এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ১৫ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিমদের ওপর যে নৃশংস গণহত্যা চলেছিল তাতে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই নৃশংস ঘটনায় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে বিবিসির তৈরি দুই পর্বের তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়াঃ দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’-এর সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারপরেই বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাইয়ের দফতরে আয়কর হানার ঘটনা আরও একবার দেখিয়ে দিল যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কোনও সমালোচনা করা হলে, বিজেপি শাসিত ভারতে ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী শাসক কীভাবে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা চালায়।
২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে সরকারের সমালোচনা করার পরেই বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম কর-তদন্তকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে, যা থেকে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের অস্তিত্বই বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালে কোভিড অতিমারির সময় প্রথম সারির হিন্দি সংবাদপত্র ‘দৈনিক ভাস্কর’ প্রথম পাতায় জ্বলন্ত চিতার ছবি ছাপে ও গঙ্গায় ভেসে যাওয়া শবদেহ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে। তারা অতিমারি সম্পর্কে ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে সরকারি বক্তব্যকেও বারবার প্রশ্নের মুখের দাঁড় করায়। এর পরে পরেই দেশের কর-কর্তৃপক্ষ সংবাদপত্রটির প্রতিটি দফতরে হানা দেয়। সমস্ত বিবেকবান সাংবাদিক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল এ কাজের তীব্র নিন্দা করে বলেন, অতিমারি নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যর্থতার বিরুদ্ধে সংবাদপত্রটির আপসহীন ভূমিকার পাল্টা প্রতিশোধ নিতেই এই হানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ সংগ্রহের অজুহাত তুলে ‘নিউজ ক্লিক’ নামের একটি ওয়েব পত্রিকার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট)।
এইভাবে নিজের হাতে থাকা দমন-পীড়নের অস্ত্রগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকার ব্যবহার করছে। এই কাজে রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, সাম্প্রদায়িক ঐক্যহানি, শান্তিভঙ্গ ইত্যাদির মতো অভিযোগের পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলা আইন, ভয়ঙ্কর ইউএপিএ, তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রভৃতি ব্যবহার করা হচ্ছে। অক্সফ্যাম ও আরও কয়েকটি সমীক্ষক সংস্থায় কর দফতর হানাদারি চালিয়েছে। ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্রমাণ তুলে ধরেছে যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্তৃপক্ষ এ দেশে তাদের অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ করে দেওয়ায় ২০২০ সালে তারা ভারতে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতীয় সাংবাদিকরা ও সংবাদসংস্থাগুলির উপর লাগাতার প্রকাশ্য বা প্রচ্ছন্ন হুমকি, নানা ধরনের চাপ, তাদের তদন্তের মুখে ফেলার চাপ, নানা আর্থিক চাপের অভিযোগ উঠছে। এ থেকেই বোঝা যায় ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর মূল্যায়নে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারত কেন পিছিয়ে ১৩৮তম স্থানে পৌঁছেছে। ‘নির্দেশ মতো চলো, নয়তো ধ্বংস হও’– সংবাদমাধ্যমের প্রতি মোদি সরকারের এই হল স্পষ্ট বার্তা।
কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেন, রাজনৈতিক প্রতিশোধ স্পৃহায় সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের জন্য সরকারি সংস্থাগুলিকে অপব্যবহার করে পেশিশক্তির আস্ফালন চলছে। এই কাপুরুষোচিত অপকর্মের আমরা তীব্র নিন্দা করছি। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে যাঁরা আছেন ও গণতান্ত্রিক মানসিকতাসম্পন্ন সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এই কর্তৃত্ববাদী মানসিকতাকে প্রতিহত করতে হবে।