সাক্ষাৎকারে বাসদ মার্ক্সবাদীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা
৫ আগস্ট মহান মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক শিবদাস ঘোষ জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন বাংলাদেশের বাসদ মার্ক্সবাদীর এক প্রতিনিধিদল। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানার একটি সাক্ষাৎকার গণদাবীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকারটি প্রথম অংশ গণদাবীর ৭৬-১২ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এবার দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি।
প্রশ্নঃ এবার আমি একটু অন্য প্রশ্নে যাব। বাংলাদেশের এই মুহূর্তের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যদি আপনি সংক্ষেপে কিছু বলেন।
উত্তরঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বলতে গেলে, বলতে হবে যে বাংলাদেশে একটা ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। আওয়ামি লিগ গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। এই দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিতে পারেনি। বাংলাদেশে ২০১৪ সালে একটা ভোট হয়। সেই ভোটে ৩০০টা আসনের মধ্যে ১৫৪টা আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামি লিগ জয়ী হয়। আর ২০১৮ সালে আর একটা নির্বাচন হয়, জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে দিনে কোনও ভোট হয়নি, আগের রাতে ভোট হয়েছে এবং সমস্ত পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামি লিগ এই ভোটটা করেছে। আমাদের দেশে এটা প্রতিষ্ঠিত ব্যাপার যে এটা একটা ভোট ডাকাতির নির্বাচন হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের যে মৌলিক অধিকার, তার যে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের অধিকার, কাজের অধিকার বা মানুষ হিসাবে সে যে তিন বেলা খেয়ে বাঁচবে, এই সব অধিকারই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে মূল্যবৃদ্ধি ভয়াবহ, বেকারত্ব একটা ভয়াবহ সংকটের আকার ধারণ করেছে, কাজের সুযোগ নেই মানুষের। ফলে এক কথায় যদি বলি যে, একদিকে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আর এক দিকে মানুষ হিসাবে সে যে মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে সেই অধিকারটুকুও এই গভর্নমেন্ট সমস্ত দিক থেকে কেড়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে চরম জনবিরোধী হয়ে উঠছে। যার ফলে বাংলাদেশে এখন আমরা একটা দাবি করছি যে, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং এই যে পার্লামেন্ট সেটা একটা অবৈধ পার্লামেন্ট। তাই একটা নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। এটা শুধুমাত্র কিছু রাজনৈতিক দলের দাবি নয়, এটা একটা গণদাবি। বাংলাদেশের জনগণ মনেই করে যে, দলীয় সরকারের অধীনে, অর্থাৎ শেখ হাসিনার যে সরকার, আওয়ামি লিগের যে সরকার এখন ক্ষমতায় আছে, তার অধীনে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ফলে এখানে একটা নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত। এই দাবিতে এখন আমরা, সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল, নানা ভাবে আন্দোলন চালাচ্ছি।
প্রশ্নঃ এই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বলতে আপনি কাদের কথা বলছেন?
উত্তরঃ বিএনপি একটা বিরোধী দল, বিএনপি-র সঙ্গে যুক্ত কর্মসূচিতে আছে কিছু দল। আর তার বাইরে আমাদের একটা বামগণতান্ত্রিক জোট আছে। এই জোট বাংলাদেশে একটি শক্তি।
প্রশ্নঃ এই বামগণতান্ত্রিক জোট, আর বিএনপি কি একসঙ্গে কর্মসূচি করছে?
উত্তরঃ না। এই প্রশ্নে আমাদের একটা জায়গা আছে। আওয়ামি লিগ বা বিএনপি এই দুটিকেই আমরা পুঁজিপতিদের পলিটিক্যাল ম্যানেজার মনে করি। এই ম্যানেজারিটা এখন করছে আওয়ামি লিগ। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা এই কাজটাই করেছে। ফলে আমরা বামগণতান্ত্রিক জোট মনে করি যে আজকের দিনে যদি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলি রক্ষা করতে হয়, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলি রক্ষা করতে হয়, তা হলে বৃহৎ জাতীয় বুর্জোয়া দলগুলির সঙ্গে কোনও যৌথ কর্মসূচি বা ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই সংকটের সমাধান করা যাবে না। সেই জন্য বামগণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলনই এ ক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প। আমরা সেই লড়াইটা করছি।
প্রশ্নঃ আপনাদের এই দুই জোটের দাবির মধ্যে কি কোনও পার্থক্য রয়েছে?
উত্তরঃ এই দুই জোটের দাবির মধ্যে আপেক্ষিক অর্থে প্রধান যে দাবিটা, সেই দাবির মধ্যে ওই অর্থে কোনও পার্থক্য নেই। নির্দলীয় তদারকি সরকারের দাবি আমরা করছি। কিন্তু আমরা যে ভাবে এই নির্বাচন ব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার চাই, আমরা যে ভাবে সংবিধানের অগণতান্ত্রিক ধারার বাতিল চাই, আমরা জনজীবনের সঙ্কটের যে দাবিগুলোর কথা তুলছি, শিক্ষার সংকট, জনজীবনের এখানকার যে ভয়াবহ সংকট, এই সংকটের যে ভয়াবহতা, এই জন্য মানুষের যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজ, মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে, বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা বলছি, যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে, যারা ঋণ খেলাপি তাদের বিরুদ্ধে আমরা যে ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছি, এটা কিন্তু বিএনপি বলে না, তারা শুধুমাত্র ভোটের রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। জনগণের যে ভয়াবহ সংকট তার সমাধানের প্রশ্নে আমাদের সঙ্গে তাদের গুরুতর পার্থক্য আছে।
প্রশ্নঃ আপনাদের যে বাম-গণতান্ত্রিক জোট, এই জোটের মধ্যে বামপন্থীরা ছাড়া অন্য গণতান্ত্রিক শক্তিও রয়েছে?
উত্তরঃ বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি বলতে মূলত বামপন্থী দল হিসাবেই তারা পরিচিত।
প্রশ্নঃ তা হলে বাম জোটই বলা যায়।
উত্তরঃ হ্যাঁ বর্তমানে এটা বাম জোটই বলা যায়।
প্রশ্নঃ এই বাম জোটের মধ্যে অন্য বাম দলগুলোর ভূমিকা কী রকম? গণতন্ত্রের দাবিতে যে আন্দোলনটা, লড়াইটা আপনারা করছেন সেই আন্দোলনে অন্য বাম দলগুলোর ভূমিকা কী রকম?
উত্তরঃ প্রথমেই যেটা বললাম, আজকের দিনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইটার কথা আমরা যখন বলছি, তখন মনে রাখতে হবে, কোনও দল ফ্যাসিবাদ আনে না, পুঁজিপতি শ্রেণি তার শোষণ-শাসন, সর্বোচ্চ মুনাফা গ্যারান্টি করতে ফ্যাসিবাদ আনে এবং তার স্বার্থ রক্ষা করে এ রকম দলের মাধ্যমে তা কার্যকরী করে। ফলে একদিকে শাসক গোষ্ঠী যারা ক্ষমতায় আছে তাদের আক্রমণের নিশানা করতে হবে, আবার অপরাপর যে শক্তিগুলো আছে, যারা আসলে বুর্জোয়াদেরই শক্তি তাদের চরিত্রগুলোও একই সঙ্গে উন্মোচন করতে হবে। এই প্রশ্নে একটা পার্থক্য আমাদের তৈরি হয়। আমরা দেখি, এই জন্যে বামগণতান্ত্রিক জোটের মধ্যেও কিছু দল বিএনপির সাথে কিন্তু যুক্ত কর্মসূচিতে চলে গিয়েছে। অনেক সময় আওয়ামি লিগকেই কেবল আক্রমণ করে যেহেতু আওয়ামি লিগ এখন ক্ষমতায় আছে। এটা তো ঠিকই যে, শাসকগোষ্ঠীকে আক্রমণ করতে হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে যে বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে সেটাকেও যে অ্যাড্রেস করা দরকার সেই জায়গায় অনেক সময় আমাদের পার্থক্য তৈরি হয়। কেউ কেউ মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিপদের বিরুদ্ধে কিছু কিছু কথা বলে। এগুলোর একটা ভুয়ো আবরণ তৈরি করে আওয়ামি লিগকে রক্ষার চেষ্টাই করে। ফলে আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে একটা তীব্র আন্দোলনের যে প্রয়োজনীয়তা, কিছু কিছু দলের ক্ষেত্রে সেটাকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ফলে একটা ডান ঝোঁক, আর একটা হঠকারি ঝোঁক— এই দুটোই দেখা যায়। এই দুটো ঝোঁকের বিরুদ্ধেই লড়াই করে এই বামগণতান্ত্রিক জোটকে ঐক্যবদ্ধ রেখে আমরা লড়াইটা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রশ্নঃ এই ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকাটা যদি নির্দিষ্টভাবে একটু বলেন।
উত্তরঃ যেমন, আমরা কী অর্জন করতে চাই, এই জায়গাটা আমরা স্পষ্ট ভাবে নিয়ে আসার চেষ্টা করি। বর্তমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যেহেতু মানুষের ক্ষোভ আছে, তাই কিছু গরম গরম কথা বলার মধ্য দিয়ে তো এই সঙ্কটের সমাধান করা যাবে না। এর মধ্যে দিয়ে আমরা জনগণকে কতটুকু রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারছি, গণআন্দোলনের শক্তি আমরা কতটা নির্মাণ করতে পারছি, এই প্রশ্নগুলো কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। গণআন্দোলনের শক্তিকে যতটা শক্তিশালী করতে পারব ততটাই তা মানুষের ভয়াবহ সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার গ্যারান্টি হিসাবে কাজ করবে। এই অ্যাপ্রোচটা কিন্তু আমরা অন্য দলগুলোর মধ্যে দেখি না। আমরা বক্তব্যের মধ্যে, আলাপ-আলোচনার মধ্যে, জনগণের কাছে যাওয়ার মধ্যে এই অ্যাপ্রোচটা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি যে, একটা গণআন্দোলনের শক্তি গড়ে তুলতে হবে, তার জন্য গণকমিটি গড়ে তুলতে হবে। নির্দিষ্ট ভাবে এই বক্তব্যগুলো আমরা জনগণের মধ্যে নিয়ে যাই। এ ছাড়াও ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে কমরেড ঘোষের শিক্ষা আমরা জনগণের কাছে নিয়ে যাই।
প্রশ্নঃ আপনারা এই যে অন্যদের থেকে সুনির্দিষ্ট পার্থক্যের কথা বললেন, আপনাদের এই বক্তব্য জনগণের মধ্যে কেমন সাড়া জাগাচ্ছে?
উত্তরঃ খুবই ভাল। এখন আমরা দেখছি, অন্যান্য দলগুলো যখন বক্তব্য রাখছে তখন কিন্তু তারা আমাদের এই কথাগুলো বলছে। এটাকে একটা অর্জন হিসাবেই আমরা দেখছি। অন্যান্য বাম দলগুলোর কর্মীদের মধ্যেও কিন্তু আমাদের এই বক্তব্যের প্রতি একটা সমর্থন আছে। সাধারণ জনগণের মধ্যেও এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন আছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা তিন মাস ধরে একটা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিলাম নির্দলীয় তদারকি সরকারের দাবিতে এবং এই সরকারের পদত্যাগ ও জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধানের দাবি নিয়ে। আমরা ব্যাপক মানুষের সমর্থন পেয়েছি। সেই সময়ে প্রশাসনকে যে ভাবে আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে তার মধ্যে দিয়ে এখানকার বামপন্থী মহলই শুধু নয়, দেশের গোটা রাজনৈতিক মহলই আমাদের একটা সিনসিয়ার রাজনৈতিক শক্তি বলেই মনে করে। মনে করে যে এদের শক্তি কম, কিন্তু এরা একটা সিনসিয়ার পলিটিক্যাল ফোর্স। গণআন্দোলন, শ্রেণি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যে জনগণের শক্তি নির্মাণ করতে হবে, মিডিয়ার মাধ্যমে বা প্রচারের মাধ্যমে বা যেনতেন প্রকারে যারা বামপন্থার কথা বলে, একটা আদর্শের কথা বলে তারা যে বড় হতে পারে না, তাদের বড় হওয়ার একটাই জায়গা আছে, তা গণআন্দোলন, শ্রেণি আন্দোলন গড়ে তোলা, সেই বিষয়গুলো আমরা অনেকটা নিয়ে আসতে পেরেছি।
প্রশ্নঃ এখন আপনাদের আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সম্পর্কে বলুন?
উত্তরঃ পাঁচ দফা দাবিতে আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং বাম-গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে গণআন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে কী ভাবে এই গণআন্দোলনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা যায়, কী ভাবে গণকমিটি গড়ে তোলা যায় তার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি আজকের দিনে এই যে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন তার বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তুলতে হলে বামগণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমাদের এই বামগণতান্ত্রিক জোটের বাইরেও কিছু বামপন্থী হিসাবে পরিচিত শক্তি আছে, যারা এখনও একটা প্ল্যাটফর্মে আসতে পারেনি, যেমন ফ্যাসিবাদ বিরোধী বামমোর্চা নামে একটি প্ল্যাটফর্ম আছে বাংলাদেশে। এই দাবিগুলির মধ্যে যেগুলি নিয়ে তারা একমত সেই দাবি নিয়ে তাদের সাথে আমরা কিছু যৌথ কর্মসূচি করছি। এই দাবিগুলি নিয়ে আমরা এখন মিছিল, পথসভা, সমাবেশ করছি। এই কর্মসূচিগুলি ভবিষ্যতেও আমাদের চলবে। জেলায় জেলায় সমাবেশ করা, বিভাগীয় কনভেনশন, সমাবেশ করা এবং কেন্দ্রীয় ভাবে মহাসমাবেশ করা, এই পরিকল্পনাগুলি আমাদের বামগণতান্ত্রিক দলগুলির সামনে আছে। আমরা যদি এই সরকারকে নির্দলীয় তদারকি সরকার গঠন করতে বাধ্য করতে চাই তবে ভবিষ্যতে ঘেরাও, অবরোধ এই কর্মসূচির দিকেও আমাদের যেতে হবে।
আর একটা জিনিস আমাদের দেশে আছে যেটা আসলে আওয়ামি লিগ সরকারই তৈরি করেছে একটা অগণতান্ত্রিক সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নানা ভাবে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণের উপর খবরদারি করছে। আমেরিকা, চীন, রাশিয়া এটা করছে। ভারতও এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত আছে। যেমন ধরুন, বাংলাদেশের নির্বাচন কী ভাবে হবে, এটা তো বাংলাদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো নানা ভাবে এর মধ্যে মাথা গলাচ্ছে, চাপ তৈরি করে চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশকে তাদের বলয়ে আনার জন্য। সরকারকে নানা ভাবে উপদেশ দিচ্ছে, বৈঠক করছে। আওয়ামি লিগ সরকার এবং বিএনপি উভয়েই কিন্তু এই সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর কাছেই দরবার করছে। এই সরকার যেহেতু জনগণের সরকার নয়, তাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কাছে দরবার করেই সে সরকারকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রশ্নঃ আওয়ামি লিগ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক বিষয়ে যদি কিছু বলেন।
উত্তরঃ এটা কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার যে, ভারত সরকারের ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট বাড়ছে। কারণ বাংলাদেশে যে সরকারটা চলছে সেটা একটা ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদী সরকার এবং বাংলাদেশের মানুষের কোনও গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, উন্নয়নের কথা বলে যে ভাবে সরকারটা পরিচালনা করছে সেখানে মানুষের কোনও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এই সময়টাতে আমরা দেখছি যে, বিশেষ করে ২০১৪ সালে নির্বাচনে দেখা গেল, তখন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ছিলেন সুষমা স্বরাজ, তিনি সরাসরি বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন করছেন যে, বাংলাদেশে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় আসুক আমরা চাই এবং উনি কিছু বিরোধী দলকে বাধ্য করছেন সেই নির্বাচনে যোগ দিতে। রামপালে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, এটা পরিবেশের ভীষণ ক্ষতি করবে। আদানিদের থেকে যে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ, এটাতেও দেশের বিরাট একটা আর্থিক ক্ষতি। এটা বাংলাদেশ সরকার করছে কারণ, আদানিদের খুশি করার দ্বারা সে ভারতের বিজেপি সরকারের সমর্থন চাইছে। এর দ্বারা বাংলাদেশে যেমন সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর ক্ষমতা বাড়বে, তেমনই ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্টটাও বাড়তে থাকবে। আমরা এটা জানি। আমরা সব সময় এটা বাংলাদেশের জনগণকে বলি যে, ভারতে শাসকগোষ্ঠী আর ভারতের জনগণ এক নয়। বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী আর বাংলাদেশের জনগণ এক নয়। আমরা মনে করি, ভারতের শাসকদের এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয় যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধী মানসিকতা বাড়তে সাহায্য করে।