জানুয়ারি মাস থেকেই ফ্রান্সের কৃষকরা চালাচ্ছেন লাগাতার আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ সরকারের কৃষি-বিরোধী পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে কৃষকরা প্যারিস বিমানবন্দর সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি অবরোধ করেন। রাজপথগুলি সারি সারি ট্র্যাক্টর দিয়ে অবরোধ করে, দিন-রাত ব্যারিকেড করে গোটা দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। পুলিশ রেকর্ডই বলছে, শুধু জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ৪৫০০টি ট্র্যাক্টর দিয়ে ৮০টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ৬,৫০০ জন কৃষক। টায়ার পুড়িয়ে ও প্রশাসনিক ভবনগুলিতে গোবর ছড়িয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কৃষকরা। মনে পড়ে দিল্লির বুকে ২০২১-এর ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের কথা। বিজেপি সরকারের কৃষকমারা নীতির প্রতিবাদে কৃষকদের লাগাতার ১৩ মাস অবস্থান এবং সারি দেওয়া ট্রাক্টর মিছিলের কথা।
ফসলের ন্যায্য দাম, বিদেশ থেকে আমদানি ফসলে অনুদান কমিয়ে দেশীয় কৃষিজ দ্রব্য বিক্রিতে সুবিধা দেওয়া, ডিজেলের উপর থেকে বাড়তি ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবিতে এবং সারের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে উত্তাল বিক্ষোভে ফেটে পড়েন হাজার হাজার কৃষক। বহু জায়গায় টিভিতে প্রধানমন্ত্রীকে ভাষণ দিতে দেখে টিভির উপর সসেজ ছুঁড়ে বিক্ষোভ দেখান তারা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রতীক স্বরূপ এক কৃষকের কুশপুতুলের গলায় ফাঁস লাগিয়েও প্রতিবাদ জানান কৃষকরা।
এ বারের সামার অলিম্পিকের আয়োজক দেশ ফ্রান্স। প্রতিবাদী কৃষকরা হুমকি দিয়েছেন সরকার দাবি না মানলে তাঁরা রাজধানী অবরোধ চালিয়ে যাবেন। বিক্ষোভকারীদের দমাতে হাজার হাজার পুলিশ নামায় সরকার, গ্রেপ্তার করে জেলে পোরে কৃষকদের। কিন্তু আন্দোলন থেকে নিরস্ত করতে পারেনি তাঁদের।
বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে প্রতিবেশী দেশ বেলজিয়ামেও। রাজধানী ব্রাসেলস এবং প্যারিসের সংযোগকারী প্রধান রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। ফসলের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, ট্যাক্স বৃদ্ধি, কম আয় এবং ডিজেল ব্যবহারে সুবিধা বাতিলের প্রতিবাদে ইটালির রোমে কৃষকরা ট্রাক্টর দিয়ে রাজপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। রোমানিয়া, পোলান্ড, জার্মানিতেও ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। ১৫ জানুয়ারি কৃষি-জ্বালানিতে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ৫ হাজার ট্রাক্টর নিয়ে ১০ হাজারের বেশি কৃষক বার্লিনের রাস্তায় মিছিল করেছেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশও কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। স্পেনের কৃষকরা আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করেছেন। দেশে দেশে পুঁজিবাদের সেবক সরকারগুলি একচেটিয়া পুঁজিপতিদের জন্য সবরকম সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে গিয়ে সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের উপর সঙ্কটের বোঝা বাড়িয়ে চলেছে। একই সাথে পুঁজিবাদ ও পুঁজিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি দেশে দেশে জন্ম দিচ্ছে।