মধ্যপ্রদেশে এমবিবিএস পাঠক্রমে হিন্দিতে পাঠ্যপুস্তক চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার বিজেপি সরকার৷ এর তীব্র নিন্দা করেছেন এআইডিএসও–র সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৌরভ ঘোষ৷ ২১ অক্টোবর এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এমবিবিএস পাঠক্রমে হিন্দি সহ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় পাঠ্যপুস্তক চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ মধ্যপ্রদেশ সরকার ইতিমধ্যেই হিন্দিতে এমবিবিএস পাঠ্যপুস্তক ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে ভোপালে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই পরিকল্পনা কার্যকর করা শুরু করেছে৷
এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকার ছাত্রদের সুবিধা হবে– এই যুক্তি খাড়া করছে৷ কিন্তু আমাদের দেশে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়ন এবং সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে তা আয়ত্ত করা ইংরেজি ছাডা অন্য কোনও ভাষায় সম্ভব নয়৷ কারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের সমস্ত প্রামাণ্য বই যেগুলি গোটা বিশ্বে চর্চা করা হয় এবং গবেষণা, আবিষ্কার যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে হয়েছে, সেগুলির সবই ইংরেজিতে লেখা এবং তার সমস্ত পরিভাষা হয় ইংরেজিতে, নয় ল্যাটিন ভাষায়৷ এমনকি এই সমস্ত বইয়ের হিন্দি বা অন্য কোনও ভাষায় উপযুক্ত ভাবে অনুদিত বইপত্র এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় না৷ ফলে হিন্দি বা অন্য কোনও আঞ্চলিক ভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞান পডানো বাস্তবে সম্ভব নয়৷
তিনি বলেন, সরকারের এই পদক্ষেপে স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রদের মধ্যে দুটি শ্রেণি সৃষ্টি হবে৷ এক শ্রেণির ছাত্রছাত্রী ইংরেজিতে পডাশোনা করে উচ্চতর শিক্ষায় যেতে পারবে৷ অপর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা যারা হিন্দি বা আঞ্চলিক ভাষায় পডাশোনা করবে, তারা চিকিৎসাবিজ্ঞানের সামগ্রিক জ্ঞান অর্জন করা থেকে বঞ্চিত হবে৷ বলা বাহুল্য, হিন্দি অথবা আঞ্চলিক ভাষায় এমবিবিএস পাশ করা একজন ছাত্র পরবর্তীকালে শুধু বিদেশেই নয়, এমনকি আমাদের দেশের অন্য রাজ্যেও উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বহু বাধার সম্মুখীন হবে৷
শুধু মেডিকেল শিক্ষাই নয়, জাতীয় শিক্ষানীতি–২০২০–তে প্রস্তাব করা হয়েছে, সব আঞ্চলিক ভাষাতেই উচ্চশিক্ষা চালু করতে হবে৷ বিগত কয়েক দশকে কোনও সরকারই হিন্দি বা অন্য আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে উন্নত করার জন্য কোনও বিজ্ঞানসম্মত উপায় অনুসরণ করেনি৷ এই অবস্থায় জাতীয় শিক্ষানীতি–২০২০–র প্রস্তাবগুলি কার্যকরী হলে জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার এই ক্ষতিকর প্রস্তাবের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী আরও একধাপ এগিয়ে সমস্ত প্রেসক্রিপশনে ‘শ্রী হরি’ লেখার প্রস্তাব করেছেন৷ শিক্ষার গৈরিকীকরণের দিকে অগ্রসর হওয়ার এটি আরেকটি পদক্ষেপ মাত্র৷ দেশের সমস্ত মেডিকেল ছাত্র, ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী সহ সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই জনবিরোধী নীতি প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান, যাতে চিকিৎসাবিজ্ঞানকে সাম্প্রদায়িক শক্তির সমস্ত আক্রমণ এবং ধূলিসাৎ হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়৷