Breaking News

বাসভাড়া নির্ধারণে নিরপেক্ষ কমিটি চাই পরিবহণমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

কলকাতায় আরটিএ অফিসে বিক্ষোভ। ৫ জুলাই

পরিবহণমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এসইউসিআই(সি)-র রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ৫ জুলাই এক স্মারকপত্রে বলেন, করোনা অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ কমতে থাকার বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যের পরিবহণ দপ্তর সরকারি ও বেসরকারি বাস চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যে বাস মালিকরা বাস চালুর আগেই দাবি তুলেছেন বিপুল হারে ভাড়া বৃদ্ধির।

করোনা অতিমারিতে সাধারণ মানুষের রুজি-রোজগার বন্ধ, অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই ও কলকারখানা বন্ধ থাকার কারণে জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত। এরকম একটা পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার ক্রমাগত পেট্রল-ডিজেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েই চলেছে। প্রতি লিটার পেট্রলে ৩২ টাকা ৯০পয়সা এবং প্রতি লিটার ডিজেলে ৩১ টাকা ৮০ পয়সা ট্যাক্স শুধু কেন্দ্রীয় সরকারই আদায় করছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, একই রকম ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে রান্নার গ্যাস এবং কেরোসিনের দামও।

করোনা বিপর্যস্ত জনগণের কাছ থেকে যাকে কার্যত লুট বললেও কম বলা হয়। জনজীবনের এই দুঃসময়েকেন্দ্রীয় সরকারের এত বড় একটা অন্যায়ের ব্যাপারে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ নীরব। আপনি ভালো করেই জানেন এর কারণ– রাজ্য সরকারও এই অস্বাভাবিক বর্ধিত মূল্যের উপর আবারও বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স চাপিয়ে কোষাগার ভর্তি করছে। যার ফলে বাজারে পেট্রল-ডিজেলের দাম দাঁড়িয়েছে মূল দামের প্রায় তিনগুণের কাছাকাছি।

বাস মালিকরা এবং তাদের সংগঠন পেট্রল-ডিজেলের অন্যায় এই মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করছে না। তেলের দাম বৃদ্ধিকে অজুহাত করে আরও বিপুল হারে বর্ধিত ভাড়ার অসহনীয়বোঝা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেই তাদের উৎসাহ।

আপনি অবগত যে, ইতিমধ্যেই এসইউসিআই(সি)-র পক্ষ থেকে লোকাল ট্রেন চালুর দাবি জানানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত লোকাল ট্রেন চালালেই দূরত্ব বিধি মেনে সুষ্ঠুভাবে যাতায়াত করা বাস্তবে সম্ভব হত বলে আমরা মনে করি। কিন্তু সে দাবি মানা হয়নি। পেটের তাগিদে কাজের সন্ধান করতে কিংবা চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য স্বল্প বেতনের কর্মীকেও বাধ্য হতে হয়েছে অটো-টোটো সহ অন্যান্য পরিবহণে বহু টাকা খরচ করে যাতায়াত করতে। এই বাড়তি খরচ আর হয়রানিকে দেখিয়ে, মানুষের মনে সুকৌশলে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে তারা বর্ধিত বাসের ভাড়া মেনে নিতে বাধ্য হয়।

সামাজিক-অর্থনৈতিক-পারিবারিক ও মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বাস মালিকদের ইচ্ছামত ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার এই কৌশল ও চাপের কাছে মাথা নত না করে, আমরা চাই রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াক।

কেন্দ্রীয় সরকারের পেট্রল-ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও তার উপর ট্যাক্সচাপানোর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার তার ভূমিকা পালন করুন।

একই সাথে আমাদের দাবি জনস্বার্থে পেট্রল-ডিজেলের উপর থেকে রাজ্য সরকারের চাপানো ট্যাক্সপ্রত্যাহার করুন। যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধি এবং রোড ট্যাক্সের ছুতোয় ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতেরও আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি। প্রয়োজন হলে সরকারের পক্ষ থেকে রোড ট্যাক্স কমানো হোক। যন্ত্রাংশের মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকার হস্তক্ষেপ করুক। কোনও অজুহাতেই জনগণের ঘাড়ে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা নামিয়ে আনা চলবে না।

আমাদের দাবি, সুষ্ঠু ভাড়া নির্ধারণের জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি তৈরি করা হোক। যাত্রী পরিবহণ কমিটির প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক সেই কমিটিতে। সেই কমিটি সমস্ত দিক বিবেচনা করে দ্রুত ভাড়া নির্ধারণ করুক। প্রয়োজন হলে সরকার ভর্তুকি দিয়ে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষকে পরিবহণের ভাড়াবৃদ্ধির দুঃসহ চাপ থেকে রেহাই দিক।

গণদাবী ৭৩ বর্ষ ৩৮ সংখ্যা