70 Year 29 Issue 9 March 2018
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস আন্দোলনের আহ্বান নিয়ে পালন করল অল ইন্ডিয়া এমএসএস৷ বিশ্বের সমস্ত সচেতন নারীর কাছে এই দিনটি অর্থনৈতিক–রাজনৈতিক-সামাজিক সমানাধিকার অর্জনের দাবিতে শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এবং শান্তির পক্ষে সংগ্রামের দিন৷ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে ঘোষণার পিছনে রয়েছে নারীদের দীর্ঘ আন্দোলন, রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস৷ এই ইতিহাস না জানার জন্য কেউ কেউ দিনটিকে বর্তমানে মামুলি একটা উৎসবের দিন হিসাবে দেখাতে চায়৷ কোনও কোনও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের উপর কিছু ছাড় ঘোষণা করে এই বিশেষ দিনে নারীদের কেনাকাটায় প্রলুব্ধ করে৷ একদল তথ্য নিয়ে বসে যায়, কোথায় কোন বিচ্ছিন্ন নারী উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছেন৷ কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন সরকারগুলি নারীদের উন্নয়নে কত কী করেছে তার বিজ্ঞাপন ছাপে সংবাদপত্রের পাতা জুড়ে৷ দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক, সত্যিই এটি নারীদের আনন্দের দিন, উৎসবের দিন৷ কিন্তু বাস্তবটা কি তাই?
আজ সারা বিশ্বে নারীরা কী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে? কতখানি অধিকার ও স্বাধীনতা তারা পেয়েছে? নারী–পুরুষের মজুরি বৈষম্য আজও অটুট৷ কর্মস্থলে নানা রকম যৌন নিগ্রহ, নিরাপত্তাহীনতা, অসম্মান কর্মরত নারীদের জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কয়েক মাস আগে তথাকথিত উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ ইংল্যান্ডে ‘মি টু’ আন্দোলনের সূত্রপাত করলেন আমেরিকার এক অভিনেত্রী৷ বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করা গেল, সেখানে পার্লামেন্টের সদস্য সহ একাশি শতাংশ মহিলা কোনও না কোনও সময়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ এ থেকেই বোঝা যায়, সারা বিশ্বেই নারীদের অবস্থা কত করুণ৷
আমাদের দেশে নবজাগরণের মনীষীরা নারীমুক্তির জন্য নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীশিক্ষা বিস্তারের যে সংগ্রাম করেছিলেন, যে মূল্যবোধের জন্ম দিয়েছিলেন, তা আজ ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে৷ সরকারের প্রত্যক্ষ–পরোক্ষ মদতে বেড়ে চলেছে মদ ও মাদকের রমরমা ব্যবসা৷ জুয়া–সাট্টার ঠেক পাড়ায় পাড়ায়৷ হাতে হাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পর্নোগ্রাফি৷ শুধু যুবকরা নয়, কিশোররাও এর শিকার৷ এর বিষময় প্রভাব পড়ছে নারী সমাজের উপর৷ শিশু থেকে বৃদ্ধা– কেউই আজ নিরাপদ নয়৷ এই কলকাতা শহরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চার–পাঁচ বয়সী শিশুকন্যাদের উপর নির্যাতনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে৷ অত্যন্ত লজ্জার কথা নারী ও শিশুপাচারে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম৷ পণের জন্য বধূহত্যা, অনার কিলিং, অ্যাসিড আক্রমণ, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় পাতায়৷
পাশাপাশি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নেতা–মন্ত্রীরা নারীদের সম্পর্কে নিয়ে এসেছে চূড়ান্ত অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি৷ তাদের দৃষ্টিতে সমাজে মেয়েদের স্থান অন্তঃপুরে৷ তাদের কেউ কেউ বলছেন, নারীকে দশ পুত্র সন্তানের জননী হতে হবে, মেয়েরা রাতে বাইরে বের হয় বলেই ধর্ষণের শিকার৷ সারা দেশে তারা তাদের পুরুষতান্ত্রিক এবং অন্ধ–কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিন্তা অবৈজ্ঞানিক চিন্তার প্রসার ঘটাচ্ছে৷ যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে নারীদের উপর৷
নারী স্বাধীনতা, সমকাজে সমমজুরি, নারীর সার্বিক নিরাপত্তা, ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি আজও অপূরিত৷ দাবিগুলি আদায় করতে আজ নারী আন্দোলনকে পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত করতে হবে৷ এই লক্ষ্য নিয়েই সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়৷