বিদ্যুৎ ভবনে তুমুল গ্রাহক বিক্ষোভ

 

৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সহস্রাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক সল্টলেকে বিদ্যুৎ ভবনের মূল গেট অবরোধ করে তিন ঘণ্টা ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখালেন। তাঁদের অভিযোগ বহু জায়গায় বাঁশের খুঁটিতে তার বেঁধে বিপজ্জনকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে রাজ্য সরকারি সংস্থা রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি (এসইডিসিএল)। অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন (অ্যাবেকা)-র ডাকে ওইদিন তাঁরা এসেছিলেন বণ্টন কোম্পানির চেয়ারম্যানের কাছে ১২ দফা দাবি পেশ করতে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, রাজ্যের ২৩টির মধ্যে ১১টি জেলার হিসাব ধরলেই প্রায় ৭ লক্ষাধিক মিটার বন্ধ অথবা খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে ওই মিটারগুলি পরিবর্তন না করে গ্রাহকদের কাছে থেকে গড় বিলের নামে বাড়তি টাকা নেওয়া চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার প্রায় ৫ হাজার কৃষি-বিদ্যুৎ গ্রাহককে বাঁশের খুঁটি পুতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বহু এলাকায় গৃহস্থ গ্রাহকদেরও বাঁশের খুঁটিতে তার খাটিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। শত শত গ্রাহকদের কাছে থেকে নতুন সংযোগের কোটেশনের টাকা নিয়েও বিদ্যুৎ সংযোগ সময় মতো না দিয়ে ফেলে রাখা চলছেই।

সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, রাজ্য সরকার মনোনীত ওমবুডসম্যানের আদেশ হাতে নিয়ে গ্রাহকরা এ অফিস ও অফিস ঘুরছেন, কিন্তু কোম্পানি সে আদেশ কার্যকর করছে না। নির্ধারিত পরিষেবা না দেওয়ার কারণে ওমবুডসম্যান গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণের আদেশ দিলেও কোম্পানি তা দেয়নি। এই নিয়ে মামলায় বণ্টন কোম্পানি হাইকোর্টে পরাজিত হয়েছে এবং ক্ষতিপূরণের টাকা না দেওয়ায় আদালতে কোম্পানির ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। তবুও তারা টাকা দিতে গ্রাহকদের হয়রানি করে চলেছে। কোম্পানির অনেক কাস্টমার কেয়ার সেন্টার গ্রাহকদের অভিযোগপত্র পর্যন্ত গ্রহণ করে না। সম্প্রতি দুয়ারে সরকার প্রকল্পে গ্রাহকদের কাছে থেকে টাকা জমা নিয়েও নতুন কানেকশন বা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নদের পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ করে দেওয়া হয়নি।

সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুব্রত বিশ্বাস বলেন, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার গ্রাহক স্বার্থবিরোধী স্মার্ট বা প্রিপেড মিটার লাগানোর তোড়জোড় করছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বরাদ্দ যোগ করে রাজ্যে ৩৭ লক্ষ স্মার্ট মিটার কেনা হয়েছে। যে সরকার রাজ্যের লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের খারাপ মিটার টাকার অভাব দেখিয়ে পরিবর্তন করতে পারছে না, তারা কার স্বার্থে অনেক বেশি টাকা খরচ করে স্মার্ট মিটার কিনছে? এই স্মার্ট মিটার চালু হলে রাজ্যের ২৭ হাজার মিটার রিডারের চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা। গ্রাহকদেরও ক্ষতি। তাদের মোবাইলে শুধু টাকার পরিমাণ আর জমা দেওয়ার তারিখ আসবে, কত ইউনিট বিদ্যুৎ গ্রাহক খরচ করেছেন, তার রেট কত–এ সব কিছুই জানানো হবে না। এইভাবে গ্রাহকদের অন্ধকারে রেখে স্মার্ট মিটার বসালে বাস্তবে গ্রাহকরা কোম্পানির লুটের শিকারে পরিণত হবে। অ্যাবেকা রাজ্যের সমস্ত কাস্টমার কেয়ার সেন্টার়ে গ্রাহকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে স্টেশন ম্যানেজারের কাছে ডেপুটেশন ও লাগাতার বিক্ষোভের কর্মসূচি নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাজ্য সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (ডব্লুবিপিডিসি) উৎপাদনের খরচ ইউনিট প্রতি ৭০ পয়সা কমালেও গ্রাহদের জন্য বিদ্যুতের মাশুল কমানো হচ্ছে না। তিনি লেট পেমেন্ট সারচার্জ ব্যাঙ্ক রেটে নেওয়ার দাবি জানান। সংগঠন দাবি জানায়, কৃষিতে বিনামূল্যে ও গৃহস্থের জন্য ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে গ্রাহকরা দাবি জানান, জনবিরোধী বিদ্যুৎ বিল-২০২২ প্রত্যাহার করতে হবে।