সংগ্রাম চলবে যতদিন না সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় ভগৎ সিং
অন্যায়ের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান সমাজব্যবস্থাকে পরিবর্তিত করার জন্যই বিপ্লব আমাদের চাই৷ উৎপাদন যারা করেন অর্থাৎ শ্রমিক মানব সমাজের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷ অথচ শোষক শ্রেণি তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে৷ একদিকে, সকলের মুখের অন্ন উৎপাদন করছে যে কৃষক সে সপরিবারে উপবাসে মরছে, যে তন্তুবায় কাপড় বুনে সারা পৃথিবীর বাজার পূর্ণ করে দিচ্ছে, তার নিজের ঘরে নিজের এবং শিশুর শরীরটুকু ঢাকা দেওয়ার উপযুক্ত বস্ত্রখণ্ড জোটে না৷ রাজমিস্ত্রি, কর্মকার এবং সূত্রধর অপরূপ প্রাসাদ নির্মাণ করছে, কিন্তু তাদের নিজেদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে নোংরা বীভৎস বস্তির অন্ধকারে৷
অন্যদিকে পুঁজিপতি, শোষক, সমাজে যারা ঘুণ পোকার অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে আছে, তারা নিজেদের লিপ্সা চরিতার্থ করতে কোটি কোটি টাকা জলের মতো খরচ করছে৷ এই ভয়ঙ্কর বৈষম্য এবং আত্মবিকাশের অধিকারের ক্ষেত্রে মিথ্যা সমানাধিকারের বাণী সমাজকে এক মাৎস্যন্যায়ের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে৷ এই পরিস্থিতি কখনওই চিরস্থায়ী হতে পারে না৷ বরং এটা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, আজকের সমাজব্যবস্থা আত্মবিস্মৃত আনন্দে এক অগ্নিগর্ভ পর্বতের জ্বালামুখের উপর বসে আছে, এবং কোটি কোটি শোষিত মানুষের শিশু–সন্তানদের সঙ্গে শোষকবর্গের ঘরের অবোধ শিশুরাও এক বিপজ্জনক গভীর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে৷ যদি সময় থাকতে মানবসভ্যতার কাঠামোকে রক্ষা করা না যায়, তবে তা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এই জন্যই বিপ্লব অত্যাবশ্যক৷ যারা এই প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করেন তাঁদের কর্তব্য হল মানবসমাজকে সমাজতান্ত্রিক ভিত্তির উপর পুনর্গঠিত করা৷ যতদিন না তা করা যাবে, যতদিন মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণ, এক রাষ্ট্রের দ্বারা অপর রাষ্ট্রের শোষণ– যাকে আমরা সাম্রাজ্যবাদ বলি, তা বজায় থাকবে, ততদিন এর থেকে ঊদ্ভূত যন্ত্রণা এবং অপমান থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করা যাবে না যুদ্ধের চূড়ান্ত অবসান এবং বিশ্বে সার্বভৌম শান্তির যুগের সূচনা করার সমস্ত প্রয়াস ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে৷ বিপ্লব আমরা চাই অন্তত এমন একটা সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যেখানে এরকম প্রাণঘাতী বিপদের সম্মুখীন হতে হবে না, এবং যেখানে সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে৷ এর ফলে বিশ্ব মানবসমাজকে পুঁজিবাদের শৃঙ্খল এবং যুদ্ধের সর্বনাশা সংকট থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে৷ আমরা চাই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব৷