লেনিন বলেছিলেন, ‘‘অ্যান অর্গান ইজ অ্যান অর্গানাইজার ইটসেলফ।’’ কথাটি যে কতখানি বাস্তব তা আমার নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছি। সেই উপলব্ধিই আজ গণদাবী পত্রিকার ‘পাঠকের মতামত’ বিভাগে রাখলাম।
সাল ২০১৩, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সূত্রে কলকাতায় প্রথম আসা। সদ্য কেনা ফ্ল্যাটে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু। বাবা এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দলের সমর্থক এবং সেই সময় থেকেই টালিগঞ্জে পার্টি সংগঠনের কাজ শুরু করেন। এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দলের মুখপত্র গণদাবী প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত ফ্ল্যাটে আসত। রাজনীতিতে তখন আমার কোনও আগ্রহই ছিল না, বরং অতি সন্তর্পণে গা এড়িয়ে চলতাম। নতুন শহরে না ছিল সে রকম কোনও বন্ধু, না ছিল সে রকম কোনও প্রতিবেশী। ফ্ল্যাট কালচারের বদ্ধ ঘরের মতো আমার জীবনও হয়ে পড়ে একপ্রকার বদ্ধই। পড়াশোনায় সে রকম আগ্রহ ছিল না। কিন্তু একাকিত্ব থেকে মুক্তি পেতে সময় কাটানোর জন্য দৈনিক খবরের কাগজ ও বাবার গণদাবীতে মাঝে-মধ্যে চোখ বোলাতাম। প্রথম প্রথম গণদাবীর শুধু হেডলাইনগুলোই পড়তাম আর ছবিগুলো দেখতাম। একটু একটু করে গণদাবীর তৃতীয় পাতায় ছাপা বিভিন্ন তাত্ত্বিক লেখাগুলোতে আকৃষ্ট হতে লাগলাম। সবটা বুঝতাম না, আবার কিছু কিছু বুঝতাম। মার্ক্স, এঙ্গেলস, লেনিন, স্ট্যালিন, মাও, শিবদাস ঘোষের লেখাগুলো পড়েই মার্ক্সবাদ, কমিউনিজম নিয়ে একটা আগ্রহ গড়ে ওঠে।
লেখাগুলো পড়ে আজকের সমাজের সমস্যাগুলোকে যখন রিলেট করতাম, লেখাগুলো তখন বাস্তব হয়ে ফুটে উঠত আমার কাছে। তারপর থেকেই গণদাবীতে ছাপা বিভিন্ন আন্দোলনের খবর, সাংগঠনিক খবর, সাম্প্রতিক ঘটনার তথ্যসমৃদ্ধ যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। আর এ ভাবেই দলের নেতাকর্মীদের সংস্পর্শে আসার আগেই এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দলের প্রতি একটা মন গড়ে ওঠে স্রেফ গণদাবী পড়েই।
গণদাবীর মতো এত বড় মাপের সংগঠকের সংস্পর্শে এসেই জীবনের শূন্যতা ভরে ওঠে রাজনীতির মননে, স্বপ্ন দেখা শুরু করি এক নতুন সমাজ গড়ে তোলার।
মহম্মদ মহিউদ্দিন রেজা
কলকাতা ৭০০০৭০