কৃষকের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইনসঙ্গত করে সরকারকে সরাসরি চাষির কাছ থেকে ফসল কেনা সহ দশ দফা দাবিতে ২০ সেপ্টেম্বর রাজভবন ও উত্তরকন্যা অভিযান করবে এআইকেকেএমএস।
সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক গোপাল বিশ্বাস বলেন, দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের চাপে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তিনটি কালা কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু কৃষকের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা তারা কার্যকর করেনি। ফলে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার সার, বীজ, কীটনাশক, ডিজেল সহ চাষের সমস্ত উপকরণ মুনাফাখোর একচেটিয়া পুঁজিপতি শ্রেণির হাতে তুলে দিয়েছে এবং সরকারি মদতে তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে চাষের খরচ ক্রমাগত বাড়ছে কিন্তু ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না পাওয়ায় কৃষক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং অনেকে বেদনাদায়ক আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। তাছাড়া খরা, বন্যা সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতিতে, শস্য বিমা থাকা সত্তে্বও বিমা কোম্পানির স্বার্থে রচিত সরকারি নীতির ফলে ফসলের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।
বৃষ্টি কম হওয়ায় জলের অভাবে পাট পচানো যাচ্ছে না। কোটি কোটি টাকার পাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের এই ক্ষতিতে সাহায্য করার জন্য সরকারের টাকা নেই, কিন্তু হাতে গোনা গুটিকয়েক কর্পোরেট শিল্পপতিকে ১১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে সাহায্য করার বেলায় বিজেপি সরকারের টাকার অভাব হয় না। খেতমজুরের সারা বছরের কাজের কোনও ব্যবস্থা নেই। এনরেগা প্রকল্পে জব কার্ডে একশো দিনের কাজ দেওয়ার গ্যারান্টি থাকলেও বছরে তারা এক মাসও কাজ পায় না, দৈনিক মজুরি পুরুষদের ক্ষেত্রে মাত্র ২১৩ টাকা ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৯৩ টাকা, তাও আবার অনেক ক্ষেত্রে এক বছরের মজুরির টাকা বাকি।
এই অবস্থায় একে তো অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির চাপে গরিব মানুষের বেঁচে থাকাই দায়, তার উপর কেন্দ্রীয় সরকার চাল, আটা, মুড়ি সহ সমস্ত প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যের ওপর জিএসটি চাপিয়েছে এবং বিদ্যুৎ বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে ‘বিদ্যুৎ বিল ২০২২’ পার্লামেন্টে পেশ করে অস্বাভাবিক হারে মাশুল বৃদ্ধি করতে চাইছে।
সঠিক আন্দোলনই কৃষকদের দাবি আদায়ের একমাত্র পথ। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর এমএসপি সহ অন্যান্য দাবিতে দিল্লিতে এক মহতী কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দেশের বিশিষ্ট কৃষক নেতারা ও কৃষি-বিজ্ঞানী সহ অনেক বুদ্ধিজীবী আলোচনা করবেন। ওইদিন দেশের সমস্ত রাজ্যের রাজধানী শহরে বিক্ষোভ, সমাবেশ, ডেপুটেশন সহ কৃষকদের নানা কর্মসূচি পালিত হবে।
দাবিসমূহঃ ১) কৃষকের ফসলের এমএসপি আইনসঙ্গত করে সরকারকে সরাসরি চাষির কাছ থেকে ফসল কিনতে হবে। ২) সারের কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে। ৩) স্বল্পমূল্যে চাষিকে সার, বীজ, কীটনাশক, ডিজেল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। ৪) খরা-বন্যা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। ৫) খরা-বন্যায় ফসলের ক্ষতিতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৬) জব কার্ডে বছরে ২০০ দিন কাজ ও ৪০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। ৭) পান চাষকে কৃষি হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পান বিক্রিতে ফোড়ে রাজের দাপট বন্ধ করতে হবে। ৮) পাটের দাম কুইন্টাল প্রতি ১২০০০ টাকা দিতে হবে এবং জেসিআই-কে সরাসরি চাষির কাছ থেকে পাট কিনতে হবে। ৯) চা চাষকে কৃষি হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং মধ্য চা-চাষির মতো ক্ষুদ্র-প্রান্তিক চাষিকেও সমস্ত উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে। ১০) জুট কর্পোরেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল গঠন করে রাজ্য সরকারকে চাষির পাট কেনার ব্যবস্থা করতে হবে।