মোদি শাসনে সরকারি সংস্থাগুলিতেও কর্মীসংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ কমানো হয়েছে

 

রাজ্যসভায় দেওয়া এক ভাষণে গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে জানিয়েছেন, গত দশ বছরে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলি শক্তিশালী হয়েছে। শেয়ার বাজারে তাদের শেয়ারের দাম বেড়েছে। অথচ এর মাত্র কয়েকমাস আগে গত জুনে ‘পাবলিক এন্টারপ্রাইজেস সার্ভে রিপোর্ট’-এর যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, গত দশ বছরে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলিতে নিয়োগ বিপুল ভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, যেটুকু কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে গেছে, তার বেশিরভাগটাই আবার চুক্তির ভিত্তিতে কাজ, অর্থাৎ অস্থায়ী চাকরি।

পাবলিক এন্টারপ্রাইজেস সার্ভে রিপোর্ট দেখাচ্ছে, সরকারি এই সংস্থাগুলিতে ২০১৩-র মার্চে যেখানে কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ১৭.৩ লাখ, ২০২২-এর মার্চে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪.৬ লাখে। অর্থাৎ কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে মোট ২ লক্ষ ৭০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে।

রিপোর্টে আরও দেখা যাচ্ছে, শুধু লোকসানে চলা সংস্থাগুলোতেই নয়, যে সব সংস্থা যথেষ্ট মুনাফা করছে, সেখানেও কমানো হয়েছে কাজের সুযোগ। এর পাশাপাশি, স্থায়ী কর্মচারীর বদলে সরকারি সংস্থাগুলিতে বেড়েছে চুক্তিতে নিয়োগের পরিমাণ। ২০১৩-তে চুক্তিতে নিযুক্ত ছিলেন ১৭ শতাংশ কর্মচারী। ২০২২-এ চুক্তি-কর্মচারী বেড়ে পৌঁছেছে ৩৬ শতাংশে। বেড়েছে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মীর সংখ্যাও। ২০২২-এ চুক্তি-কর্মচারী ও দিনমজুররা মোট কর্মচারীর প্রায় ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছেন, ২০১৩-তে যা ছিল ১৯ শতাংশ।

বেকার সমস্যায় দেশ জেরবার। কর্মহীনতার হার অতীতের সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪ সালে প্রথমবার কেন্দ্রে সরকারে বসার আগে নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রতি বছর ২ কোটি বেকারকে কাজ দেবেন। সে সব প্রতিশ্রুতি যে স্রেফ ভোটের লক্ষ্যে কিছু কথার কথা ছিল, মানুষ এতদিনে তা বুঝে গেছে। ফলে সে আশা মানুষ আর করে না। এটাও সত্য যে, যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা দেশে কায়েম রয়েছে, তার নিজস্ব নিয়মে দেশে নতুন শিল্প কল-কারখানা হওয়া দূরে থাক, ক্রমাগত সে সব বন্ধ হচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে। এই অবস্থায় একটা সরকারের তো উচিত দেশের বিপুল সংখ্যক বেকারের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করা! কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিজেপি সরকার, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলিতে পর্যন্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ ব্যাপক মাত্রায় ছাঁটাই করছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থায়ী পদগুলিকে চুক্তিভিত্তিক তথা অস্থায়ী করে ফেলছে। যুবসমাজের উন্নয়ন নিয়ে অবিরাম গলা ফাটান যাঁরা, সেই প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সঙ্গীরা বাস্তবে তা নিয়ে কতখানি আন্তরিক, এই পরিসংখ্যানই তা স্পষ্ট করে দেয়। এটাই আসলে নরেন্দ্র মোদির ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’-এর নমুনা!