রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সব ঘোষণা সাড়ম্বরেই করেন৷ ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে, প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের পাশে বসিয়ে ঘোষণার পর ঘোষণার ফুলঝুরি ছোটাতে তিনি সিদ্ধহস্ত৷ রাজ্যের মানুষ এভাবেই তাকে দেখেতে অভ্যস্ত৷ ২০১১ সালে নির্বাচনী প্রচারে অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তেমনি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েও প্রতিশ্রুতি কম দেননি, মুখ্যমন্ত্রীত্বের ১০০ দিনের মাথায় সগর্বে ঘোষণা করেছিলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ৯০ শতাংশ তিনি পূরণ করে ফেলেছেন৷ ২০০ দিনের মাথায় ঘোষণায় সাফল্য আরও উপচে পড়ল, সূচক ৯৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াল৷ আর বর্ষপূর্তিতে? বললেন, প্রতিশ্রুতির প্রায় সবই পূরণ হয়ে গেছে৷
দ্বিতীয় বর্ষে, অর্থাৎ ২০১২ সালে তাঁর সাড়ম্বর ঘোষণা– রাজ্যের মানুষকে তিনি বিনা পয়সায় চিকিৎসার সুযোগ দেবেন৷ মানুষ এই ঘোষণায় আপ্লুত৷ এবার আর ‘রবে নাকো ম্যালেরিয়া মহামারী’৷ মানুষ আশায় বুক বাঁধলেন– হাসপাতালে বিনা পয়সায় ওষুধ পাবেন, বিনামূল্যে হবে পরীক্ষানিরীক্ষা, হাসপাতালে ভর্তির জন্য দালাল ধরতে হবে না, বেডচার্জ লাগবে না, অপারেশন চার্জ লাগবে না, বিনামূল্যে ওষুধপত্র মিলবে হাসপাতাল থেকেই৷
দিন গড়াতে লাগল৷ মাসের পর মাস গেল৷ মুখ্যমন্ত্রী দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতাসীন হলেন৷ স্বাস্থ্য দপ্তরও রাখলেন নিজের হাতে৷ মানুষ খুঁজছে কোথায় সেই বিনামূল্যে চিকিৎসা? তবু নেই মামার চেয়ে কানা মামার মতো ফ্রি চিকিৎসার যতটুকু ছিল রাজ্য সরকার এবার সেটাকেও তুলে দিতে গোপনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ২০১৭ সালে শারদোৎসবের ঠিক আগে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ‘ফ্রি ড্রাগনীতি’ বদলের৷
গোপন সেই খবরটি ৬ জানুয়ারি সংবাদপত্রে প্রকাশ পায়৷ জানা যায়, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে এতদিন নাকি বিনামূল্যে প্রায় ১৯৯০ ধরনের ওষুধ পেতেন সাধারণ মানুষ৷ রাজ্যের তৃণমূল সরকার এক ধাক্কায় তার ৬৬ শতাংশই ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এখানেও সে পূর্বতন সিপিএম সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণকারী৷
কিন্তু ধন্ধটা অন্যখানে৷ যে তৃণমূল সরকার সবকিছুই সাড়ম্বরে ঘোষণা করে থাকে, এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম কেন? ভোটের আগে মানুষ ক্ষুব্ধ হবে এই আশঙ্কায়৷ তৃণমূল দল জনগণের সামনে তা স্পষ্ট করে জানাক৷ সত্যিই কি এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে?