শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সেলফি পয়েন্ট! চক্ষুলজ্জাটুকুও রাখলেন না প্রধানমন্ত্রী

‘সেলফি’ শব্দটি এখন খুবই জনপ্রিয়। আগে মানুষ ছবি তুলত ক্যামেরায়। এখন মোবাইলের সৌজন্যে ক্যামেরা সকলের পকেটে। আগে মানুষ ছবি তুলত অন্যের, এখন ছবি তোলে নিজের। আর নিজের ছবি নিজে তোলাকেই বলা হয় ‘সেলফি’।

কিন্তু সরকারি ক্ষমতার জোরে যখন রেল স্টেশন, লালকেল্লা সহ নানা জায়গায় এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর ছবির সামনে সেলফি তোলার ফতোয়া জারি হয়, প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়ে তাঁর প্রচার করতে ছাত্রদের বাধ্য করার চেষ্টা হয়, কী বলা হবে তাকে? স্বৈরাচার, নাকি অন্য কিছু?

ঠিক এই কাজটাই করেছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ধামাধারী ইউজিসি কর্তারা। সম্প্রতি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তাঁরা নির্দেশ দিয়েছেন ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ত্রিমাত্রিক লে-আউটে সেলফি-পয়েন্ট তৈরি করতে হবে। ছাত্রদের কাজ হবে সেখানে দাঁড়িয়ে পিছনের ছবি সহ সেলফি তুলে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া।কী থাকবে সেই সেলফি পয়েন্টে? জ্বলজ্বল করবেপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি।ইতিমধ্যে আরটিআই করে জানা গেছে শুধু সেন্ট্রাল রেলেই ৫০টির বেশি স্টেশনে ৩ কোটির বেশি টাকা খরচ করে ত্রিমাত্রিক সেলফি পয়েন্ট বানানো হয়েছে।সমস্ত রেল জোনে আরও অনেক বেশি পয়েন্ট তৈরি হয়েছে।এই সব সেলফি পয়েন্ট তৈরি করে জনগণের পয়সায় মোদি সাহেবের প্রচারের ব্যবস্থা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এই সেলফি-পয়েন্ট নাকি ভারতের সাংঘাতিক ‘গর্বের’ প্রচার করবে। সেখানে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের জনগণ কী কী ‘সুবিধা’ পাচ্ছে তার প্রচার করা হবে। সরকারি পয়সায় তৈরি এই সেলফি-পয়েন্টে দাঁড়িয়ে বিজেপির নেতা-কর্মীদের দিয়ে সেলফি তুলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্লজ্জ প্রচার চলছে। এবার সেই কাজটায় যুক্ত করা হল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এবং তা করতে হবে শিক্ষাঙ্গনে দাঁড়িয়েই!

বিজেপি তথা তাদের পরিচালিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর যা ‘ঐতিহ্য’ তাকে আর যাই হোক ভারতের সাংস্কৃতির গর্বের সারিতে কখনওই রাখা যায় না। তারা ‘ঐতিহ্য’ বলে যা তুলে ধরে তা বহুদিনের বাতিল হওয়া বস্তাপচা চিন্তাই শুধু নয়, সাম্প্রদায়িকতার বিষে বিষাক্ত, যা এ দেশের নবজাগরণের মনীষীদের ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী চিন্তারও সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রধানমন্ত্রীর ছবির মাধ্যমে সেই সংকীর্ণ-সাম্প্রদায়িক চিন্তাকেই দেশের ঐতিহ্য বলে তুলে ধরা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ! সামনে লোকসভা নির্বাচন।এ দিকে জনগণের ক্ষোভ নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ফেটে পড়তে চাইছে।ভোটে ধর্মীয় বিদ্বেষের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করে রাখার কৌশল ছাড়া বিশেষ কোনও সম্বল বিজেপির নেই। তাই ইউজিসি-কে তারা সামনে ঠেলে দিয়েছে ছাত্রদের দিয়ে জোর করে সেলফি তুলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভজনার কৌশলের পথে।

দেশে দেশে শাসকরা জানে, কোনও স্বৈরাচারী শাসকের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন তোলার সাহস যারা রাখে তাদের মধ্যে অগ্রণী এই ছাত্রসমাজ। তাই তাদেরই লক্ষ্যবস্তু করে কর্তাভজা মেরুদণ্ডহীন ক্লীবে পরিণত করতেই এই সেলফি-পয়েন্টের ফতোয়া। দেশ জুড়ে প্রবল প্রতিবাদের সামনে সরকার আপাতত থমকে গেলেও সেলফি পয়েন্টের এই সিদ্ধান্ত তারা বাতিল করেনি। আশার কথা, শিক্ষাবিদ সহ সমাজের সব স্তরের সচেতন মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জড়িয়ে বিজেপি সরকারের এই নির্লজ্জ প্রচারসর্বস্বতার তীব্র নিন্দা করেছেন।