জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ বাতিল, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা রক্ষা করা সহ ১৭ দফা দাবিতে এ আই ডি এস ও-র আসাম রাজ্য কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তেজপুরের হেম বরুয়া ভবনে শহিদ কনকলতা স্মৃতি মঞ্চ প্রাঙ্গণে ৩১ মে-২ জুন। প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও ৩১ মে প্রকাশ্য সভায় সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী উপস্থিত হন। মণিপুর, অরুণাচলপ্রদেশ, মিজোরাম, ত্রিপুরা থেকে প্রতিনিধিরা প্রকাশ্য সভায় উপস্থিত হন। সম্মেলনের প্রকাশ্য সভার উদ্বোধন করেন এআইডিএসও-র আসাম রাজ্য কমিটির প্রথম রাজ্য সম্পাদক বিশিষ্ট জননেতা কান্তিময় দেব। মুখ্য অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট জননেত্রী অধ্যাপক চন্দ্রলেখা দাস। বক্তব্য রাখেন দরং কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক পুণ্যেশ্বর নাথ, এআইডিএসও-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি জিতেন্দ্র চালিহা ও বর্তমান রাজ্য সম্পাদক হেমন্ত পেগু, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মণিশংকর পট্টনায়ক প্রমুখ। এআইডিএসও-র আসাম রাজ্য কমিটির সভাপতি প্রোজ্জ্বল দেব সভাপতিত্ব করেন। পতাকা উত্তোলন করেন এআইডিএসও-র কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সভাপতি সৌরভ ঘোষ। মনীষীদের উদ্ধৃতি ও ছাত্র আন্দোলনের ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দরং কলেজের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ গহন চন্দ্র মহন্ত এবং প্রাক্তন শিক্ষক হরিদাস সরকার। সন্ধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রূপকোঁওর জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তেজপুরের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী রুবি বরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন উত্তর পূর্ব ভারতের শিল্প গড়ে তোলার সম্ভাবনা ও ‘বেকার সমস্যার সমাধান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বহু বিশিষ্ট জন বক্তব্য রাখেন। তাঁরা ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তুলে সরকারি উদ্যোগে কলকারখানা গড়ে তোলার জন্য সরকারকে বাধ্য করার কথা বলেন। প্রতিনিধি সভায় তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। ২ জুন প্রতিনিধি সভার শেষে বক্তব্য রাখেন এআইডিএসও-র সর্বভারতীয় কাউন্সিলের সভাপতি সৌরভ ঘোষ। সভার মুখ্য বক্তা এস ইউ সি আই (সি)-র প্রবীণ পলিটবুরো সদস্য, প্রখ্যাত জননেতা অসিত ভট্টাচার্য শারীরিক কারণে উপস্থিত থাকতে না পারায় তাঁর রেকর্ড করা বক্তব্য প্রতিনিধিদের শোনানো হয়। তিনি আসামের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এ যুগের অন্যতম মার্ক্সবাদী দার্শনিক কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তার ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, ক্ষমতাসীন পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে সরকারগুলি শিক্ষাকে সঙ্কুচিত করার সাথে সাথে বৈজ্ঞানিক-যুক্তিবাদী মনন গড়ে তোলা, ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা-চেতনা এবং প্রকৃত মানুষ ও চরিত্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকাকে ধ্বংস করছে। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ চালু করে শিক্ষার প্রাণসত্তাকে বিনষ্ট করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা ধ্বংসের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে জাত-পাত-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে সামিল হতে হবে। তিনি বলেন, আসামের উগ্র প্রাদেশিকতাবাদ ও বিভাজনবাদের চিন্তাকে প্রতিটি সরকার উৎসাহিত করেছে এবং আসামের ছাত্র সমাজকে এ সব চিন্তায় আচ্ছন্ন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অপচেষ্টা এবং পুঁজিবাদী শাসন শোষণকে মজবুত করার লক্ষ্যে বর্তমান বিজেপি সরকার কর্তৃক প্রণয়ন করা জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-র বিরুদ্ধে সঠিক বামপন্থী রাজনীতির ভাবধারায় শক্তিশালী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
হিল্লোল ভট্টাচার্যকে রাজ্য সভাপতি, পল্লব পেগু, স্বাগতা ভট্টাচার্য, আজিজুর রহমানকে সহ সভাপতি, হেমন্ত পেগুকে রাজ্য সম্পাদক এবং রূপশ্রী গোস্বামীকে কোষাধ্যক্ষ ও অফিস সম্পাদক নির্বাচিত করে ৭২ জনের রাজ্য কাউন্সিল ও ৪০ জনের রাজ্য কমিটি গঠন করা হয়।
এই লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা ২০ – ২৬ জুন ২০২৫ এ প্রকাশিত