বিশ্বভারতী-উপাচার্যের স্বৈরাচারের  প্রতিবাদ এআইডিএসও-র

 

২১ আগস্ট সারা রাজ্যে বিশ্বভারতী সংহতি দিবস পালন করল এআইডিএসও। কেন্দ্রীয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজেপির মদতপুষ্ট উপাচার্য একের পর এক ছাত্রস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছেন। ব্যাপক ফি বৃদ্ধি, গবেষকদের ভাতা বন্ধ রাখা, গুন্ডা লাগিয়ে ছাত্র পেটানো, ২৬ জানুয়ারি তাঁর বত্তৃতার ভিডিও করার জন্য এক ছাত্রকে হোস্টেল থেকে বহিষ্কার, ক্যাম্পাসে আধাসেনা মোতায়েনের চেষ্টা, যত্রতত্র কংক্রিটের পাঁচিল তোলা, পৌষমেলার মাঠ ঘিরে ফেলা, ঐতিহ্যবাহী আলাপিনী মহিলা সমিতির ঘর কেড়ে নেওয়া, সেন্ট্রাল অফিস চত্বরকে ‘নো ডিস্টার্ব জোন’-এ পরিণত করে ছাত্র আন্দোলনে লাগাম পরানোর চেষ্টা, কনভোকেশন সহ ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে বিজেপির দলীয় লোকজনকে আমন্ত্রণ, অমর্ত্য সেন সহ আশ্রমিকদের প্রতি রুচিহীন কদর্য আচরণ, অনৈতিকভাবে কর্মী ছাঁটাই ও বদলি, সিএএ নিয়ে প্রচার করতে বিজেপি সাংসদকে আমন্ত্রণ, ‘পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের কারণ’ শীর্ষক রাজনৈতিক সভার আয়োজন, পৌষমেলায় দোকান ভাঙচুর, প্রাতিষ্ঠানিক বেনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার জন্য এক অধ্যাপককে সাসপেন্ড করা, অধ্যাপকদের প্রতি উপাচার্যের অশোভন আচরণ ও তাঁদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার বিরুদ্ধতা করায় প্রতিবাদকারীদের শো-কজ ও কয়েকজনকে সাসপেন্ড করা, গবেষক ও অধ্যাপকদের ভবনে ও গবেষণাগারে প্রবেশ ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি স্বেচ্ছাচারী অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ ধারাবাহিকভাবে উপাচার্য গায়ের জোরে চাপিয়ে দিয়েছেন। উপাচার্যের এইসব স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাতে প্রতিবাদ গড়ে উঠতে না পারে, সেই জন্য ছাত্র-গবেষক-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের প্রতি দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে আতঙ্কের বাতাবরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কোনও অধ্যাপক-শিক্ষাকর্মী সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে পারবেন না– এমন তালিবানি ফতোয়াও তিনি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ক্ষমতার দম্ভে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সাসপেন্ড হওয়া তিন ছাত্রছাত্রীর সাসপেনশন-এর মেয়াদ অনৈতিকভাবে আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগেই অনলাইন মিটিংয়ে সর্বসমক্ষে ঘোষণা করেছেন, সাসপেন্ড হওয়া ছাত্রছাত্রীদের তিনি বহিষ্কার করেই ছাড়বেন। বিশ্বভারতীতে উপাচার্যের এই স্বৈরাচারী কার্যকলাপ বাংলার শিক্ষাজগতে বেমানান।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মদতপুষ্ট হয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী সহ সমগ্র রাজ্যে ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষানুরাগী মহল সোচ্চার। তাঁরা বদ্ধপরিকর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন, গবেষণা, মুক্ত শিক্ষা ও চিন্তার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শেষ পর্যন্ত লড়বেন।

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ৫ সংখ্যা (২৭ আগস্ট ২০২১)