কেন্দ্রীয় সরকারের আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু সুপ্রিম কোর্টের কিছু অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে ‘ভারত বিরোধী চক্র’ (অ্যান্টি ইন্ডিয়া গ্যাং) হিসাবে দেগে দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ১৮ মার্চ মিডিয়া হাউসের এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেছেন। তিনি বিচারপতিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউই রেহাই পাবে না। দেশের বিরুদ্ধে যারা কাজ করবে, মূল্য তাদের দিতেই হবে।
আইনমন্ত্রীর এই তালিবানি ফতোয়ার বিরুদ্ধে সারা দেশের ৩২০ জন প্রথিতযশা আইনজীবী সোচ্চার হয়েছেন। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, আইনমন্ত্রীর মনে রাখা উচিত, সরকার আর দেশ এক নয়। আইনমন্ত্রী সংবিধানের নামে শপথ নিয়েছেন। আইনমন্ত্রী হিসাবে তাঁর কর্তব্য বিচারবিভাগ এবং বিচারকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। কিছু অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি – যাঁদের বক্তব্যের সাথে তিনি সহমত নন, তাঁদের টার্গেট করে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া তাঁর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন দুষ্মন্ত দাভে, কপিল সিবাল, অভিষেক মনু সিংভি, অরবিন্দ দাতার, ইকবাল চাগলা, রাজু রামচন্দ্রন, সি ইউ সিং, মীনাক্ষি অরোরা, আর ভাইগৈ প্রমুখ।
চিঠিতে আইনজীবীরা বলেছেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের হুমকি দিয়ে আইনমন্ত্রী আসলে দেশের প্রতিটি নাগরিককে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন ভিন্নমতাবলম্বীরা ছাড় পাবে না।
মন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে আইনজীবীরা বিবৃতিতে আরও বলেন, সরকারের সমালোচনা দেশবিরোধী নয়, দেশাত্মবোধের পরিপন্থীও নয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তাঁরা বলেন, যে সমালোচকরা প্রশাসনের ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতা, সংবিধানের লঙ্ঘন ইতাদি তুলে ধরেন, তাঁরা মানবাধিকারের মূল নীতিগুলিরই চর্চা করেন। সরকারের সমালোচনা শুধুমাত্র পার্লামেন্ট বা বিধানসভার কক্ষে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না বা কোনও একটা বিশেষ শ্রেণির মধ্যে আটকে থাকতে পারে না।
প্রত্যেকটা নাগরিকেরই অধিকার হল শান্তিপূর্ণভাবে সমালোচনা করা, ভিন্নমত পোষণ করা এবং সরকারের কাজকর্ম নিয়ে নিজস্ব মত ব্যক্ত করা। সরকারের সমালোচনা করলে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তির অধিকার জন্মায় না তাঁর দেশাত্মবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে দেশবিরোধী হিসাবে দেগে দেওয়ার। আইনজীবীরা মন্ত্রীকে ভলতেয়ারের একটি বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘তুমি যা বল আমি তার সাথে সহমত নই, কিন্তু এ কথা বলার অধিকার রক্ষার জন্য আমি আমৃত্যু লড়ে যাব’।