বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠন অ্যাবেকার পক্ষ থেকে বার বার মুখ্যমন্ত্রী, বিদ্যুৎমন্ত্রী, সিইএসসি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে দাবি করা হয়েছিল যে লকডাউন পিরিয়ডে কমপক্ষে তিনমাস প্রতি মাসে ২০০ ইডনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে, ক্ষুদ্র শিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় ফিক্সড চার্জ সহ বিল মকুব, কৃষিতে তিনমাস বিল মকুব এবং মিটার রিডিং না দেখে যেন বিদ্যুৎ বিল করা না হয়৷ দাবি করা হয়েছিল লকডাডন উঠে গেলে মিটার রিডিং দেখে যেন বিল করা হয়৷ কিন্তু সরকার তাতে কোনও কর্ণপাত করেনি৷ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি এবং সিইএসসি কর্তৃপক্ষ গড় বিল করে গিয়েছে৷ প্রত্যেক কর্তৃপক্ষই অন লাইনে বা চেকে অথবা অন্য কোনও ভাবে সেই গড় বিল পরিশোধ করতে বারবার কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছে৷ বিদ্যুৎমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও ডিড ডেট এর মধ্যে বিল দিতে না পারলে ন্যায্য পাওনা রিবেট থেকে গ্রাহকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ লেট পেমেন্ট সারচার্জ বা ডিলে পেমেন্ট সারচার্জ আদায় করা হচ্ছে৷
বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ এর পশ্চিমবঙ্গ রেগুলেশন নং–৫৫/ডব্লিড বি ই আর সি, তারিখ– ০৭/৮/২০১৩ এর ৩.৭ ধারাতে বলা আছে যদি কোনও গ্রাহকের মিটার রিডিং নেওয়া সম্ভব না হয় তবে বিগত ছয় মাসের বিলের গড় অথবা গত বছরের এই সময়ের বিলের সমান অ্যাডজাস্টমেন্ট বিল করবে বিদ্যুৎ কোম্পানি৷ কিন্তু রেগুলেশনে কোথাও বলা নেই গণহারে পশ্চিমবাংলার প্রায় আড়াই কোটি বিদ্যুৎ গ্রাহকদের একই কারণে গড় বিল দেওয়া যাবে৷
করোনা মহামারি জনিত লকডাউনের কারণে মিটার রিডিং নেওয়া সম্ভব না হয়ে থাকলে তার জন্য বিদ্যুৎ গ্রাহকরা কোনওভাবেই দায়ী নয়৷ যদি বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতি স্বীকার করতেই হয় তবে কেন একমাত্র গ্রাহকদেরই তার ভার বহন করতে হবে? কলকাতায় সিইএসসি কর্তৃপক্ষ এবং একই ভাবে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি ঘরে বসে বসে শুধু হিসাবের ভেলকি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লুট করছে৷ বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘‘মিটার রিডিং দেখে মোট কনজিডমড ইডনিট থেকে গড় বিলের ইডনিট বাদ দিয়ে বিল করা হলে তো হিসাব ঠিকই থাকল৷’’ না ঠিক থাকল না৷
প্রথমত গণহারে এই রেগুলেশন প্রয়োগ করা আইনসম্মত নয়৷ দ্বিতীয়ত গ্রাহকরা যে কারণের জন্য দায়ী নয় তার দায় গ্রাহকদের ডপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়৷ ন্যায়সম্মত হবে তখনই, যখন যে ক’মাস রিডিং নেওয়া হয়নি, রিডিং নেওয়ার পর যত ইউনিট খরচ মিটারে দেখা যাচ্ছে তাকে ওই ক’মাসের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে সমান ভাগে প্রত্যেক মাসের বিল রি–জেনারেট করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়৷ তবেই গ্রাহকরা স্ল্যাব বেনিফিট এবং রিবেটের ন্যায্যতা পাবে৷ না হলে কম বিদ্যুৎ পুড়িয়েও উচ্চতর স্ল্যাবে তাদের অনেক বেশি টাকা দিতে হবে৷
হিসাবের ভেলকি দেখিয়ে ঘরে বসে বসে সিইএসসি তাদের প্রায় ৩০ লক্ষ গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা চুপি চুপি লুট করছে৷ একই পদ্ধতিতে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি ও তাদের প্রায় দুই কোটি গ্রাহকদের কাছে থেকে শত শত কোটি টাকা লুট করছে৷ সমস্ত স্তরের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের একদিকে ন্যায্য পদ্ধতিতে বিল করার দাবিতে যেমন সোচ্চার হতে হবে, সাথে সাথে অন্যায় ভাবে নিয়ে নেওয়া বাড়তি টাকা ফেরতের দাবি তুলতে হবে৷ অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন (অ্যাবেকা) এই দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছে৷