গত কয়েকদিনের সংবাদপত্র থেকে জানতে পারলাম, হিন্দি ভাষার গুরুত্ব বাড়ানোর প্রস্তাব ভাষা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেছে।
এই খবর থেকে জানতে পারলাম, ১) আই আই টি, আই আই এম, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষাদানের ভাষা এবং অন্যান্য কাজকর্মের ভাষা হিন্দি হওয়া বাঞ্ছনীয়, ২) সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক ইংরেজি পেপার তুলে দিয়ে হিন্দি পেপার আনা দরকার, ৩) স্কুলে, কলেজে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের ভাষা হিসাবে হিন্দি আবশ্যিক হওয়া দরকার। সে ক্ষেত্রে ইংরেজির ব্যবহার ঐচ্ছিক করা হোক। ৪) দেশের সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজকর্মের ক্ষেত্রে হিন্দি ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, ৫) যেসব রাজ্যে সরকারি ভাষা হিন্দি সেখানে হাইকোর্টের কাজ হিন্দিতে করা বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের ভাষা হিন্দি হওয়া উচিত। এছাড়া আরও অনেক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
খবরটা পড়ে স্তম্ভিত হয়েছি! প্রথমত, এটা ব্যাখ্যা করার কোনও প্রয়োজন নেই যে, আমরা চাই বা না চাই জ্ঞানচর্চা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইংরেজি ভাষা। বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারের দরজা এবং সংযোগকারী ভাষা হিসেবে ইংরেজির গুরুত্ব আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না।
দ্বিতীয়ত, আই আই টি সহ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার লঘু করলে সারা বিশ্বে ভারতবর্ষের মেধাশক্তি মুখ থুবড়ে পড়বে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আজও যে ভারতীয়রা অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে কর্মরত বলে আমরা গর্ব করি তা ভূলুণ্ঠিত হবে।
তৃতীয়ত, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চস্তরে শিক্ষার ক্ষেত্রে হিন্দি ভাষায় সমস্ত বই পাওয়া কি বাস্তবে সম্ভব? তা হলে উচ্চশিক্ষায় এ দেশের ছেলেমেয়েরা কী ভাবে অংশগ্রহণ করবে?
চতুর্থত, বিশ্বজুড়ে নিত্যনতুন ওষুধপত্র থেকে আধুনিক বিজ্ঞাননির্ভর সভ্যতার বিভিন্ন আবিষ্কার, সে সব ইংরেজি ভাষাতেই প্রকাশিত হয়। স্কুলস্তর থেকে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব কমিয়ে দিলে চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের সমস্ত শাখার অগ্রগতি স্তব্ধ হবে।
পঞ্চমত, আইনের সমস্ত বইপত্র হিন্দি ভাষায় পাওয়া কি সম্ভব? হাইকোর্টের মতো প্রতিষ্ঠানে হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক হলে বিচার ব্যবস্থা সঠিকভাবে চলবে তো?
দেশ জুড়ে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার এই পরিকল্পনা যে আসলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উগ্র হিন্দুত্ববাদ প্রসারের ষড়যন্ত্রেরই অঙ্গ তা উল্লেখ করে দেশের প্রথম সারির শিক্ষাবিদরা ইতিমধ্যেই এর বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছেন। আসুন আমরাও এই পরিকল্পনা বাতিলের দাবি তুলি।
বাসুদেব দাস
ডহরপুর, তমলুক