কয়লা শিল্পের বেসরকারিকরণ বাতিল সহ পাঁচ দফা দাবিতে কয়লা শিল্পের ইউনিয়নগুলির ডাকে ২ জুলাই থেকে পালিত হয় তিন দিনের হরতাল৷ এই হরতাল সফল করার জন্য এআইইউটিইউসি–র সাধারণ সম্পাদক কমরেড শঙ্কর দাশগুপ্ত কয়লা শিল্পের শ্রমিক–কর্মচারীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
কয়লা খনি জাতীয়করণের পর দেশে কয়লা উৎপাদনে বেসরকারি পুঁজির অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল৷ পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের নয়া আর্থিক নীতির ধারাবাহিকতায় বিজেপি সরকার ২০১৫ সালে নতুন কয়লা আইন চালু করে, ১৯৫৬ সালের প্রচলিত আইন সংশোধন করে এবং সর্বশেষে একটি অর্ডিন্যান্স জারি মাধ্যমে দেশি–বিদেশি পুঁজিপতিদের হাতে এ দেশে কয়লা উৎপাদন ও বিক্রির অবাধ অধিকার তুলে দেয়৷ এরই ফলশ্রুতিতে ১৮ জুন শুরু হয় নিলামি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ৪১টি কয়লা ব্লক পুঁজিপতিদের হাতে দীর্ঘমেয়াদি লিজের ভিত্তিতে তুলে দেওয়া হবে৷ এটি যে সরকারি সংস্থা কোল ইন্ডিয়াকে দুর্বল করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সন্দেহ নেই এবং শ্রমিক–কর্মচারীদের আশঙ্কা এ সবই ধীরে ধীরে কোল ইন্ডিয়ার অস্তিত্বকে সংকটে ফেলবে৷ এর আগেই সরকারি সাইনবোর্ডের আড়ালে বেসরকারিকরণের কৌশলী পদক্ষেপ হিসাবে ঠিকাদার দিয়ে কয়লা উৎপাদন শুরু করা হয়েছে৷
স্বাধীনতার পর দেশের পুঁজিবাদী অর্থনীতির সামগ্রিক স্বার্থেই জনগণের টাকায় দেশের মূল, ভারি ও অত্যাবশ্যক শিল্পগুলি গড়ে উঠেছিল৷ সরকার বহু বেসরকারি সংস্থা অধিগ্রহণ করেছিল৷ সেই সময় কয়লাখনিগুলি অধিগ্রহণ করে সরকার কোল ইন্ডিয়া গঠন করে৷ আজ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থবাহী নীতি কোল ইন্ডিয়া সহ সমস্ত বৃহৎ ও লাভজনক সরকারি শিল্পগুলিকে দুর্বল করে দিয়ে সেগুলিকে বেসরকারি মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার ছক কষছে৷ এর আগেও একের পর এক সরকারি কারখানা বন্ধ করে দিয়ে বা জলের দরে বেসরকারি মালিকের হাতে তুলে দিয়ে বিজেপি সরকার হাজার হাজার শ্রমিক–কর্মচারীকে পথে বসিয়েছে৷ বেসরকারি মালিকের স্বার্থে এই সরকার কোল ইন্ডিয়ার শ্রমিক–কর্মচারীদের পথে বসাতে চাইছে৷ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সূচনা হল এই হরতালের মাধ্যমে৷ আগামী দিনে সমস্ত কোলিয়ারি, ওয়ার্কশপ ও অফিসগুলির ইউনিয়নকে নিয়ে আন্দোলনের হাতিয়ার সংগ্রাম কমিটি গঠন করে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনের পথে এগিয়ে যাওয়া হবে৷ কয়লা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সাড়ে পাঁচ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে কমরেড দাশগুপ্ত বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে৷