ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন ২৬ সেপ্টেম্বরকে ‘শিক্ষা বাঁচাও দিবস’ হিসাবে পালনের ডাক দিল সেভ এডুকেশন কমিটি। বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় সেভ এডুকেশন কমিটির নেতৃত্বে দেশের সমস্ত রাজ্যে শিক্ষক অধ্যাপক ও শিক্ষাব্রতী মানুষ সহ সাধারণ জনগণ আন্দোলন গড়ে তুলছেন। প্রতিটি রাজ্যেই সেভ এডুকেশন কমিটির নেতৃত্বে এই আন্দোলন তীব্র রূপ নিচ্ছে। দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদরা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এ রাজ্যেও সিলেবাস সংস্কারের নামে অবৈজ্ঞানিক ও শিক্ষাস্বার্থ বিরোধী সিলেবাস চালুর প্রতিবাদে রাজ্যের শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, অধ্যাপক সহ শিক্ষাব্রতী মানুষ আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে যেভাবে টানাটানি চলছে তার বিরুদ্ধে এবং উপাচার্য নিয়োগের প্রশ্নে রাজ্যপালের অগণতান্ত্রিক ভূমিকার প্রতিবাদেও তাঁরা সোচ্চার হয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গেও গড়ে উঠেছে অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটি। এই কমিটির উদ্যোগে শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, শিক্ষানুরাগীরা ১৮ আগস্ট কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তাঁরা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যে শিক্ষানীতির যে প্রস্তাব এনেছে তাতে বোঝা যায় তারা সর্বনাশা জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণে বদ্ধপরিকর। তারা কেন্দ্রের মতোই শিক্ষার সর্বক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণকে উৎসাহিত করছে। এজন্য পিপিপি মডেলকে স্বাগত জানাচ্ছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা বলেন, এ ছাড়া রাজ্য সরকার প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে তিন বছর বয়স থেকে ইউনিক আইডেন্টিটি কার্ড চালু ও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাকে অঙ্গনওয়াড়ির মাধ্যমে করাতে চাইছে, যা শিশুশিক্ষার পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। স্কুল কমপ্লেক্স বা ক্লাস্টার গঠনের কথা বলা হয়েছে, যা শিক্ষার সুযোগকে আরও সঙ্কুচিত করবে।
তাঁরা বলেন শিক্ষার প্রতিটি স্তরেই ত্রি-ভাষা সূত্রের প্রয়োগ চাইছে রাজ্য সরকার। ত্রি-ভাষা সূত্রের পরিবর্তে সেভ এডুকেশন কমিটির দাবি, শিক্ষায় মাতৃভাষা ও ইংরেজি ভাষা উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পড়াতে হবে। উচ্চ প্রাথমিক স্তরে তৃতীয় ভাষা বেছে নেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে। শিক্ষার মাধ্যম সম্পর্কে কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশ রাজ্য শিক্ষানীতিতে নেই। শিক্ষাবিদরা দাবি জানান, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত মাতৃভাষার মাধ্যমেই শিক্ষা দিতে হবে।
কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, বিদ্যালয়ের উচ্চ প্রাথমিক স্তরেই রাজ্য সরকার সিমেস্টার পদ্ধতি চালু করতে চাইছে। তাঁদের দাবি, স্কুল পর্যায়ে কোনও মতেই সিমেস্টার পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কারণ স্কুল স্তরে সিমেস্টার পদ্ধতির প্রয়োগ মৌলিক বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। রাজ্য সরকার কলেজ স্তরে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স ইতিমধ্যেই চালু করেছে। সেভ এডুকেশন কমিটি তার তীব্র বিরোধিতা করে বলে, এই প্রক্রিয়া আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে।
বিদ্যালয় স্তরে বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রচলন করা, শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সম্পর্ক ও সুসংহত জ্ঞানের পরিপন্থী অনলাইন শিক্ষা প্রবর্তনের চেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই প্রক্রিয়া শিক্ষাকে দ্রুত ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে, অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা থেকে ক্রমশ দূরে সরিয়ে দেবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা বলেন, কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার ধ্বংস করছে। একই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রণ করার একচ্ছত্র ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, দুই সরকার এই নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের কথা না ভেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মুখ্যমন্ত্রী না রাজ্যপাল কে নিয়োগ করবেন– এই নিয়ে তারা দ্বন্দ্বে মত্ত। তাঁরা বলেন, কোনও রাজনৈতিক নেতা, মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যপাল নয়, উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদরাই আচার্য হিসাবে শিক্ষার্থীদের ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে পারেন।
কমিটির পক্ষ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনটিকে ‘শিক্ষা বাঁচাও দিবস’ হিসাবে পালন করার আহ্বান জানানো হয়। ওই দিন ভারতবর্ষের সমস্ত রাজ্যে বিক্ষোভ হবে। এ রাজ্যেও প্রতিটি জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষিত হয়, শিক্ষাবিদদেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং উপাচার্য হিসাবে নিয়োগের দাবিতে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।