১৯৪৮ সালের ২৪ এপ্রিল এ যুগের অন্যতম মহান মার্ক্সবাদী নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষ তাঁর মুষ্টিমেয় সহযোদ্ধাকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জয়নগরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতের একমাত্র যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টি এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-কে। সেই পার্টি আজ ভারতের ২৪টি প্রদেশে শ্রমিক-কৃষক সহ জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি নিয়ে গণআন্দোলন ও শ্রেণিসংগ্রাম গড়ে তুলছে। তারই অঙ্গ হিসাবে এ বছর দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে প্রায় সব রাজ্যের রাজধানী বা গুরুত্বপূর্ণ শহরে সভা অনুষ্ঠিত হয়। বহু গ্রাম-গঞ্জ-শহরে দলের রক্তপতাকা উত্তোলন সহ দলের প্রতিষ্ঠাতা কমরেড শিবদাস ঘোষের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়।
গুয়াহাটিতে জনসভাঃ এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ২৪ এপ্রিল দলের আসাম রাজ্য কমিটির আহ্বানে গুয়াহাটির ভাস্কর নাট্যমন্দির প্রেক্ষাগৃহে রাজ্যভিত্তিক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বক্তা ছিলেন দলের পলিটবুরো সদস্য কমরেড অসিত ভট্টাচার্য। সভা পরিচালনা করেন আসাম রাজ্য কমিটির সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড চন্দ্রলেখা দাস।
কমরেড অসিত ভট্টাচার্য বলেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের আপসহীন ধারার মহান নেতা, এ যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাক্সর্বাদী দার্শনিক ও চিন্তানায়ক, সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষ দেখিয়েছেন, দেশ রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতা অর্জন করলেও জনসাধারণের কাঙিক্ষত গণমুক্তি আসেনি। তার বদলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। জনজীবনে সৃষ্টি হওয়া শ্বাসরোধকারী সমস্যার মূল কারণ পুঁজিবাদী শাসন-শোষণ। কমরেড শিবদাস ঘোষ সেদিন ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছিলেন, কমিউনিস্ট নামধারী সিপিআই দলটি প্রকৃত কমিউনিস্ট দল হিসেবে গড়ে না ওঠার ফলে স্বাধীনতা আন্দোলনে সঠিক ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়, একের পর এক অমাক্সীয় সিদ্ধান্তের দ্বারা মাক্সর্বাদ-লেনিনবাদ বিষয়ে তাদের অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে। স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রকৃত গণমুক্তি অর্জন করতে হলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক তত্ত্বের ভিত্তিতে সঠিক কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলা। এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার নিয়ে ২৫ বছরের যুবক শিবদাস ঘোষ ১৯৪৮ সালের ২৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দল। এই দল আজ সঠিক রাজনৈতিক লাইনের ভিত্তিতে দ্রুত দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। অন্য দিকে কমিউনিস্ট নামধারী দলগুলো ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। গণমুক্তি অর্জনের জন্য কমরেড ভট্টাচার্য দ্রুত এস ইউ সি আই (সি)-কে শক্তিশালী করতে মেহনতি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, মদ ও মাদক দ্রব্যের ব্যাপক প্রসার, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র ও অবাধ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
দিল্লিঃ দিল্লির পশ্চিম জেলা সাংগঠনিক কমিটির পক্ষ থেকে জাহাঙ্গিরপুরিতে জনসভার আয়োজন করা হয়। শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, মহিলারা এই সভায় যোগ দেন। জনজীবনের সমস্যা নিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেন নীতু খন্না। সমর্থনে বক্তব্য রাখেন কমরেডস প্রকাশ দেবী, ঋতু কৌশিক, কমরেড অমরজিৎ। প্রধান বক্তা দিল্লি রাজ্য সংগঠনী কমিটির সদস্য কমরেড হরিশ ত্যাগী বলেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও মানুষের জীবনের দুর্দশা দেখিয়ে দিচ্ছে এই পুঁজিবাদী সমাজটাকে না বদলালে যথার্থ গণমুক্তি অর্জিত হবে না। তিনি সাম্প্রদায়িকতা, জাত-পাত নিয়ে হানাহানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের উন্নত উপলব্ধি–কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারা অনুশীলনের কথা বলেন।
মধ্যপ্রদেশঃ মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে আগরওয়ালা ধর্মশালার সভায় জেলার বহু ব্লক থেকে আগত কর্মী সমর্থকরা অংশ নেন। প্রধান বক্তা ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড রচনা আগরওয়াল। তিনি মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আহ্বান জানান। রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড লোকেশ শর্মা তেলের দাম কমানোর দাবি তোলেন। সভাপতিত্ব করেন জেলা সম্পাদক কমরেড মনীশ শ্রীবাস্তব। সভা সঞ্চালনা করেন জেলা কমিটির সদস্য কমরেড সঙ্গীতা আর বি।
ত্রিপুরাঃ ২৪ এপ্রিল এসইউসিআই(সি)-র ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আগরতলা প্রেস ক্লাবে এক সভা হয়। শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সভার সভাপতি কমরেড মলিন দেববর্মা। পরে রাজ্যের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজ্য সম্পাদক কমরেড অরুণ ভৌমিক। প্রধান বক্তা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মানব বেরা বলেন, ‘বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়ে এবং এ দেশে কমিউনিস্ট নামধারী দলগুলির ধারাবাহিক মাক্সর্বাদবিরোধী কার্যকলাপের পরিণামে সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে মাক্সর্বাদ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ও হতাশা সৃষ্টি করেছে। তা দূর করতে সংশোধনবাদীদের আক্রমণকে প্রতিহত করতে এবং মাক্সর্বাদী আদর্শের অভ্রান্ততা ও মহত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে, শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার প্রচার ও অনুশীলন আজ একান্ত অপরিহার্য।
গুজরাটঃ ২৪ এপ্রিল গুজরাটের সুরাট শহরের ‘শ্রমজীবী’ হলে ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শ্রমজীবী মানুষের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল। সভাপতিত্ব করেন দলের গুজরাট সাংগঠনিক কমিটির সম্পাদিকা কমরেড মীনাক্ষী জোশী। শুরুতে বক্তব্য রাখেন রাজ্য সাংগঠনিক কমিটির সদস্য কমরেড সত্যেন্দ্র সিং। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড দেবাশিস রায়। সভা শেষে সুরাট স্টেশনের সামনে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
উত্তরপ্রদেশঃ উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে জেলা কমিটির পক্ষ থেকে রামচন্দ্র জুনিয়র হাইস্কুলে জনসভায় বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড স্বপন চ্যাটার্জী এবং উত্তরপ্রদেশ পূর্ব রাজ্য সাংগঠনিক কমিটির সদস্য কমরেড জগন্নাথ বর্মা, কমরেডস মিথিলেশ কুমার মৌর্য, দিলীপ কুমার। সভাপতিত্ব করেন কমরেড রাজ বাহাদুর মৌর্য।
এলাহাবাদ, সুলতানপুর, বালিয়া, প্রতাপগড়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। বারাণসীর সিগ্রায় এবার প্রথম দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপিত হল। সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ সংগঠক কমরেড মোহন রাই। পরিচালনা করেন বারাণসী-মোগলসরাই ইনচার্জ কমরেড কমলেশ মৌর্য। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমরেড জুবের রব্বানি।
মহারাষ্ট্রঃ ২৬ এপ্রিল নাগপুরে অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শঙ্কর দাশগুপ্ত। দলের নাগপুর সংগঠনী কমিটির সম্পাদক কমরেড বিজেন্দ্র রাজপুতও বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন নাগপুর সংগঠনী কমিটির সদস্য কমরেড বিদ্যা গুরমুলে।
ওয়ার্ধার পুলফেলে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৯ এপ্রিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। নাগপুর সংগঠনী কমিটির সদস্য কমরেড মাধুরী নিকুরে সভা পরিচালনা করেন। প্রধান বক্তা ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শঙ্কর দাশগুপ্ত।
৩০ এপ্রিল ইয়তমালে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন কমরেড শঙ্কর দাশগুপ্ত। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন নাগপুর সংগঠনী কমিটির সদস্য বিজয়েন্দ্র রাজপুত। সভাপতিত্ব করেন ইয়তমাল ইউনিট ইনচার্জ কমরেড প্রমোদ কাম্বলে।