ভারতকে ডব্লুটিও ছাড়তে হবে দাবি কৃষক আন্দোলনে

হরিয়ানার রোহটকে কৃষক-শহিদ স্মরণে বক্তব্য রাখছেন এআইকেকেএমএস-এর সর্বভারতীয় সভাপতি, দলের পলিটবুরো সদস্য কমরেড সত্যবান।

হরিয়ানার বিজেপি সরকারের পুলিশ কৃষক আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যা করে শুভকরণ সিং নামে এক তরুণ কৃষককে। প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের সমস্ত রাজ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করে প্রতিবাদ দিবস পালন করে কৃষক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ সংযুক্ত কিসান মোর্চা। দেশজুড়ে কৃষক শহিদের স্মরণে বেদি স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ২৩টি রাজ্যে এআইকেকেএমএস-এর উদ্যোগে দিনটি পালিত হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি মোর্চার ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ও সাধারণ পরিষদের যৌথ সভার পর কৃষক নেতারা এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন—সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে উচ্চস্তরের তদন্ত, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ও দোষী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে এসকেএম-এর অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে উপস্থিত ছিলেন মোর্চার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও এআইকেকেএমএস-এর সর্বভারতীয় সভাপতি কমরেড সত্যবান।

সংযুক্ত কিসান মোর্চার ডাকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘ডব্লুটিও ছাড়ো’ দিবস পালিত হয়। নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, সংযুক্ত আবুধাবিতে ২৬ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লুটিও)-র দেশগুলির মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনে ভারত সরকারকে বলতে হবে– কৃষিকে ডব্লুটিও-র চুক্তির আওতার বাইরে রাখতে হবে, না হলে ভারত ডব্লুটিও ত্যাগ করবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে এমএসপি নিষিদ্ধ করা ও খাদ্যের গণবন্টন ব্যবস্থায় সরকারি ভর্তুকি তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে শক্তিশালী পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি। ভারত সরকারেরতার কাছে নতি স্বীকার করা চলবে না। জনগণের খাদ্য সুরক্ষা ও দেশের কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য সরকারকে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। সরকারি তরফে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও গণবন্টনের জন্য তা মজুতের পরিমাণ ২০৩৪-এর মধ্যে অর্ধেক করতে হবে বলে বৃহৎ কৃষিপণ্য রপ্তানিকারী দেশগুলি চাপ দিচ্ছে। এই নীতি চালু হলে গণবন্টনের জন্য সরকারের কৃষিপণ্য কেনা বন্ধ হয়ে যাবে, রেশনে খাদ্য দেওয়ার বদলে অল্প কিছু মানুষকে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সাহায্য দেওয়া চালু হবে। ফলে খাদ্য ও কৃষিপণ্য পুরোপুরি খোলা বাজারে বৃহৎব্যবসায়ীদের কবলে চলে যাবে। কৃষকদের এমএসপি-র দাবি, খরচের দেড়গুণ ফসলের দাম নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কোনও দায় থাকবে না। ইতিমধ্যেই ঋণ এবং অন্যান্য সমস্যায় জর্জরিত ভারতীয় কৃষকরা আরও বেশি দুর্দশায় পড়বেন। এই সর্বনাশ আটকাতে ভারত সরকারকে অন্যান্য অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলির সাথে মিলে বৃহৎ শক্তিগুলির চাপের মোকাবিলা করতে হবে।

মজজফরপুর বিহার

নরেন্দ্র মোদি সরকার বৃহৎ পুঁজিমালিক কর্পোরেটদের স্বার্থে যে কৃষিনীতি নিয়েছে তা এই ডব্লুটিও-র নীতির সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। এসকেএম দাবি জানিয়েছে, ২০২১-এর ৯ ডিসেম্বর কৃষকদের কাছে দেওয়া কৃষকদের ন্যায্য এমএসপি-র দাবি মেটানোর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি থেকে কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তির অজুহাত দিয়ে সরকার পালিয়ে যেতে পারবে না। নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন, সরকারের পক্ষ থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ আবশ্যিক করতে ও এমএসপিকে আইনসঙ্গত করতে কৃষকদের সংগ্রাম আরও তীব্র হবে।