Breaking News

৯০ শতাংশ বিধায়কই কোটিপতি, এঁরা কাদের প্রতিনিধি!

 

সদ্য সমাপ্ত মিজোরাম বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচিত ৪০ জন বিধায়কের মধ্যে ৩৬ জনই কোটিপতি৷ অর্থাৎ ৯০ শতাংশ বিধায়কই কোটিপতি৷ হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে জয়ী ৫১৯ জন বিধায়কের মধ্যে ৪০০ জন কোটিপতি৷ শতাংশের হিসাবে ৭৭ শতাংশ৷ মধ্যপ্রদেশে ২৩০ জন সদস্যের মধ্যে ১৮৭ জনই কোটিপতি৷ এর মধ্যে বিজেপি বিধায়ক সত্যেন্দ্র পাঠকের সম্পত্তি সবচেয়ে বেশি– ২২৬ কোটি টাকা৷ ছত্তিশগড়ে ৯০ জন সদস্যের মধ্যে ৬৮ জন কোটিপতি৷ সবচেয়ে ধনী বিধায়ক কংগ্রেসের টি এস সিংহদেওর সম্পত্তি ৫০০ কোটি টাকার৷ প্রার্থীরা নিজেদের সম্পত্তির যে হিসাব নির্বাচন কমিশনে দিয়েছেন, সেই ভিত্তিতেই অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্ম (এডিআর) বলেছে, বিজেপি, কংগ্রেস, নানা আঞ্চলিক দল সহ নির্দল বিধায়কদের মধ্যে অধিকাংশই কোটিপতি৷

এর আগে হওয়া রাজ্যসভার নির্বাচনে ৮৭ শতাংশই প্রার্থীই ছিলেন কোটিপতি৷ প্রার্থীদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ১২২ কোটি টাকা৷ শুধু রাজ্যসভার ক্ষেত্রেই নয়, সাধারণ মানুষ সরাসরি ভোট দিয়ে লোকসভার জন্য যে এমপিদের নির্বাচন করেন, তাঁরা অর্থনৈতিক ভাবে কোন শ্রেণির? ৫৪৩ আসন বিশিষ্ট বর্তমান ১৬তম লোকসভায় ৪৪৯ জনই কোটিপতি৷ অর্থাৎ কোটিপতি সাংসদ প্রায় ৮৩ শতাংশই৷ এই সমস্ত তথ্য দেখাচ্ছে, সংসদের উচ্চ ও নিম্ন – উভয় কক্ষেই দেশের আমজনতার কোনও প্রতিনিধি নেই৷ রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভার চিত্রটা কমবেশি এরকমই৷

১৩৬ কোটি ভারতবাসীর মধ্যে যে ৯৯ ভাগ মানুষ দরিদ্র–নিম্নবিত্ত–মধ্যবিত্ত অংশের মধ্যে পড়েন, এইসব এমএলএ–এমপিরা কি তাঁদের প্রতিনিধি? সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে এঁদের কি কোনও যোগ আছে? সংসদীয় গণতন্ত্রকে ‘বাই দি পিপল, ফর দি পিপল, অব দি পিপল’ বলা হলেও বাস্তবে এ গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি ধনীদের কব্জায়৷ কংগ্রেস, বিজেপি সহ পুঁজিপতিদের স্বার্থে পরিচালিত, তাদের অর্থে পুষ্ট আঞ্চলিক দলগুলি রাজ্যে কিংবা কেন্দ্রে যাঁদের প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করাচ্ছে, তাঁরা কেউ সৎ, সংগ্রামী ব্যক্তি নন৷ তাঁরা বিপুল পুঁজির মালিক এবং এটাই তাঁদের একমাত্র যোগ্যতা৷ পার্লামেন্ট ও বিধানসভাগুলি তাই আজ একচেটিয়া পুঁজির দাসে পরিণত হয়েছে৷ এখন ভোট হয় অর্থ ও প্রচারের জোরে৷ মিডিয়া পাওয়ার, মানি পাওয়ার আর মাসল পাওয়ারই যে ভোটকে নিয়ন্ত্রণ করে, এ আজ সকলেই জানে৷ একদল হারে, একদল জেতে, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনের দুরবস্থা বদলায় না৷

পার্লামেন্টে–বিধানসভায় পুঁজিপতিদের স্বার্থে কোনও বিল পেশ হলে, এইসব কোটিপতি এমপি–এমএলএ–রা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন না৷ নিজেদের শ্রেণি স্বার্থেই এরা তার পক্ষে দাঁড়ান৷ জনস্বার্থের নামে এঁরা বড়জোর এলাকায় কিছু রাস্তাঘাট করতে পারেন, কিছু দান–খয়রাতি করতে পারেন৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনের প্রধান সমস্যা মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, আর্থিক দুর্দশা ইত্যাদি দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকরী কোনও ভূমিকা নিতে পারেন না৷ কারণ শোষণমূলক অর্থনৈতিক ভিত্তির উপরিকাঠামো হিসাবে পার্লামেন্ট  বা বিধানসভাগুলি এই শোষণব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতেই সাহায্য করে৷ তার বাইরে সে যেতে পারে না৷ ফলে পার্লামেন্ট–বিধানসভায় মনীষীদের ছবি টাঙানো থাকলেও তাঁদের বহুআকাঙিক্ষত গণমুক্তির স্বপ্ণ মর্যাদা পায় না৷ গরিব–মধ্যবিত্তের জীবনের সমস্যার কোনও সমাধান হয় না৷ আক্ষরিক অর্থেই এগুলি আজ কোটিপতিদের প্রতিষ্ঠান এবং তার কাজও বাস্তবে কোটিপতিদের স্বার্থেই৷ এই পার্লামেন্টে শোষিত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নেই৷ প্রবল গণআন্দোলনের আবহে দু–একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও এবং সততার সাথে তাঁরা কাজ করলেও জনজীবনের মৌলিক সমস্যা, যা সৃষ্টি হচ্ছে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায়, তার সমাধান হবে না৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ১৯ সংখ্যা)