Breaking News

সরকারি বঞ্চনাই আশাকর্মীদের আন্দোলনের পথে নামিয়েছে

এবার শহরের আশা ও গ্রামীণ আশাকর্মীরা যৌথ আন্দোলনে পথে নেমেছেন। ৬ অক্টোবর কলকাতায় বড় জমায়েত করবেন তাঁরা। ১৫ সেপ্টেম্বর জেলায় জেলায় সিএমওএইচ দফতরে তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ পৌর স্বাস্থ্যকর্মী কন্ট্রাকচুয়াল ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদিকা পৌলমী করঞ্জাই এবং কেকা পাল বলেন, বিপুল কাজের বোঝা আমাদের উপরে কিন্তু বেতন ভিক্ষাতুল্য।

আশাকর্মীরা সরকারের দ্বারা নিয়োজিত। কিন্তু সরকার তাদের সরকারি কর্মী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে গড়িমসি করে চলেছে। মা ও শিশুমৃত্যু রোধ করা, শহরাঞ্চলের জনসাধারণকে নানা ধরনের রোগ মুক্ত করতে হাসপাতালমুখী করা, ডেঙ্গু নিধন, পোলিও, টিবি, লেপ্রসি, চোখের আলো প্রকল্প, টিকাকরণ কর্মসূচি সহ নানা ধরনের কর্মসূচি সরকার এঁদের দিয়ে করিয়ে থাকে। এ ছাড়াও জনগণনা, পরীক্ষার ডিউটি এবং আরও অন্যান্য কাজের বোঝা সরকার এঁদের উপর চাপায়। কিন্তু বেতন দেওয়া হয় কত? ক্ষোভের সাথে তাঁরা বলেন, বেতন মাত্র ৪,৫০০ টাকা। এই ভিক্ষাতুল্য বেতনে কর্মীদের ভবিষ্যৎ কী? এই বেতন কাঠামোর সাথে সরকারি নূ্যনতম বেতন কাঠামোর বিন্দুমাত্র সাযুজ্য নেই। বঞ্চনা এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন কাজে ভাগে ভাগে যে সামান্য ইন্সেনটিভ পাওয়ার কথা, সেটাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে আটকে দেয়। যতটুকু হাতে পাওয়ার কথা সেটুকুও ৩ থেকে ৪ মাসের আগে পাওয়া যায় না। চূড়ান্ত হয়রানি ও নিপীড়ন সহ্য করে চলতে হয়। যেখানে খাদ্যসামগ্রী সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য আকাশছোঁয়া, সেখানে এই সামান্য বেতনে পরিবার চালানো অতি দুরূহ হয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে এই অসহনীয় পরিস্থিতির কথা কয়েকবার ‘সুডা’ ও স্বাস্থ্য ভবনে জানানো সত্ত্বেও বেতনের কোনও সুরাহা হয়নি।

গ্রামীণ আশাকর্মীদের এক হাজার জনসংখ্যায় কাজ করার সুবিধা থাকলেও পৌর স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রত্যেককে তিন-চার হাজার বা কোথাও তার বেশি জনসংখ্যায় কাজ করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, একটা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই অন্য প্রকল্পের কাজ বাধ্যতামূলকভাবে চাপিয়ে দিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে কাজ তুলে দিতে অমানুষিক চাপ দেওয়া হচ্ছে। না পারলে কাজ থেকে বহিষ্কারের হুমকিও প্রতিনিয়ত দেওয়া হচ্ছে। অসুস্থ কর্মীদেরও রেহাই নেই। জরুরি প্রয়োজনেও ছুটি দেওয়া হয় না। প্রতিনিয়ত কিছু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরকারি নানা প্রকল্পের কাজ অন্যায়ভাবে চাপিয়ে চলেছে আশাকর্মীদের উপর। ক্ষুব্ধ আশাকর্মীরা লিখিত সরকারি নির্দেশনামা দেখাতে চাইলে তাঁরা দেখাতে অস্বীকার করেন। এমনকি কোন কাজে কত টাকা বরাদ্দ সেটাও জানানো হয় না, যা স্বেচ্ছাচারিতার চূড়ান্ত নিদর্শন।

এই অবস্থায় আশাকর্মীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) থেকে আশাকর্মীদের গ্লোবাল হেলথ লিডার সম্মানে ভূষিত করা হলেও এই সম্মান পাওয়া তো দূরের কথা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত হয়রানি ও আর্থিক নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে তাঁদের। কেন্দ্র-রাজ্য কোনও সরকারই আশাকর্মীদের এই সমস্যার সমাধানে সহানুভূতিশীল নয়।

বঞ্চিত এই কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। সম্প্রতি রাজ্যে মন্ত্রী, এমএলএ-দের বেতন ৪০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। কেন আশাকর্মীদের বেতন বাড়ানো হবে না, এই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। এই বঞ্চনা অবসানের দাবিতে রুরাল ও আরবান আশাকর্মীরা যৌথভাবে আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের দাবি– সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি, মাসিক ২৬ হাজার টাকা বেতন, কর্মরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে অবসর নিলে বা মৃত্যু হলে ৫ লক্ষ টাকা অবসরকালীন ভাতা, মাসিক পেনশন ৫ হাজার টাকা, মাতৃত্বকালীন ৬ মাস সহ সব সরকারি ছুটি দিতে হবে। এই দাবিগুলি নিয়েই ৬ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন।