লাড্ডু– আগে জানিতাম উহা ভক্ষণ করা হউক বা না হউক, পস্তাইতে হইবে। আবার পরীক্ষার খাতায় বা ভোটের বাক্সে উহার প্রাপ্তি ঘটিলে নিদারুণ বিপর্যয়ের বোঝা ঘাড়ে চাপিবে। কিন্তু সম্প্রতি দেখিলাম রাজনীতির অলিগলিতেও লাড্ডুর অবাধ প্রবেশ। ভারতের সর্বাপেক্ষা ধনী ধর্মস্থান হইল তিরুপতি তিরুমালা। ওই স্থানে একবার মাথা ঠেকাইতে পারিলে চোদ্দ পুরুষের পাপ্রালন। তবে এই মাথা ঠোকাঠুকি বা বিগ্রহের সহিত চোখাচোখির মূল্য চুকাইতে হয়। যে যেমন অঙ্কের পূজা নিবেদন করিবেন, তার তেমন ব্যবস্থা। সরু গলির মতো প্রবেশ স্থানের সমস্ত দিক এমনকি উপরিভাগ পর্যন্ত কাঁটাতারের বেড়া। ট্রেনের প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি, স্লিপার কোচের ভাড়ায় যেমন তারতম্য, এই দেবস্থানেও তাই। যে যত নৈবেদ্য যোগাইবে, তার উপযোগী তারের বেড়ায় সে ঢুকিবে। আবার যাহারা ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’, তাহাদের লাইনে দাঁড়াইবার দরকার নাই। ভগবানের নৈতিক সেবক তাহাদের পিছনের দরজা দিয়া প্রবেশ করাইয়া দিবে। হিন্দু ধর্মের বর্ণাক্রমের অনুকরণ এখানেও প্রকট।
এরপর লাড্ডু! উহা ওই মন্দিরের পেটেন্ট করা প্রসাদ। তবে উহার জন্যও মূল্য ধরিয়া দিতে হয়। নানা মূল্যে নানা সাইজের লাড্ডু– আবার সেই মতো লাড্ডুর সংখ্যাও নির্ধারিত। এ হেন লাড্ডু হঠাৎ প্রাদেশিক রাজনীতিতে হুলস্থূল ফেলিয়া দিয়াছে। অন্ধ্রপ্রদেশে এখন বিজেপির সহযোগী চন্দ্রবাবু নাইডুর সরকার। ওনার পূর্বে ছিল জগন রেড্ডির সরকার। গদির এই ট্র্যাপিজ খেলায় স্বভাবতই উহাদের মধ্যে চাপান উতোর লাগিয়াই আছে। তিরুপতি দেবস্থানম অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের পরিচালনাধীন। হঠাৎ চন্দ্রবাবু আবিষ্কার করিলেন যে জগনের আমলে লাড্ডুর পবিত্রতা হরণ হইয়াছে। ঘি-এর বদলে পশুর চর্বি ব্যবহৃত হইয়াছে! হরি হরি! এই লাড্ডু সেবন করেন নাই এমন ভক্ত খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হইতে অমিত শাহ কে নাই! প্রসাদের ভেজালত্ব তাহাদের ধর্মপরায়ণতায় কোনও আঁচড় ধরাইছে কি না, তাহা গবেষণার বিষয়। তবে উদ্বেগের অনুপ্রবেশ ঘটিয়াছে সন্দেহ নাই। যথারীতি জগন ক্ষিপ্ত হইয়া হাত পা ছুঁড়িতেছেন, চন্দ্রবাবুকে অসত্য বলিবার দায়ে অভিযুক্ত করিতেছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হইল, পশুর চর্বি ঢুকিল কী করিয়া? ব্যবহৃত ঘিতে কি উহা কেউ উদ্দেশ্যপূর্বক মিশাইয়াছে? কে সে? লাড্ডু প্রস্তুতকারক টেন্ডার বিজয়ী না মন্দিরের রন্ধন গৃহ? একদল মহা হিন্দুধর্মী তো বলিয়া দিয়াছেন, ইহা জেহাদিদের কাজ। লাড্ডু-জেহাদ শব্দটি হয়তো অচিরেই অক্সফোর্ড অভিধানে জায়গা করিয়া লইবে!
কিন্তু আবার বলিতেছি, সূচিভেদ্য সতর্ক ব্যবস্থা এবং আনাচে কানাচে বিছানো সিকিউরিটি নেটওয়ার্কের চোখকে ফাঁকি দিয়া জেহাদি লাড্ডু প্রবেশ করিল কোন গুপ্তপথে? তবে কি ধরিয়া লইতে হইবে যে, সুরক্ষার লৌহপ্রাচীর অপেক্ষা উহাদের যত্রতত্র প্রবেশের উপায়সমূহ অনেক বেশি শক্তিশালী? আর সর্বোপরি হিন্দুধর্মকে এ-রূপ চোরাপথে কলুষিত করার জন্য জগন সহ অন্যান্য ছদ্মবেশী জেহাদিকে অবিলম্বে ইউএপিএতে লাগাম পরাইয়া কোতল করা উচিত।
কিন্তু মুশকিল একটাই। খড়ের গাদায় সূঁচ খুঁজিবে কে? সিবিআই না ইকনমিক উইংস না সরকারের পেশাদারি গুপ্তচর সংস্থা? ইহা লইয়া সম্ভবত কিছু গোলযোগ দেখা দিয়াছে। নচেৎ এতদিনে জেহাদিদের শায়েস্তা করিতে পুলওয়ামা গোছের একটা কিছু ঘটিয়া যাইত। যাই হোক, শোনা যাইতেছে, লাড্ডু লইয়া না কি একটি ‘ল্যান্ডমার্ক’ আইন আসিতেছে! সত্যি, লাড্ডুর কী মহিমা!