‘হেঁটেই যাব ব্রিগেড’

শিলিগুড়িতে প্রচার মিছিল

১৯ জুলাই শিয়ালদহ বজবজ লাইনের সন্তোষপুর স্টেশন সংলগ্ন এক বিশাল বস্তিতে গিয়েছিলাম। মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের জন্মশতবর্ষে ব্রিগেডের সমাবেশে আসার জন্য আহ্বান জানিয়ে একটি গ্রুপ সিটিং হয় সেখানে। না দেখলে বিশ্বাসই হবে না, কী অসহায় অবস্থায় এখানকার গরিব সাধারণ মানুষ দিন যাপন করেন। ত্রিশটি ঘর নিয়ে একটি বস্তি। সভায় আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের জীবন সংগ্রাম ও কেন আমরা তাঁর জন্মশতবর্ষ পালন করছি সংক্ষেপে আলোচনা করি।

আলোচনার শেষে আমার অবাক হওয়ার পালা। আমি যখন ব্রিগেডে আসার আহ্বান জানালাম, এক মহিলা, ষাটের ওপর বয়স, বললেন ‘যাব না মানে! গরিব মানুষের দল, তার নেতার জন্মশতবর্ষে ব্রিগেডের সমাবেশ আমরা সকলেই যাব’। জিজ্ঞেস করলাম– কী ভাবে আপনারা যাবেন? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমরা ট্রেনে চেপে শিয়ালদা গিয়ে হেঁটে চলে যাব ব্রিগেডে’। বললাম, শিয়ালদা থেকে ব্রিগেড অনেকটা দূর। আর ট্রেনে সেদিন অনেক ভিড় হবে। উনি বললেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, আমরা অভ্যস্ত, হাঁটতে আমাদের কোনও অসুবিধা হবে না’। ওই এলাকার কমরেড আনিসুর ছিলেন। তিনি বললেন, ‘এখান থেকে পাঁচ মিনিট হেঁটে গেলে যে মোড়, সেখানে আমাদের বাস থাকবে। আপনারা সেই বাসে ব্রিগেডে যাবেন, মিটিং শুনে আসবেন’।

আমার মনে পড়ছিল, মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের একটা কথা– মনুষ্যত্বের দীপশিখা এখনও যদি কোথাও জ্বলন্ত থাকে তা গরিব মানুষের বস্তিতে, কুঁড়েঘরে। এ কথার সত্যতা আমি সেই সন্ধ্যায় স্পষ্ট অনুভব করলাম। বস্তি থেকে বেরিয়ে স্টেশনের দিকে হেঁটে আসার সময় একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, উনি এত জোরের সাথে কী করে বললেন, সবাইকে নিয়ে যাবেন?

শুনলাম, এই মহিলা সকলের কাছে ‘নানি’ বলে পরিচিত। তিনিই বস্তির এই ৩০টি ঘরের অভিভাবকের মতো। পুরুষরা সকলেই কাজে বেরিয়ে যান। সারাদিন ইনিই আগলে রাখেন এই পরিবারগুলিকে। আপদে-বিপদে যখন যেখানে প্রয়োজন হয় তিনি ছুটে যান সকলের জন্য। তিনিই পারেন সকলের হয়ে বড় কাজের ডাকে সাড়া দিতে।

– এক সংগঠকের অভিজ্ঞতা