দিল্লি থেকে এসে বিজেপি নেতারা প্রতিদিন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার গল্প শোনাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী তো আবার ডবল ইঞ্জিনের গল্প শুনিয়ে গেলেন। এই গল্প কি তাঁরা এ রাজ্যেই প্রথম শোনাচ্ছেন? না। অন্য রাজ্যেও তাঁরা একই গল্প বলেছেন। ত্রিপুরার কথাই ধরা যাক। সেখানেও তাঁরা সোনার ত্রিপুরা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন। বাংলায় ক্ষমতায় এলে কী তাঁরা করবেন, তার হিসেব না হয় পরে নেওয়া যাবে, তার আগে দেখা যাক, ত্রিপুরায় বিজেপির যে ডবল ইঞ্জিনের সরকার গত কয়েক বছর রাজত্ব করছে সেখানে কোন সোনা তাঁরা ফলাচ্ছেন!
ত্রিপুরায় ক্ষমতায় বসার আগে বিজেপি নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁদের জয়ী করলে তাঁরা ৫০ হাজার সরকারি চাকরি দেবেন। রাজ্য জুড়ে ৭ লক্ষ বেকারের কাজের ব্যবস্থা করবেন। যেহেতু ডবল ইঞ্জিনের সরকার, অর্থাৎ কেন্দ্রেও বিজেপি, রাজ্যেও বিজেপি। ফলে অর্থ থেকে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সবেরই নাকি ঢালাও ব্যবস্থা হবে। রাজ্যের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্তু তিন বছর না যেতেই ত্রিপুরাবাসীর এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। আইনশৃঙ্খলার অবনতি চরমে, দুর্নীতি-স্বজনপোষণ মাত্রছাড়া। বিরোধী কণ্ঠস্বরের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। ডবল ইঞ্জিনের আওয়াজ আর শোনা যায় না। সর্বশেষ যে আক্রমণটি বিজেপি সরকার ত্রিপুরায় নামিয়ে এনেছে, সেটিও মারাত্মক। সরকারের ঘোষণা, সরকারি চাকরিতে আর কোনও স্থায়ী নিয়োগ হবে না। সরকার নিজে আর কোনও নিয়োগ করবে না। যতটুকু নিয়োগ হবে, তা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে, চুক্তিভিত্তিক যার মাইনে সহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা থাকবে অত্যন্ত কম। সরকারি দপ্তরে অফিসার, করণিক থেকে গ্রুপ ডি কর্মী সবই নিয়োগ হবে এভাবে। ইতিমধ্যেই এই নির্দেশিকা জারি হয়ে গেছে। ত্রিপুরার বিজেপি সরকার পাঁচটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে প্রয়োজনীয় কর্মী সরবরাহের।
স্বাভাবিক ভাবেই তাতে সরকারি বেতন-কাঠামোর বালাই যে থাকবে না তা তো বলাই বাহুল্য। নির্দেশিকা থেকে স্পষ্ট, এজেন্সি দিয়ে নিযুক্ত কর্মীদের বেতন সরকারি কর্মীদের তিন ভাগের এক ভাগের বেশি হবে না। একজন লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক এখন চাকরির শুরুতেই ৩৪,৪০০ থেকে ৫৬,৯০০ টাকা পান। সেখানে এজেন্সির কর্মীরা পাবেন ৮,৯১৩ টাকা। অর্থাৎ একই কাজ করে এজেন্সির কর্মীরা তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হবেন। শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, সেখানে ভোটের আগে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতিই দু’পায়ে মাড়িয়ে চলছে বিজেপি সরকার। ‘সোনার ত্রিপুরা’ নয়, বরং রাজ্যের মানুষের সাথে প্রতারণার এক ‘ত্রিপুরা মডেল’ তৈরি করেছে বিজেপি। এখানকার ‘সোনার বাংলা’ যে অন্য রকম কিছু হবে না, সে তো এই অভিজ্ঞতা থেকেই বলা যায়!
অনেকেরই মনে আছে কেন্দ্রের গদিতে বসার আগে এই প্রধানমন্ত্রী বছরে ২ কোটি চাকরি, আচ্ছে দিন, সবার বিকাশ প্রভৃতি অজস্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অবশ্য পরে তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব গুলিকে ‘জুমলা’ অর্থাৎ ভুয়ো প্রতিশ্রুতি বলে জানিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, এগুলি ভোটের আগে মানুষকে বলতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর মতো কয়েক মাস আগে এ রাজ্যের বিজেপি নেতারাও ৭৫ লক্ষ চাকরির গল্প দিয়ে শুরু করেছিলেন। সঙ্গে প্রতিশ্রুতি কার্ডও দিয়ে দিচ্ছিলেন। সাধারণ মানুষ অবশ্য এই প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেননি। বরং উল্টে প্রধানমন্ত্রীর ২ কোটি চাকরি সহ সব প্রতিশ্রুতির হিসেব চাইতে শুরু করেন। বিপদ বুঝে বিজেপি নেতারা চাকরির কথা এখন আর মুখে আনছেন না। যদিও রাজ্যকে সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়ার প্রচার তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় মানুষকে ঠিক করতে হবে, তাঁরা বিজেপির এমন জুমলায় বারবার ভুলবেন, নাকি ত্রিপুরার পরিণতি থেকে শিক্ষা নেবেন!