কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নতুন লুঠের কারবার– আধার এবং প্যানকার্ড সংযুক্তির নামে হাজার টাকা জরিমানা। কখনও জিএসটি, কখনও পিএম কেয়ার ফান্ড, কখনও ওষুধের দাম বৃদ্ধি, কখনও পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাস সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে জনগণকে লুটেই চলেছে মোদি সরকার।
আধার-প্যান যুক্ত করতে কি সরকারের কোনও খরচ হয়? একেবারেই না। তবে কেন জরিমানার নাম করে হাজার হাজার টাকা লুটে নিচ্ছে সরকার? তা ছাড়া এই যুক্তিকরণ প্রশাসনের সুবিধার জন্য সরকার করতে বলছে। জনসাধারণের বিশেষ প্রয়োজনে তা করা হচ্ছে না। তা হলে এখানে জনসাধারণের থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্ন উঠছে কেন? এই প্রশ্ন তুলেই দেশ জুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে সাধারণ মানুষ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ ঔদ্ধত্যের সঙ্গে বলেছেন, তাড়াতাড়ি সংযোগ করুন, না হলে আরও বেশি জরিমানা দিতে হবে। সরকারের কর্তারা জনসাধারণকে কী চোখে দেখেন মন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট। মানুষের প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা থাকলে এমন কথা কেউ বলতে পারে!
সরকার বলছে, আমরা ২০২২-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত লিংকের জন্য সময় দিয়েছিলাম, কিন্তু অধিকাংশই ওই সময়ের মধ্য তা করেনি। সেই কারণেই এই জরিমানা। কিন্তু সরকারের কথাতেই স্পষ্ট দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে এই কথা আদৌ পৌঁছায়নি। সাধারণ মানুষ যদি জানত, তারা কি জরিমানা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করত? কোটি কোটি মানুষের বিষয় যেখানে যুক্ত শুধুমাত্র একটা সরকারি সার্কুলার দিয়েই সেখানে সরকার দায় সারতে পারে কি? মানুষকে বিপদে ফেলার মধ্য দিয়ে লুঠের পথ খোলাটাই উদ্দেশ্য না হলে সরকার সঠিকভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। নিবিড় প্রচার করত। সেটা করেনি কি টাকা লোটার সুযোগ করে নেওয়ার জন্যই?
মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে দিন আনা-দিন খাওয়া অসহায় হতদরিদ্র মানুষগুলি একদিকে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হচ্ছে লিংক করানোর জন্য, অপর দিকে গাঁটের কড়ি খরচ করে আরও পথে বসছে। বর্তমানে যে কোনও কারণে একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে আধার-প্যান বাধ্যতামূলক। কোনও ছাত্র যদি স্টুডেন্টস লোন নিতে চায়, ছাত্রদের জন্য যেটুকু ভাতার ব্যবস্থা আছে, অসহায় মানুষদের জন্য ছিটেফোঁটা যতটুকু সরকারি ভাতার ব্যবস্থা আছে, যেমন বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি, একশো দিনের কাজের টাকা পেতে হলে, মিড ডে মিল কর্মী, আশা কর্মীর মতো স্কিম ওয়ার্কারদের যৎসামান্য মাইনের টাকাটুকু তুলতে হলে বা আর পাঁচটা নানা প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতেই হয়।
ফলে সেই অ্যাকাউন্টকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে আজ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে আধার-প্যান যুক্ত করাতে হচ্ছে তাদের। কোনও একটি সংসারে যদি পাঁচ জন সদস্য থাকে, আর তাদের যদি একটি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে সেই সংসারের প্রত্যেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাঁচিয়ে রাখতে গেলে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তাদের আধার প্যান যুক্ত করাতে হবে। কোটি কোটি টাকার বিছানায় শুয়ে থাকা নেতা-মন্ত্রীরা একবার ভেবে দেখেছেন এই টাকার কোথা থেকে জোগাড় করবে তারা? নেতা-মন্ত্রীদের মতো তাদের পিছনে তো আদানি-আম্বানি সাহেবদের আশীর্বাদের হাত নেই। তবে কেন বিজেপি সরকার সাধারণ অসহায় মানুষকে এই সংকটের মধ্যে ফেলে দিল? আরও একটি প্রশ্ন এইযে জরিমানার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তোলা হচ্ছে এই টাকার হিসেব কোথায়? কত হাজারকোটি টাকা সরকার এইভাবে তুলছে? কোন খাতে খরচ হবে এই টাকা? এই টাকার ছিটেফোঁটাও কি জনকল্যাণে খরচ হবে? নাকি পি এম কেয়ার ফান্ডের মতোই প্যান-আধার সংযুক্তির নামে জরিমানার হাজার হাজার কোটি টাকাও ভোজবাজিতে মিলিয়ে যাবে?
একদিকে বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোক্সির মতো অসাধু ব্যবসায়ীরা জনগণের টাকা লুটে মোদি সরকারের মদতে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে, অপরদিকে সরকার নিজের হাতে নানা কায়দায় জনগণকে লুটছে। একচেটিয়া মালিকরা ব্যাঙ্কের টাকা মেরে দিলে সরকার নিছক দর্শক। আর সেই ক্ষতি পূরণ করতে নানা অছিলায় মানুষের ঘাড়ে জরিমানার এত বড় বোঝা চাপিয়ে দিল মোদি সরকার। এসইউসিআই(সি)-র দাবি জরিমানা বন্ধ করতে হবে ও আদায় করা জরিমানা ফেরত দিতে হবে।