৫ আগস্ট ব্রিগেডের সভায় দলের পলিটবুরো সদস্য কমরেড সত্যবানের ভাষণ
আজ ৫ আগস্ট আমাদের দেশ এবং সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। একশো বছর আগে এই দিনটিতেই সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের জন্ম হয়েছিল। এক বছর ধরে তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান করতে করতে আমরা আজকের এই বিরাট জনসভায় সমবেত হয়েছি। কমরেড শিবদাস ঘোষ মহান মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক, সর্বহারা শ্রেণির প্রিয় নেতা, এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তিনি ভারতের জনসাধারণকে পুঁজিবাদ বিরোধী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের রাস্তা দেখিয়েছেন। কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষাকে বুকে নিয়ে তাঁর জীবনসংগ্রাম এবং মহান চিন্তার প্রেরণা আমাদের সকলকে এখানে সমবেত করেছে।
কমরেড শিবদাস ঘোষ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ভারত স্বাধীন হোক, সমস্ত অন্যায় এবং ভেদাভেদ থেকে ভারত মুক্ত হোক। চেয়েছিলেন, এমন এক সমাজ যেখানে পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদের কোনও স্থান থাকবে না। চেয়েছিলেন, সমাজতন্ত্রের পথে নতুন ভারত গড়তে। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য শত শত মানুষের জীবন কোরবানির ফল আত্মসাৎ করেছে পুঁজিপতি শ্রেণি। দেশের মসনদ তাদেরই দখলে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং শহিদরা শোষণমুক্ত ভারতের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা অধরাই থেকে গেছে। মানুষের মধ্যে ধর্ম, ভাষা, জাতপাত, প্রাদেশিকতা ইত্যাদিকে ভিত্তি করে যত রকমের বিভেদ আছে, স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগুলি দূর হয়ে যাবে এটাই ছিল কাম্য। কিন্তু এর কোনওটাই হতে পারেনি।
কমরেড শিবদাস ঘোষ এর বিরুদ্ধে এক নতুন সংগ্রামের ঝান্ডা তুলে ধরেন, এক নতুন সংগ্রামের তিনি রূপরেখা তৈরি করেন। সমস্ত প্রকারের শোষণ এবং অন্যায় থেকে মুক্তির জন্য সঠিক বিপ্লবী নেতৃত্ব, এক সঠিক বিপ্লবী পার্টি তিনি তৈরি করেছেন। কিন্তু শুধু এটুকু বললেই হবে না, তিনি নিজের হাতে পরম যত্নে হাজার হাজার বিপ্লবী কর্মীকে গড়ে তুলেছেন। এই বিপ্লবী কর্মী-নেতারা আজ দেশের কোণে কোণে জনগণের সমস্ত দুঃখ দুর্দশার অবসানের জন্য তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন। পুঁজিবাদী শোষণ শাসনের অবসানের জন্য তাঁরা সংগ্রাম করে চলেছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলিতে পুঁজিবাদের স্বরূপ এবং সাম্রাজ্যবাদের নতুন রূপকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করেছেন কমরেড শিবদাস ঘোষ। তিনি দেখিয়েছেন, এই যুগে যে কোনও পুঁজিবাদী দেশ, তা অগ্রসর কিংবা পিছিয়ে পড়া হোক না কেন– সর্বত্রই পুঁজিবাদী শাসন ফ্যাসিবাদের রূপ নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রাস্তা দেখানোর মধ্য দিয়ে তিনি শুধু নিজের দেশ ভারতেই নয়, দুনিয়া জুড়ে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনকে তত্ত্বগত ভাবে মজবুত করেছেন। বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের সামনে যত বিভ্রান্তি, বিপদ, ঝড়ঝাপটা এই সময় এসেছে কমরেড শিবদাস ঘোষ গভীর প্রজ্ঞায় তার সমাধানে একটার পর একটা সঠিক রাস্তা তুলে ধরার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে গেছেন। এই কাজ তিনি করতে পেরেছিলেন কারণ, সবচেয়ে উন্নত বিজ্ঞানসম্মত দর্শন মার্ক্সবাদ লেনিনবাদকে তিনি আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন। মার্ক্সবাদকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন, এক সম্পূর্ণ জীবন-দর্শন, জীবনের সর্বদিক ব্যাপী সমস্ত কর্মকাণ্ডের গাইড টু অ্যাকশন হিসাবে। এই সংগ্রামের পথে তিনি মার্ক্সবাদকে আরও সমৃদ্ধ, আরও উন্নত করেছেন।
১৯৭৬-এর এমন এক ৫ আগস্টেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন বাদেই মহান সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দিল্লিতে প্রখ্যাত হিন্দি সাহিত্যিক বিষুiর প্রভাকর রেডিওতে একটি অনুষ্ঠানে কমরেড শিবদাস ঘোষের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, একজন মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক হয়েও শিবদাস ঘোষ সাহিত্য সম্পর্কে যে উন্নত উপলব্ধি রেখেছেন তা দেখে আমি রোমাঞ্চিত, অভিভূত। শুধু রাজনীতি নয়, সাহিত্য প্রসঙ্গেও তিনি পথ দেখাতে পারেন।তিনি বলেন, শিবদাস ঘোষকে জানার পর আমি নতুন করে আবার শরৎসাহিত্য পড়তে শুরু করি। বিষ্ণু প্রভাকর আরও বলেন, তাঁকে একজন হিন্দি সাহিত্যিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, স্বাধীনতার পর ভারতে কোন তিনজন বড় মানুষের কথা আপনি বলতে পারেন? তিনি খুবই শ্রদ্ধার সঙ্গে উত্তর দেন, এই প্রথম তিনজনের অন্যতম হিসাবে কমরেড শিবদাস ঘোষের নাম থাকবেই।
এই মহান বিপ্লবীর নাম এ দেশের পুঁজিবাদী শাসকরা আড়াল করতে চায়। তারা পরিকল্পনা করেই কমরেড শিবদাস ঘোষের নাম জনসাধারণের সামনে আসতে দেয় না। আজকের এই মহতী সমাবেশ সেই ষড়যন্তে্রর পর্দা ফাঁস করে দিয়েছে। আজ সুযোগ এসেছে কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারা তাঁর জীবন সংগ্রামের কথা দুনিয়ার কোণে কোণে পৌঁছে দেওয়ার।
বন্ধুগণ, আমরা যখন এই সভা করছি, আজ দেশের অবস্থা কী! আপনাদের কাছে তা অজানা নয়। স্বাধীনতার সময়েই কমরেড শিবদাস ঘোষ পুঁজিবাদী শাসনের স্বরূপ তুলে ধরে বলেছিলেন, যতদিন যাবে পুঁজিবাদী শাসনের ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতম রূপ ফুটে বেরোবে। সেই ১৯৪৭ থেকে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রই হোক কিংবা কোনও রাজ্যে হোক, যে সরকারই এসেছে তারাই পুঁজিপতিদের তাঁবেদারি করেছে। ব্রিটিশ শাসকরা নিজেদের শোষণের স্বার্থে পুলিশ, মিলিটারি, আইন আদালত সহ রাষ্ট্রযন্ত্রটা তৈরি করেছিল। ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্ট ব্রিটিশের কাছ থেকে ভারতীয় পুঁজিপতিরা এই শোষণ-শাসনের যন্ত্র, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার গদি হাতে নিয়েছিল। আজ দেশ মানে পুঁজিপতিদের স্বার্থ, আজ বিকাশ মানে পুঁজিপতিদের ধনসম্পদের বিকাশ। এ আমরা মানতে পারি না। আমাদের কাছে দেশ মানে দেশের মেহনতি মানুষ– যারা এই দেশের ধন-দৌলত সমস্ত সম্পদ সভ্যতার নির্মাতা। যেদিন ভারতীয় পুঁজিপতিরা এ দেশের ক্ষমতায় বসেছিল, তারা আজকের মতো এত বড় ছিল না। মানুষকে শোষণ করে করে তারা আজ দুনিয়ার প্রথম ১০ জন বড় পুঁজিপতির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। ভারতের পুঁজিবাদ আজ এই উপমহাদেশের সুপার পাওয়ারের রূপ নিয়েছে। কমরেড শিবদাস ঘোষ দেখিয়েছেন, ভারতীয় পুঁজিবাদ আজ সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হয়ে বড় বড় সাম্রাজ্যবাদীদের জুনিয়র পার্টনার হিসাবে নানা দেশে থাবা বসাচ্ছে।
কিন্তু বামপন্থী বলে পরিচিত বন্ধুরা আজও এই দিকটাতে চোখ বুজে আছে। ওরা কোনও দিকে শত্রু দেখতে পায় না। শত্রু এই দিকে থাকলে ওরা ওই দিকে তির ছোঁড়ে, অন্যদিকে লাঠি মারে। ভারতের শোষিত জনসাধারণের শত্রু কে? কারা তাদের দুঃখ-সর্বনাশের কারণ, অন্যায় এবং বিভেদের জন্য কারা দায়ী? এই শত্রু হল পুঁজিবাদী শাসন-শোষণ। আজ পুঁজিবাদ মানুষকে কাজ দিতে পারছে না, শিক্ষা দিতে পারছে না, চিকিৎসা দিতে পারছে না, মান-সম্মান তো দূরের কথা। কোনও ন্যায় দিতে পারে না। এতটুকু শান্তি-স্বস্তি পর্যন্ত দিতে পারে না। যে পুঁজিবাদী সরকারই আসুক না কেন তারা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা জনসাধারণের শেষ রক্তবিন্দুটুকু শুষে নিচ্ছে। আজ পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় আক্রমণ হল, আমাদের দেশে নীতি-নৈতিকতার উপর, ছাত্র-যুব-মহিলাদের উপর এমন আক্রমণ নামিয়ে আনছে যাতে তারা মানুষ হিসাবে গড়ে না ওঠে, মানুষ হয়ে না থাকে। আজ সরকার জ্ঞান-বিজ্ঞান-ইতিহাসকে বিকৃত করছে। সাথে সাথে পুরো দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদ ছড়াচ্ছে, সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করছে। আজ মণিপুর জ্বলছে। জ্বলছে না, জ্বালানো হয়েছে। আপনারা সবই জানেন।
সম্প্রতি হরিয়ানাতে ন্যুহ জেলায় বিজেপি-আরএসএস এর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করা হল। কংগ্রেসের দীর্ঘ শাসনে যে শোষণ-অন্যায় হয়েছিল, একই কাজ করছে আজ বিজেপি। বিজেপি যখন তৈরি হয়, তখন তারা ছোট ব্যবসাদারদের কথা বলত, এখন তারা বড় পুঁজিপতিদের তাঁবেদার। মানুষ ভাবছে, ২০২৪ এলে আমরা এই সরকার ফেলে দেব। পাঁচ রাজ্যে ভোট, সেখানেও ফেলে দেব। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং পুঁজিবাদী প্রচারমাধ্যমে এই প্রচার করা হচ্ছে। বিজেপি সহ যারাই জনসাধারণের উপর অন্যায় শোষণ চালাচ্ছে, অত্যাচার করছে, গোটা সমাজে বিদ্বেষের বীজ ছড়িয়ে দিচ্ছে, সমাজকে আরও দূষিত করছে, আমরা তাদের মেনে নেব না। এই সরকারকে অবশ্যই সরাতে হবে। কিন্তু একটা বিষয় খেয়ালে রাখতে হবে– যা কমরেড শিবদাস ঘোষ আমাদের বারবার বলেছেন, একের পর এক সরকার বদল হয়, যতবার সরকার বদল হয় পুঁজিপতিদের মেদ-চর্বি আরও বেড়ে যায়। তারা গরিবকে আরও শোষণ করে।
প্রশ্ন হল যে নির্বাচন হয়, তা কারা নিয়ন্ত্রণ করে? নির্বাচনী হাওয়া কারা তোলে? ভোটে জনসাধারণের মন সুনির্দিষ্ট দিকে প্রভাবিত করা হয় কীভাবে? জনসাধারণ কীভাবে ভোটে প্রতারিত হয়, সংসদ-বিধানসভায় গরিবদের কথা হয় না, শিক্ষা নিয়ে কথা হয় না, চিকিৎসা নিয়ে কথা হয় না, কৃষক-শ্রমিকদের কথা হয় না, মা-বোনেদের সম্মান নিয়ে কোনও কথা হয় না।
মহান লেনিন বলেছেন, সংসদ পুঁজিপতিদের সবচেয়ে সুরক্ষিত কবচ। এই সংসদীয় রাজনীতি, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি পুরোপুরি পুঁজিপতিদের স্বার্থে পরিচালিত। এতে জনসাধারণের দুর্দশা দিনদিন আরও বাড়বে। কমরেড শিবদাস ঘোষ বলেছেন, হাজার নির্বাচন হলেও জনসাধারণের সমস্যার শেষ হবে না, বাড়বে। এর একমাত্র সমাধান আন্দোলন, গণআন্দোলন, শক্তিশালী আন্দোলন। কিন্তু এই আন্দোলন করবে কে? সঠিক পথে আন্দোলন করতে সঠিক শক্তিশালী পার্টির নেতৃত্ব চাই। এই জন্যই তিনি এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি নিজের হাতে ছাত্র-যুব-শ্রমিক-কৃষক-মহিলাদের সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনি দেখান, দেশে রাজনৈতিক চেতনা দুর্বল থাকার কারণে, জনসাধারণের উপর আক্রমণ চলছে। এ জন্য জনসাধারণের কমিটি গঠন করে অন্যায়ের প্রতিবাদে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাঁর শিক্ষা নিয়েই পশ্চিমবঙ্গে নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরে বীরত্বপূর্ণ লড়াই চালিয়ে জনসাধারণের আন্দোলন জয়ী হয়েছে। হরিয়ানায় আম্বানির এসইজেড, যা ২৫ হাজার একর জমি নিয়ে বানানোর কথা হয়েছিল, সেখানেও কমরেড শিক্ষার ভিত্তিতে সংঘর্ষ কমিটি করে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য করা হয়েছে। আজ দেশের কোণায় কোণায় কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষায়, তাঁর জীবনসংগ্রামকে পাথেয় করে, তাঁর চিন্তাধারার ভিত্তিতে বহু আন্দোলন হয়েছে, আরও বহু আন্দোলন গড়ে উঠছে। এই আন্দোলনগুলিকে আরও মজবুত করতে, এগুলিকে পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঠিক দিশা দিতে পারে একমাত্র সঠিক বিপ্লবী দল। এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) ছাড়া আর কেউ তা করতে পারবে না।
আর একটি কথা বলে আমার বক্তব্য আমি শেষ করব। ভারত ছাড়ো আন্দোলন এমন এক মহান আন্দোলন ছিল যাতে ইংরেজদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। স্বাধীনতা এসেছে, কিন্তু শোষণমুক্তি হয়নি। কেন? সেই আন্দোলনে যে সঠিক নেতৃত্ব থাকার দরকার ছিল তা প্রতিষ্ঠা হতে পারেনি। কংগ্রেসের আপসমুখী নেতৃত্ব ভগৎ সিং-কে হেয় করেছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসকে নেতৃত্ব থেকে বহিষ্কার করেছে। সংগ্রামে সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এজন্যই খুবই জরুরি। আজ এ জন্যই সঠিক বিপ্লবী দলের শক্তি বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। ১৯৭৪-৭৫ সালের কথা মনে করুন, যখন বিহার থেকে ছাত্র-যুবদের ব্যাপক আন্দোলন চলছে, সেই সময় বিপ্লবের পথে এগিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ এসেছিল। সুযোগ এসেছিল বিপ্লবের রাস্তাকে সহজসাধ্য করার উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলার। কিন্তু তথাকথিত বামপন্থী দলগুলির আন্দোলনের পথ থেকে দূরে থাকা এবং আন্দোলনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার কারণে আন্দোলন জয়ী হতে পারেনি। আন্দোলনের ওপর বিপ্লবী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনটা এ জন্য এত বেশি। এই জন্য এস ইউ সি আই (সি)-কে দেশের প্রতিটি প্রান্তে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। সাংগঠনিক, আদর্শগত সব দিক থেকে এই দলকে আরও কার্যকরী, আরও খুরধার করে তুলতে হবে। এজন্য কর্মীদের নিজেদেরও ভুমিকা হতে হবে নিখুঁত, আরও সুনির্দিষ্ট।
কমরেড শিবদাস ঘোষ বলেছেন এক শক্তিশালী এবং যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তুলতে গেলে আদর্শগত, তত্ত্বগত মানকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতেই হবে। সাংগঠনিক শক্তিকেও দৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করাতে হবে। আদর্শগত ও সাংগঠনিক দিককে মিলিয়ে এক নতুন নেতৃত্বের জন্ম দিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে নতুন রাস্তা, নতুন সভ্যতা, নতুন চিন্তা, নতুন সংস্কৃতি। তিনি বলেছেন যাঁরা এই কাজে এগিয়ে অসবেন, তাঁরা নিজেদের বদলাবেন। জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে এই বদলের সংগ্রাম চলবে। আমরাও এই পুঁজিবাদী সমাজ থেকে আসছি। নানা রকমের সংস্কার কুসংস্কারে এই সমাজে মানুষ জড়িয়ে থাকে। তার থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের জীবনে বদল আনতে হবে। তবে দুনিয়াকে বদলানো সম্ভব। কমরেড শিবদাস ঘোষ মহান মার্ক্সের শিক্ষাকে বারবার তুলে ধরেছেন, তাকে জীবনে গ্রহণ করেছেন কার্যকরী করেছেন। আমাদের জীবনেও তা করতে বলেছেন। শিবদাস ঘোষের মহান চিন্তাধারাই আমাদের রাস্তা দেখাতে পারে। এই পথেই আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে। বদলাতেই হবে– আর আমাদের মনে রাখতে হবে সেই প্রক্রিয়ার কথা, যার মধ্য দিয়ে কমরেড শিবদাস ঘোষ মার্ক্সবাদকে আত্মস্থ করেছেন, এই বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছেন। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই মার্ক্স, এঙ্গেলস, লেনিন, স্ট্যালিন মাও সে তুঙ-এর মতোই শিবদাস ঘোষও মার্ক্সবাদের একজন অথরিটিতে পরিণত হয়েছেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আপসহীন ধারার উত্তরসাধক হিসাবে তিনি শুরু করেছিলেন। তিনি নজাগরণের অপূরিত কাজকে পূরণের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়েছেন, তার মধ্য দিয়ে তিনি এ যুগের একজন অগ্রগণ্য মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেছিলেন, ভবিষ্যৎ নিহিত জনগণের হাতে। তাঁর চিন্তাকে গভীরভাবে বুঝে নিতে, চর্চা করতে এই জন্মশতবর্ষে আমাদের সকলকে সংকল্প নিতে হবে। এই দায়িত্ব পালনের সংকল্প নিয়েই আমরা সকলে ফিরে যাব।