রাজ্যের মিড ডে মিল কর্মীরা এক অসহনীয় অবস্থার সম্মুখীন। রাজ্যে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আড়াই লক্ষেরও বেশি মিড ডে মিলকর্মী রান্নার কাজ করেন। বেতন মাত্র ১৫০০ টাকা। এই সামান্য টাকাও দেওয়া হয় বছরে ১০ মাস। পেনশন, পিএফ, অবসরকালীন ভাতা প্রভৃতি কোনও রকম সামাজিক সুযোগ-সুবিধা তাঁদের নেই।
অন্যান্য রাজ্যে বারো মাসের বেতন সহ অন্য সুযোগ-সুবিধা বেশি। যেমন হরিয়ানায় ৭০০০ টাকা, কেরালায় ৬০০ টাকা দৈনিক, পুদুচেরিতে ১২০০০ টাকা, হিমাচল প্রদেশে ৪ হাজার টাকা। তামিলনাড়ু সরকার বোনাস, ভাতা, সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা সহ দেয় ১০ হাজার ৮৩ টাকা।
প্রকল্পটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রয়াসে চলে। কেন্দ্র দেয় মাত্র ৬০০ টাকা। বর্তমানে মিড-ডে মিল প্রকল্পের নাম বদলে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নামে পিএম পোষণ যোজনা করা হলেও কর্মীদের বেতন সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পরিবর্তন হয়নি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পুষ্টিকর খাবারের জন্য বরাদ্দ এক পয়সাও বাড়েনি। রাজ্য সরকারও ২০১৩ সাল থেকে এক পয়সাও বেতন বাড়ায়নি।
এই কাজের জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গোষ্ঠীগুলির সদস্য সংখ্যা দশ বা তারও বেশি হয়। এই সামান্য টাকাও তাদের ভাগাভাগি করে নিতে হয়। ১০০ জন ছাত্র পিছু রান্নার জন্য একজন কর্মী নিয়োগ করা হয়। রান্না করলেও কর্মীদের আইনত খাওয়ার অধিকার নেই। শ্রমের মূল্য থেকে, সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত কর্মীদের জীবন-জীবিকার দুঃসহ যন্ত্রণার কথা জেনেও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার তাঁদের দাবিগুলি মানছে না।
কেন্দ্রীয় সরকার বাজেটে বারবার প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে যাচ্ছে এবং প্রকল্পকে সুকৌশলে তুলে দেওয়ার ও বেসরকারিকরণ করার চক্রান্ত করছে।এ রাজ্যে মিথ্যা অভিযোগে যখন তখন এই কর্মীদের বা গ্রুপকে বেআইনিভাবে ছাঁটাই করে দেওয়া হচ্ছে। ভারতের শ্রম আইন অনুযায়ী কাউকে কাজ করালে তার প্রাপ্য মজুরি দিতে হয়। অথচ কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকার মিড-ডে মিল কর্মীদের কাজ করিয়েও বেতন না দিয়ে বহু সংগ্রামে অর্জিত অধিকার ও আইন ভেঙে চলেছে।
এই অবস্থায় ১০ ডিসেম্বর সারা বাংলা মিড ডে মিল কর্মী ইউনিয়ন ‘দাবি দিবসে’র ডাক দেয়। সে দিন হাওড়ার উলুবেড়িয়া মহকুমার কর্মীরা স্টেশন চত্ত্বরে জমায়েত হয়ে মিছিল করে উলুবেড়িয়া মহকুমা অফিসে এসে বিক্ষোভ দেখান এবং ডেপুটেশন দেন। নেতৃত্ব দেন মিড-ডে মিল কর্মী ইউনিয়নের হাওড়া গ্রামীণ জেলা সম্পাদিকা- সাগরিকা বর্মন, শম্পা দেবনাথ ও মঞ্জু বিদ্যা। মহাকুমার শাসক জানান, দাবিগুলি পূরণের উদ্দেশ্যে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন।