এআইডিএসও-এর সাধারণ সম্পাদক সৌরভ ঘোষ ৪ এপ্রিল সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি বিবৃতিতে জানান, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় যে, এনসিইআরটি বিজেপির চূড়ান্ত বিভেদমূলক, সাম্প্রদায়িক ও অসহিষ্ণু রাজনীতির সুরেই দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস, সিভিক, হিন্দি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্য বইয়ের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এইভাবে তারা যুক্তিসঙ্গত চিন্তা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিরুদ্ধে এক অপরাধ সংগঠিত করছেন।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার জনস্বার্থবিরোধী নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত করতে আরও একবার স্বৈরাচারী কায়দায় অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক পথকেই বেছে নিল। বিজেপি সরকার দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বই থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, অতীতের ঐতিহ্য, বৈচিত্র্য সহ বেশ কিছু অধ্যায় বাদ দিয়েছে যেগুলো আমাদের ইতিহাস সংক্রান্ত জ্ঞানে সমৃদ্ধ। ২০২৩-২৪ নতুন শিক্ষাবর্ষে ইতিহাসের গণতান্ত্রিক রাজনীতি (সিভিক) অংশ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ‘গণতন্ত্র এবং বৈচিত্র্য’, ‘গণসংগ্রাম ও আন্দোলন’, ‘গণতন্ত্রের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ’ এবং ভারতের ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ‘মুঘল শাসক ও তাদের দরবার’, ‘ঔপনিবেশিক দেশভাগ’ পরিচ্ছেদগুলি।
একইভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ‘ঔপনিবেশিক শহর’, ‘দেশভাগ’ বিষয়গুলিও আর পড়ানো হবে না। দ্বাদশ শ্রেণির পৌরবিজ্ঞান থেকে ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধের যুগ’কেও বাদ দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন ভারতের রাজনীতিতে গণআন্দোলনের উত্থান, এবং ‘একদলীয় শাসনের সময়কাল’ও আর পড়ানো হবে না। একাদশ শ্রেণির হিন্দি পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ফিরাক গোরখপুরীর গজলের কিছু উদ্ধৃতাংশ, সূর্যকান্ত ত্রিপাঠি নিরালার কবিতা, ‘চার্লি চ্যাপলিন ইয়ানি হাম সব’, গজানন মাধব মুক্তিবোধের ‘নয়ে জনম কি কুন্দালি’, নরেন্দ্র শর্মার ‘নিন্দ উচত জাতি হ্যায়’ লেখাগুলি। এইভাবে বিজেপি সরকার ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সামগ্রিক ধারণার প্রতি তাদের অসহিষ্ণুতাকেই প্রকট করেছে।
সৌরভ ঘোষ বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তার বিভেদমূলক ও সাম্প্রদায়িক চিন্তার প্রচার করতে স্কুলপাঠ্য বইকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যে ভাবে ব্যবহার করছে, তা সভ্যতার বিরুদ্ধে এক চরম অপরাধ। বিজেপি সরকার জঘন্য উদ্দেশ্য এবং পূর্ব পরিকল্পনা মতো ইতিহাসের বিকৃতি ঘটাচ্ছে। এইভাবে অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে শিক্ষার উপর একের পর এক আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। এখন কেন্দ্রীয় সরকার এনসিইআরটিকে দিয়ে এই জঘন্য কাজগুলি করাচ্ছে। সরকার এইভাবে যুক্তিবোধহীন, রোবটের মতো প্রজন্ম তৈরি করতে চাইছে যারা সাহিত্য, বিজ্ঞান ও ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকবে।
অন্য দিকে, ধর্ম বর্ণ জাতিকে ভিত্তি করে অসম্প্রীতির ভাবনাকে এমন ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যা পরিণতিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম দিচ্ছে। এই রকম পরিস্থিতিতে সরকারের শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবেই প্রগতিশীল অধ্যায়গুলিকে ইচ্ছাকৃত ভাবে বাদ দেওয়ার ঘটনা শুধু সাধারণ ছাত্রদের মধ্যেই নয়, গোটা সমাজ জুড়েই সাম্প্রদায়িক এবং বিদ্বেষী মনোভাবের জন্ম দেবে। এটা গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার উপরে অপ্রত্যাশিত আঘাত। তাই এআইডিএসও শিক্ষাবিদ, সাধারণ মানুষ, অভিভাবক, শিক্ষক ও ছাত্রদের কাছে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পাঠ্য বইয়ের এসব স্বেচ্ছাচারী পরিবর্তনের বিরুদ্ধে, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচাতে একত্রিত হওয়ার আবেদন জানাচ্ছে।