ইতিহাস বিকৃতির বুলডোজার রুখে দিল কর্ণাটকের ছাত্রসমাজ। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার পাঠ্যবই সংশোধনের নামে দলবাজির ঘৃণ্য নজির সৃষ্টি করে গৈরিক আদলে ইতিহাস লেখার যে অপচেষ্টা চালাচ্ছিল– ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-অধ্যাপক, সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরা তার বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন গড়ে তুলে তা রুখে দিয়েছেন। আন্দোলনের চাপে মুখ্যমন্ত্রী লিখিত বিবৃতি দিয়ে পাঠ্যবই সংশোধন কমিটি ভেঙে দিতে বাধ্য হয়েছেন। গণআন্দোলনের এ এক ঐতিহাসিক জয়।
দশম শ্রেণির বইয়ে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আপসহীন ধারার শহিদ ভগৎ সিং সম্পর্কিত অধ্যায়টি বাদ দিয়ে তার জায়গায় দেওয়া হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধী আরএসএস তাত্ত্বিক হেডগেওয়ারের বক্তব্য। ওরা স্বামী বিবেকানন্দের মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও জাতিভেদ প্রথা নিয়ে তাঁর বক্তব্যকে পাল্টে অন্যভাবে লিখেছে। পি লঙ্কেশ, সারা আবুবকর, এএন মূর্তিরাও, নারায়ণগুরু সহ অন্যান্য প্রগতিবাদী লেখকদের সামাজিক ন্যায় এবং লিঙ্গসমতা সংক্রান্ত মূল্যবান লেখা বাতিল করে দিয়েছে। তথ্যের বিকৃতিও ঘটানো হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যসূচি থেকে সাবিত্রীবাই ফুলে, কানাকাদাসারু, পুরানদারাদাসারুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নবম শ্রেণির বইয়ে বাসবান্নার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং আম্বেদকরের সংবিধান-শিল্পীর পরিচয় বাদ দেওয়া হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির বই থেকে আম্বেদকরের ‘মহদ সত্যাগ্রহ’ এবং নাসিক কলারাম মন্দিরে প্রবেশ আন্দোলন বাদ দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের পরিবর্তনের ফলে ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী সহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও এর বিরুদ্ধে প্রথম রাস্তায় নামে। একে একে বহু বুদ্ধিজীবী প্রতিবাদে সামিল হন। প্রথিতযশা সাহিত্যিকরা পাঠ্যবইয়ে তাঁদের লেখা ছাপার অনুমতি প্রত্যাহার করে নেন। তাঁরা স্পষ্টই জানিয়ে দেন প্রগতিশীল লেখকদের লেখা যখন বাদ দেওয়া হচ্ছে এবং প্রতিক্রিয়াশীল নানা বিষয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, তখন তাঁরা নিজেদের লেখা পাঠ্যবইয়ে দেখতে চান না। তাঁদের এই বলিষ্ঠ অবস্থান শিক্ষার গৈরিকীকরণের বিরুদ্ধে প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। সরকার ভগৎ সিং অধ্যায় ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়। দ্বাদশ শতাব্দীর সমাজসংস্কারক বাসবান্না সংক্রান্ত তথ্যবিকৃতি সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হয়। এই ঘটনা দেখাল, আন্দোলন যুক্তি ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হলে বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেও বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব।