্ব কর্মবিরতি হয়েছিল।
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশ মার্কিন সরকারি নীতিকে দুষছেন।সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে ধাপে ধাপে নষ্ট করে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো আজ তাদের আলোচনায়। ক্ষোভে, হতাশায় ফুঁসছেন তাঁরা।
জনগণের শিক্ষা বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবে সমস্ত পুঁজিবাদী দেশে একই। তা সে ধনী আমেরিকাই হোক কিংবা ভারত। আমেরিকার অনুকরণে এ দেশেও বিজেপি সরকারের আনা জাতীয় শিক্ষানীতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শিক্ষার স্বাধিকার, অর্থ বরাদ্দ, পরিকাঠামো, গবেষণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রশাসন যা কয়েক শতকের শ্রম, প্রচেষ্টা, পরিকল্পনায় তৈরি, তার সমস্ত কিছুই ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে বিজেপি চালিত দেশের শিক্ষানীতি। এমনকি মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো একটি দপ্তরকে তারা লোপাট করে দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে দেশের শিক্ষার মানোন্নয়ন চাওয়া সোনার পাথরবাটি।
সিবিসিএস, সেমেস্টার, আইকেএস, বিজ্ঞানবিরোধী সিলেবাস, ইতিহাসের বিকৃতি, শিক্ষার বরাদ্দ কমানো, গবেষণার কেন্দ্রীকরণ, শিক্ষার্থীদের উপর খরচের বোঝা চাপানোর মতো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এ দেশে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছেন শিক্ষক-ছাত্রসমাজ।আমেরিকার শিক্ষকদের লাগাতার আন্দোলন দেখিয়ে দিচ্ছে– দেশে দেশে শিক্ষা ধ্বংসকারী সরকারি নীতির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ গণআন্দোলনই একমাত্র রাস্তা।
অধ্যাপিকা সোমা রায়
ঢাকুরিয়া