Breaking News

প্রলেতারীয় একনায়কত্বের যুগে অর্থনীতি ও রাজনীতি – লেনিন

 

১৯১৭ সালে রাশিয়ায় মহান লেনিনের নেতৃত্বে ৭ থেকে ১৭ নভেম্বর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করে শ্রমিক শ্রেণির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতি বছরের মতো এ বারও বিপ্লবের ১০৪তম বার্ষিকী গভীর শ্রদ্ধা ও শপথের মধ্য দিয়ে পালন করছে বিশ্বের দেশে দেশে মুক্তিকামী মানুষ। ভারতেও এই বিপ্লববার্ষিকী এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। আশা করি লেনিনের এই রচনাটি রুশ বিপ্লবের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে।

সোভিয়েত শাসনের দ্বিবার্ষিক জয়ন্তী উপলক্ষে প্রলেতারীয় একনায়কত্বের যুগে অর্থনীতি ও রাজনীতি বিষয়টি নিয়ে একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা লেখার কথা আমি ভেবেছিলাম। কিন্তু দৈনন্দিন কাজের বোঝায় বিচ্ছিন্ন কয়েকটি অংশের প্রাথমিক প্রস্তুতির বেশি কিছু করা এ যাবৎ হয়ে ওঠেনি। সেইজন্যই উপরোক্ত বিষয়ে আমার মতে যা মূলকথা তার ছোটো সারার্থ হাজির করার চেষ্টা করব ঠিক করেছি। বলাই বাহল্য, বক্তব্যের সারসংক্ষেপে বহু অসুবিধা থাকে, ত্রুটিও থেকে যায়। তথাপি একটা ছোট পত্রিকা-প্রবন্ধের পক্ষে এই পরিমিত লক্ষ্যটা হয়ত সাধ্যায়ত্ত হতে পারে প্রশ্নটির উপস্থাপনায় এবং বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্টদের আলোচনার জন্য একটা রূপরেখা তৈরিতে।

(১)

তত্ত্বের দিক থেকে কোনও সন্দেহই নেই যে পুঁজিবাদ ও কমিউনিজমের মধ্যে একটা সুনির্দিষ্ট উত্তরণ পর্ব বর্তমান। এই পর্বে এই উভয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ও গুণ মিলিতভাবে না থেকে পারে না। এই উত্তরণ পর্বটা মুমূর্ষ পুজিবাদ ও উদীয়মান কমিউনিজমের মধ্যে, বা অন্য কথায়, পরাজিত, কিন্তু অবিলুপ্ত পুঁজিবাদ আর প্রসূত, কিন্তু তখনও নিতান্ত দুর্বল কমিউনিজমের মধ্যে সংগ্রামের একটা পর্ব না হয়ে পারে না।

শুধু মার্কসবাদীর কাছে নয়, বিকাশের তত্ত্ব বিষয়ে কিছু না কিছু জ্ঞান আছে এরূপ যেকোনও শিক্ষিত ব্যক্তির কাছেও উত্তরণ পর্বের এইরূপ বৈশিষ্টে্য চিহ্নিত গোটা একটা ঐতিহাসিক যুগের অনিবার্য অস্তিত্ব প্রতীয়মান হতে বাধ্য। অথচ সমাজতন্ত্রে উত্তরণ নিয়ে যত আলোচনা পেটি-বুর্জোয়া গণতন্ত্রের বর্তমান প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আমরা শুনি (এবং নিজেদের ঝুটা সোশ্যালিস্ট তকমা সত্ত্বেও দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সমস্ত প্রতিনিধি, ম্যাকডোনাল্ড ও জাঁ লগে, কাউটস্কি ও ফ্রিডরিখ আডলার সমেত সকলেই তাই), – তার বৈশিষ্ট্যই হল এই স্বতঃষ্পষ্ট সত্যের সম্পূর্ণ বিস্মরণ। পেটি বুর্জোয়া গণতন্ত্রীদের বৈশিষ্ট্যই হল শ্রেণি সংগ্রামের প্রতি বিতৃষ্ণা, শ্রেণিসংগ্রামকে পাশ কাটিয়ে যাবার স্বপ্ন, তীক্ষ্ম বাঁকগুলিকে মোলায়েম ও ভোঁতা করে দেওয়ার ঝোঁক। সেইজন্যই এ ধরনের গণতন্ত্রীরা হয় পুঁজিবাদ থেকে কমিউনিজমে উত্তরণের গোটা ঐতিহাসিক পর্বটা স্বীকার করার প্রয়োজনই বোধ করে না, নয়ত দুই যুযুধান শক্তির মধ্যে একটির পক্ষ নিয়ে সংগ্রাম পরিচালনার বদলে উভয় শক্তির মধ্যে মিটমাট ঘটাবার ভুয়া পরিকল্পনা তৈরিকেই নিজেদের কর্তব্য জ্ঞান করে।

(২)

আমাদের দেশের বিরাট পশ্চাৎপদতা ও পেটি বুর্জোয়া প্রকৃতির জন্য রাশিয়ায় প্রলেতারীয় একনায়কত্ব অগ্রণী দেশগুলির তুলনায় অনিবার্যভাবেই কতকগুলি বৈশিষ্টে্য পৃথক হবেই। কিন্তু মূল শক্তিগুলি– এবং সামাজিক অর্থনীতির মূল রূপগুলি– যে কোনও পুঁজিবাদী দেশের মতোই হবে রাশিয়াতেও। সেজন্য রাশিয়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি আর যাই হোক সর্বপ্রধান ক্ষেত্রগুলিতে দেখা দেয় না।

সমাজ অর্থনীতির এই মূল রূপগুলি হলঃ পুঁজিবাদ, ক্ষুদ্র পণ্য উৎপাদন, কমিউনিজম। এই মূল শক্তিগুলি হলঃ বুর্জোয়া, পেটি বুর্জোয়া (বিশেষত কৃষক-সম্প্রদায়) ও প্রলেতারিয়েত।

প্রলেতারীয় একনায়কত্বের যুগে রাশিয়ার অর্থনীতি হল বৃহৎ এক রাষ্ট্রের অখণ্ড আয়তনে কমিউনিস্ট নীতিতে সম্মিলিত, শ্রমের প্রথম পদক্ষেপগুলির সঙ্গে ক্ষুদ্র পণ্য উৎপাদন ও টিকে থাকা পুঁজিবাদ এবং ক্ষুদ্র উৎপাদনকে ভিত্তি করে যে নতুন পুঁজিবাদের উদয় হচ্ছে– তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম।

রাশিয়ায় শ্রম সেই পরিমাণে কমিউনিস্ট নীতিতে সম্মিলিত হয়েছে যে পরিমাণে, প্রথমত, উৎপাদন-উপায়ের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার বিলোপ ঘটেছে এবং, দ্বিতীয়ত, যে পরিমাণে প্রলেতারীয় রাষ্ট্রক্ষমতা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমিতে ও রাষ্ট্রীয় শিল্পসংস্থাগুলিতে বৃহৎ উৎপাদন সংগঠিত করছে, অর্থনীতির বিভিন্ন শাখা ও সংস্থার মধ্যে শ্রমশক্তির বণ্টন করছে, শ্রমজীবী জনগণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিপুল পরিমাণ ভোগ্যদ্রব্য বণ্টন করছে।

রাশিয়ায় কমিউনিজমের প্রথম পদক্ষেপগুলির কথা আমরা বলছি (১৯১৯ সালের মার্চে গৃহীত আমাদের পার্টি কর্মসূচিতেও তাই বলা হয়েছে), কেননা এই সব শর্ত আমাদের এখানে কেবল অংশত রূপায়িত, কিংবা অন্য কথায়, এই সব শর্তের রূপায়ণ রয়েছে কেবল তার প্রাথমিক স্তরে। আমরা এক বৈপ্লবিক ধাক্কায় সেটা করতে পেরেছি যা এভাবে করা সম্ভবঃ যেমন, প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্বের প্রথম দিনেই ১৯১৭ সালের ২৬ অক্টোবর (৮ নভেম্বর, ১৯১৭) জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা বিলুপ্ত হয়েছে বৃহৎ মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে, উচ্ছেদ হয়েছে বড়ো বড়ো ভূস্বামীরা। কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় সমস্ত বৃহৎ পুঁজিপতি, কলকারখানা, জয়েন্ট-স্টক কোম্পানি, ব্যাঙ্ক, রেলপথ ইত্যাদির মালিকদেরও উচ্ছেদ করা হয়েছে বিনা ক্ষতিপূরণেই। শিল্পে বৃহৎ উৎপাদনের রাষ্ট্রীয় সংগঠন, কলকারখানা, রেলপথের উপর ‘শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ’ থেকে ‘শ্রমিক পরিচালনায়’ উত্তরণ– এটা মূলত ও প্রধানত ইতিমধ্যেই কার্যকরী হয়েছে, কিন্তু কৃষির ক্ষেত্রে তা সবে শুরু হয়েছে (‘সোভিয়েত খামার’, রাষ্ট্রীয় জমিতে শ্রমিক রাষ্ট্র কর্তৃক সংগঠিত বৃহৎ খামার)। একই ভাবে সবে শুরু হয়েছে ক্ষুদ্র পণ্য কৃষি থেকে কমিউনিস্ট কৃষিতে উত্তরণ হিসাবে ক্ষুদ্র কৃষকদের নানা ধরনের সমিতি গঠন। ব্যক্তিগত ব্যবসার বদলে দ্রব্য বণ্টনের রাষ্ট্রীয় সংগঠন সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়, অর্থাৎ, শহরের জন্য শস্যের এবং গ্রামের জন্য শিল্পদ্রব্যের রাষ্ট্রীয় সংগ্রহ ও সরবরাহ। কৃষক অর্থনীতি রূপে ক্ষুদ্র পণ্য উৎপাদন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে আমরা পাচ্ছি পুঁজিবাদের অসাধারণ ব্যাপক ও অসাধারণ দৃঢ়মূল ভিত্তি। এই ভিত্তিতে পুঁজিবাদ টিকে থাকে ও পুনরুদিত হয় কমিউনিজমের বিরুদ্ধে নির্মমতম সংগ্রামে। এ সংগ্রামের রূপ হল, রাষ্ট্রীয় শস্য সংগ্রহের বিরুদ্ধে (তথা অন্যান্য দ্রব্য সংগ্রহেরও বিরুদ্ধে)– সাধারণভাবে দ্রব্যের রাষ্ট্রীয় বণ্টনের বিরুদ্ধে ফড়িয়াবৃত্তি ও কালোবাজারি।

(৩)

এই সমস্ত বিমূর্ত তাত্ত্বিক প্রতিপাদ্য বোঝাবার জন্য প্রত্যক্ষ তথ্য দেব। কমপ্রদ-এর (খাদ্য জনকমিশারিয়েত) তথ্য অনুসারে রাশিয়ায় শস্যের রাষ্ট্রীয় সংগ্রহে ১৯১৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯১৮ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৩ কোটি পুদ (১ পুদ = ১৬ কেজির একটু বেশি)। পরের বছর প্রায় ১১ কোটি পুদ। পরের বছর (১৯১৯-১৯২০) প্রথম তিন মাসের শস্য সংগ্রহ অভিযান থেকে বোঝা যাচ্ছে, পাওয়া যাবে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লক্ষ পুদ, যেখানে ১৯১৮ সালের ওই ক’মাসে (আগস্ট-অক্টোবর) মিলেছিল ৩ কোটি ৭০ লক্ষ পুদ।

পুঁজিবাদের উপর কমিউনিজমের বিজয়ের অর্থে এই সংখ্যাগুলি আমাদের কাজের মন্থর কিন্তু অটল উন্নয়নের পরিষ্কার সাক্ষ্য দিছে। বিশ্বের পরাক্রান্ত রাষ্ট্রগুলির সর্বশক্তি প্রয়োগ করে রুশী ও বিদেশি পুঁজিপতিরা যে গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তার ফলে বিশ্বে অশ্রুতপূর্ব যে বাধা ও সমস্যাগুলি দেখা দিয়েছে তা সত্ত্বেও এ উন্নতিটা ঘটেছে।

তাই সর্ব দেশের বুর্জোয়া এবং তার প্রকাশ্য ও গোপন দালালেরা (দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মার্কা সমাজতন্ত্রীরা) যতই মিথ্যা ও নিন্দা রটাক, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়ঃ প্রলেতারীয় একনায়কত্বের মূল অর্থনৈতিক প্রশ্নের দিক থেকে আমাদের এখানে পুঁজিবাদের উপর কমিউনিজমের বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। সারা বিশ্বের বুর্জোয়ারা বলশেভিকবাদের বিরুদ্ধে ত্রুদ্ধ হচ্ছে ও ফুঁসছে, বলশেভিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান, ষড়যন্ত্র ইত্যাদির আয়োজন করছে ঠিক এই কারণে যে, যুদ্ধের জোরে আমাদের দমন না করতে পারলে সমাজ অর্থনীতির পুনর্নির্মাণে আমাদের বিজয় যে অনিবার্য সেটা তারা চমৎকার বুঝেছে। কিন্তু এই উপায়ে আমাদের দমন করার চেষ্টায় তারা সফল হচ্ছে না।

আমরা যে সংক্ষিপ্ত সময় পেয়েছিলাম এবং বিশ্বে অশ্রুতপূর্ব যে দুরূহতার মধ্যে আমাদের কাজ করতে হয়েছিল, তার ভেতরেই পুঁজিবাদের উপর ঠিক কতটা জয় আমরা অর্জন করেছি তা দেখা যাবে নিচের পরিণাম সংখ্যাগুলি থেকে। গোটা সোভিয়েত রাশিয়া নয়, তার ২৬টি গুবের্নিয়া নিয়ে শস্যের উৎপাদন ও ভোগের তথ্য কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তর সবে প্রস্তুত করে দিয়েছে প্রকাশের জন্য।

(এখানে লেনিন একটি সারণী দিয়েছিলেন, তার সবকিছু আলাদা করে তাঁর লেখার মধ্যেই থাকায় সারণীটি দেওয়া হল না)

অর্থাৎ, শহরগুলিকে অর্ধেক শস্য জোগাচ্ছে কমপ্রদ, অর্ধেক জোগাচ্ছে ফড়িয়ারা। ১৯১৮ সালে শহরের শ্রমিকদের খাদ্য বিষয়ে নিখুঁত অনুসন্ধান করে ঠিক এই অনুপাত পাওয়া গেছে। তদুপরি, রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া শস্যের জন্য শ্রমিকেরা যে টাকা খরচ করে সেটা ফড়িয়াদের তুলনায় ৯ গুণ কম। কালোবাজারি শস্যের দর রাষ্ট্রীয় দরের চেয়ে দশগুণ বেশি। শ্রমিক বাজেটের নিখুঁত অধ্যয়ন থেকে এটি পাওয়া যায়।

(৪)

উদ্ধৃত তথ্যগুলি নিয়ে ভালো করে চিন্তা করলে রাশিয়ার বর্তমান অর্থনীতির সমস্ত মূল বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের মতো নিখুঁত ছবি পাওয়া যাবে।

চিরাচরিত উৎপীড়ক ও শোষক, জমিদার ও পুঁজিপতিদের হাত থেকে শ্রমজীবীদের মুক্ত করা হয়েছে। সত্যিকারের মুক্তি ও সত্যিকারের সাম্যের দিকে এই যে পদক্ষেপ– আয়তনে, পরিমাণে ও দ্রুততায় যা বিশ্বে অভূতপূর্ব, সে পদক্ষেপটা হিসাবে ধরে না বুর্জোয়াদের সেই সমর্থকরা (সেই সঙ্গে পেটিবুর্জোয়া গণতন্ত্রীরাও), যারা স্বাধীনতা ও সাম্য বলতে পার্লামেন্টী বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে বোঝায়, আর মিথ্যা করে তাকে অভিহিত করে সাধারণভাবে ‘গণতন্ত্র’ বা ‘বিশুদ্ধ গণতন্ত্র’ (কাউটস্কি) রূপে।

কিন্তু ঠিক সত্যিকারের সাম্য, সত্যিকারের মুক্তি কী, (জমিদার ও পুঁজিপতিদের হাত থেকে মুক্তি) শ্রমজীবীরা তা বোঝে, তাই অমন দৃঢ়ভাবে তারা সোভিয়েত শাসনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়ার মতো কৃষিপ্রধান দেশে প্রলেতারীয় একনায়কত্ব থেকে সর্বাগ্রে লাভ হয়েছে, সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গেই লাভ হয়েছে সাধারণভাবে কৃষকদের। জমিদার ও পুঁজিপতিদের আমলে রাশিয়ায় কৃষকরা অনাহারে থাকত। আমাদের ইতিহাসের সুদীর্ঘ শতক জুড়ে কৃষকেরা এর আগে নিজেদের জন্য মেহনত করার সুযোগ পায়নি কখনওঃ কোটি কোটি পুদ শস্য পুঁজিপতিদের দিয়ে, শহরে পাঠিয়ে, বিদেশে পাঠিয়ে তারা না খেয়ে থেকেছে। প্রলেতারীয় একনায়কত্বেই কৃষকেরা প্রথম নিজের জন্য খাটল, শহরবাসীদের চেয়ে ভালো খেয়ে থাকল। এই প্রথম কার্যক্ষেত্রে স্বাধীনতার স্বাদ পেল কৃষকরাঃ নিজেদের রুটি খাবার স্বাধীনতা, বুভুক্ষা থেকে স্বাধীনতা। জমির বিলিবণ্টনে সাম্য কায়েম করা হল। সবাই জানে, সর্বোচ্চ মাত্রায় বিপুল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষকেরা জমি বাটোয়ারা করছে ‘পেট গুনতি করে’।

সমাজতন্ত্রর অর্থ হল শ্রেণির বিলোপ।

শ্রেণির বিলোপ করতে হলে সর্বাগ্রে দরকার জমিদার ও পুঁজিপতিদের উচ্ছেদ। কর্তব্যের এই অংশটা আমরা পূরণ করেছি, কিন্তু এটা হল অংশমাত্র, এবং সেটা সবচেয়ে দুরূহও নয়। শ্রেণির বিলোপের জন্য, দ্বিতীয়ত, দরকার কারখানা-শ্রমিক ও কৃষকের মধ্যে পার্থক্যের বিলোপ, সবাইকেই শ্রমিক করে তোলা। সেটা এক ধাক্কায় করা সম্ভব নয়। এ হল অত্যন্ত দুরূহ ও অনিবার্য ভাবেই দীর্ঘকালীন একটা কর্তব্য। কোনও রকম একটা শ্রেণির উচ্ছেদ করে এ কাজ করা সম্ভব নয়। তার সমাধান সম্ভব কেবল সমস্ত সামাজিক অর্থনীতির সাংগঠনিক পুননির্মাণের মাধ্যমে, একক, বিচ্ছিন্ন, ক্ষুদ্র পণ্য অর্থনীতি থেকে সামাজিক বৃহদায়তন অর্থনীতিতে উত্তরণ দ্বারা। এরূপ উত্তরণ অনিবার্যরূপেই দীর্ঘকালীন। অধৈর্য হয়ে অসতর্ক প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক পদক্ষেপ নিলে সে উত্তরণ কেবল বিলম্বিত ও দুরূহই হবে। এ উত্তরণ ত্বরান্বিত করা যায় কৃষকদের কেবল এমন সাহায্য দিয়ে যার কল্যাণে বিপুল মাত্রায় সমস্ত কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন ও তার আমূল পুনর্গঠন তাদের পক্ষে সম্ভব হয়।

কর্তব্যের দ্বিতীয়, দুরূহতম অংশটার সমাধান করতে হলে বুর্জোয়ার উপর বিজয়ী প্রলেতারিয়েতকে কৃষক-সম্প্রদায় প্রসঙ্গে তার রাজনীতির মূলধারা অটলভাবে অনুসরণ করতে হবেঃ মালিক কৃষক থেকে মেহনতী কৃষকদের, ব্যাপারী কৃষক থেকে শ্রমজীবী কৃষকদের, কালোবাজারী-কৃষক থেকে খাটিয়ে-কৃষকদের তফাৎ করতে হবে, সীমারেখা টানতে হবে।

এই সীমারেখার মধ্যেই সমাজতন্ত্রের সমস্ত মর্মার্থ নিহিত।

এবং অবাক হবার কিছু নেই যে মুখে সমাজতন্ত্রী ও কাজে পেটিবুর্জোয়া গণতন্ত্রীরা (মার্তভ ও চের্নোভরা, কাউটস্কি অ্যাণ্ড কোং) সমাজতন্ত্রের এই মর্মার্থ বোঝেন না।

উল্লিখিত এই সীমারেখা টানা অতি দুরূহ, কেননা জীবন্ত বাস্তবে ‘কৃষকদের’ সমস্ত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যত বিভিন্নতাই থাক, যত বৈপরীত্যই থাক, তা সবই এক সমগ্রে নিহিত। তাহলেও সীমারেখা টানা সম্ভব এবং শুধু সম্ভবই নয় বরং কৃষক অর্থনীতি ও কৃষক জীবনযাত্রার পরিস্থিতি থেকেই তা অনিবার্যরূপে বেরিয়ে আসে। যুগের পর যুগ মেহনতী কৃষকদের পীড়ন করেছে জমিদার, পুঁজিপতি, ব্যাপারী, কালোবাজারি ও তাদের রাষ্ট্র্র, সবচেয়ে গণতান্ত্রিক বুর্জোয়া প্রজাতন্ত্রও তার অন্তর্গত। যুগের পর যুগ ধরে মেহনতী কৃষকেরা এইসব পীড়ক ও শোষকদের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ করে এসেছে এবং জীবন থেকে পাওয়া এই ‘শিক্ষায়’ কৃষকেরা পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে, কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে, ব্যাপারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সঙ্গে ঐক্য সন্ধানে বাধ্য হচ্ছে। অথচ সেই সঙ্গেই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ফলে, পণ্য অর্থনীতির পরিস্থিতির ফলে অনিবার্যভাবেই কৃষকেরা (সর্ব ক্ষেত্রে নয়, কিন্তু অতি প্রচুর পরিমাণ ক্ষেত্রেই) পরিণত হচ্ছে ফড়িয়া ও কালোবাজারিতে।

আমাদের উপরে-উল্লিখিত পরিসংখ্যান থেকে মেহনতী কৃষক ও কালোবাজারি কৃষকের পার্থক্য পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থার যে সব ত্রুটি সম্পর্কে শ্রমিক সরকার ভালোই সচেতন, কিন্তু সমাজতন্ত্রে উত্তরণের প্রথম পর্বে যা দূর করা সম্ভব নয়, সে সব ত্রুটি সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলির হাতে এই যে কৃষক ১৯১৮-১৯১৯ সালে শহরের ক্ষুধার্ত শ্রমিকদের জন্য বাঁধা রাষ্ট্রীয় দরে ৪ কোটি পুদ শস্য দিয়েছিল – এই কৃষক হল শ্রমজীবী কৃষক, সোশ্যালিস্ট-শ্রমিকের সমান ও তার সতীর্থ, তার সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য সহযোগী, পুঁজির জোয়ালের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এক সহোদর ভাই। আর ওই যে কৃষক শহরের শ্রমিকদের টানাটানি ও বুভুক্ষার সুযোগ নিয়ে, রাষ্ট্রকে ফাঁকি দিয়ে, সর্বত্র প্রতারণা, লুণ্ঠন, জালজুয়াচুরি বাড়িয়ে তুলে ও তার পুনর্জন্ম দিয়ে গোপনে গোপনে ৪ কোটি পুদ শস্য বিক্রি করেছে রাষ্ট্রীয় দরের দশগুণওবেশি দরে, এই কৃষক হল কালোবাজারি, পুঁজিপতিদের সহযোগী, এ হল শ্রমিকদের শ্রেণিশত্রু, এ হল শোষক। কেননা উদ্বৃত্ত শস্য হাতে থাকা, যা আহরিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমি থেকে এবং এমন কৃষি-যন্তে্রর সাহায্যে যার সৃষ্টিতে কোনও না কোনও ভাবে শুধু কৃষক নয়, শ্রমিক এবং অন্যান্যদের শ্রমও ঢালা হয়েছে, এই উদ্বৃও শস্য রাখা ও তা নিয়ে কালোবাজারি করার অর্থ ক্ষুধার্ত শ্রমিকের শোষণকারী হয়ে যাওয়া।

আমাদের সংবিধানে শ্রমিক ও কৃষকের মধ্যে অসাম্য, সংবিধান সভার ভাঙন, উদ্বৃত্ত শস্যের জবরদস্তি আদায় প্রভৃতির দিকে আঙুল দেখিয়ে আমাদের চারিদিক থেকে উচ্চস্বরে অভিযোগ তুলে বলা হয়, তোমরা স্বাধীনতা, সমতা ও গণতন্ত্র লঙ্ঘন করছো। আমরা জবাব দিইঃ মেহনতি কৃষকরা যুগের পর যুগ যাতে জর্জরিত হয়েছে সেই বাস্তব অসাম্য, সেই বাস্তব স্বাধীনতাহীনতা বিলোপ করার জন্য আমাদের মতো এতখানি করেছে এমন রাষ্ট্র দুনিয়ায় নেই। কিন্তু কালোবাজারি কৃষকের সঙ্গে সমতা আমরা কখনও মানি না, যেমন মানি না শোষকের সঙ্গে শোষিতের, ভুরিভোজীর সঙ্গে অনাহারীর ‘সমতা’, দ্বিতীয়কে লুঠ করার জন্য প্রথমের ‘স্বাধীনতা’। এবং যে সব শিক্ষিত ব্যক্তি এই পার্থক্যটা বুঝতে চান না, তাঁরা নিজেদের গণতন্ত্রী, সমাজতন্ত্রী, আন্তর্জাতিকতাবাদী, কাউটস্কি, চের্নোভ, মার্তভ বলে অভিহিত করলেও তাঁদের আমরা শ্বেতরক্ষী বলেই দেখব।

(৫)

সমাজতন্ত্রের অর্থ হল শ্রেণির বিলোপ। এই বিলোপের জন্য প্রলেতারীয় একনায়কত্ব যথাসাধ্য করেছে। কিন্তু এক ধাক্কায় শ্রেণির বিলোপ সম্ভব নয়। প্রলেতারীয় একনায়কত্বের যুগ ধরে শ্রেণি আছে ও থাকবে। শ্রেণিগুলি যখন লোপ পাবে, তখন একনায়কত্বের প্রয়োজন থাকবে না। শ্রেণি লোপ পাবে না প্রলেতারীয় একনায়কত্ব ছাড়া। শ্রেণি থেকে গেছে, কিন্তু প্রলেতারীয়় একনায়কত্বের যুগে প্রত্যেক শ্রেণিরই রপান্তর ঘটেছে, বদলেছে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক। প্রলেতারীর একনায়কত্বের আমলে শ্রেণি-সংগ্রাম লোপ পায়় না, অন্য রূপ পরিগ্রহ করে মাত্র।

পুঁজিবাদে প্রলেতারিয়েত ছিল নিপীড়িত শ্রেণী, উৎপাদন-উপায়়ের উপর সর্ববিধ মালিকানা-বর্জিত শ্রেণি, এমন একমাত্র শ্রেণি যে সরাসরি ও সমগ্রভাবে ছিল বুর্জোয়ার বিপরীতে এবং তাই একমাত্র সেই শেষপর্যন্ত বিপ্লবী হবার ক্ষমতা ধরেছিল। বুর্জোয়াদের উচ্ছেদ করে ও রাজনৈতিক ক্ষমতা জয় করে প্রলেতারিয়েত হয়ে দাঁড়াল শাসক শ্রেণিঃ স্বহস্তে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ধরে রেখেছে সে, ইতিমধ্যেই সমাজীকৃত উৎপাদন-উপায়ের ব্যবস্থাপনা করছে, দোদুল্যমান, অন্তর্বর্তী অংশ ও শ্রেণিগুলিকে সে চালাচ্ছে, শোষকদের প্রতিরোধের বর্ধিত উদ্যোগকে সে দমন করছে। এ সবই হল শ্রেণি-সংগ্রামের বিশেষ কর্তব্য– এমন কর্তব্য যা প্রলেতারিয়েত আগে হাজির করেনি ও করতে পারত না।

শোষকদের, জমিদার ও পুঁজিপতিদের শ্রেণি অন্তর্হিত হয়নি এবং প্রলেতারীয় একনায়কত্বে সঙ্গে সঙ্গেই তা অন্তর্ধান করতে পারে না। শোষকেরা পরাজিত কিন্তু বিলুপ্ত নয়। তারা এখন বিশ্বপুঁজির অংশ ও শাখা হিসাবে পুঁজিবাদের একটা আন্তর্জাতিক ঘাঁটি। কিছু কিছু উৎপাদন-উপায়ের অংশবিশেষ তাদের হাতে রয়ে গেছে, রয়েছে টাকা, রয়েছে বিপুল সামাজিক সম্পর্ক। তাদের এই পরাজয়ের ফলেই তাদের প্রতিরোধের উদ্যোগ বেড়েছে শত গুণ, সহস্র গুণ বেশি। রাষ্ট্রিক, সামরিক, অর্থনৈতিক পরিচালনা ‘বিদ্যায়’ তারা অনেক বেশি পারদর্শী। ফলে সংখ্যায় তারা মোট জনগণের যেটুকু অংশ তার চেয়ে তাদের গুরুত্ব অতুলনীয় রকমের বেশি। শোষিতদের বিজয়ী অগ্রবাহিনীর বিরুদ্ধে, অর্থাৎ প্রলেতারিয়েতের বিরুদ্ধে ক্ষমতাচ্যুত শোষকদের শ্রেণি-সংগ্রাম হয়ে উঠেছে অপরিসীম রকমের বেশি তীক্ষ ও তীব্র। যদি বিপ্লবের কথা বলতে হয়, যদি সংস্কারবাদী মোহ দিয়ে তার অর্থ বদলে দেওয়া না হয় (যা করে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সমস্ত বীরেরা), তাহলে এর অন্যথা হতে পারে না।

শেষতঃ, সাধারণভাবে সমস্ত পেটি বুর্জোয়ার মতোই কৃষক-সম্প্রদায় প্রলেতারীয় একনায়কত্বের আমলেও একটা মাঝামাঝি,অন্তর্বতী অবস্থায় থাকেঃ একদিকে এরা হল মেহনতীদের একটা বেশ বড়ো (এবং পশ্চাৎপদ রাশিয়ায় বিপুল) অংশ, যারা জমিদার ও পুঁজিপতিদের হাত থেকে মুক্তিলাভের জন্য শ্রমিকদের সঙ্গে সাধারণ স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ, অন্যদিকে এরা হল বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র উৎপাদক, সম্পত্তিমালিক ও ব্যাপারী। এরূপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা অনিবার্যভাবেই প্রলেতারিয়েত ও বুর্জোয়ার মধ্যে দোদুল্যমান থাকবে। এবং এই শেষোক্ত দুইয়ের মধ্যে সংগ্রামের ফলে, সমস্ত সামাজিক সম্পর্কের অবিশ্বাস্য রকমের প্রচণ্ড ভাঙনের ফলে, পুরাতনের প্রতি, রুটিনের প্রতি, অপরিবর্তনীয়তার প্রতি ঠিক এই কৃষক ও সাধারণভাবে পেটি বুর্জোয়াদের অত্যধিক আসক্তির ফলে এ তো স্বাভাবিক যে এদের ক্ষেত্রে একপক্ষ থেকে অন্যপক্ষে গমন, দোলায়মানতা, ডিগবাজি, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি আমরা দেখতেই থাকব।

এই শ্রেণি বা এই সব সামাজিক অংশগুলির ক্ষেত্রে প্রলেতারিয়েতের কর্তব্য হল তাদের পরিচালনা করা, তাদের উপর প্রভাব প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করা। দোদুল্যমান ও অস্থিরমতিদের নিজেদের সঙ্গে টেনে নিয়ে যাওয়া– এই হল প্রলেতারিয়েতের কর্তব্য।

যদি আমরা সমস্ত মূল শক্তি বা শ্রেণির এবং প্রলেতারীয় একনায়কত্বের ফলে তাদের পরিবর্তিত পরস্পর সম্পর্কের তুলনা করি, তাহলে দেখব, দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সমস্ত প্রতিনিধিদের সাধারণভাবে ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমে’ সমাজতন্ত্রে উত্তরণের প্রচলিত পেটি বুর্জোয়া ধারণাটা কী অপরিসীম একটা তাত্ত্বিক গাঁজাখুরি, কী চরম নির্বুদ্ধিতা। এই ভ্রান্তির ভিত্তি হল গণতন্ত্র সম্পর্কে বুর্জোয়াদের কাছ থেকে পাওয়া এই কুসংস্কার যে গণতন্ত্র হচ্ছে শর্তহীন বা শাশ্বত এবং শ্রেণিবহির্ভূত একটি ধারণা। আসলে প্রলেতারীয় একনায়কত্বে গণতন্ত্রও উত্তীর্ণ হয় একেবারেই নতুন একটা পর্যায়ে এবং সমস্ত ও সর্ববিধ রূপকে স্বীয় অধীনে এনে শ্রেণি-সংগ্রামও উঠে যায় উচ্চতর একটা স্তরে। ।

স্বাধীনতা, সমতা, গণতন্ত্রের সাধারণ কথাগুলি আসলে পণ্য উৎপাদনী সম্পর্কের ছাঁচে-ঢালা একটা ধারণার অন্ধ পুনরাবৃত্তির সমতুল্য। এই সব সাধারণ বুলির সাহায্যে প্রলেতারীয় একনায়কত্বের প্রত্যক্ষ কর্তব্য সম্পাদন করতে যাওয়ার অর্থ সম্পূর্ণত বুর্জোয়ার তাত্ত্বিক এবং নৈতিক অবস্থানে চলে আসা। প্রলেতারিয়েতের দৃষ্টিভঙ্গিথেকে প্রশ্নটা দাঁড়ায় শুধু এইঃ কোন শ্রেণির নিপীড়ন থেকে মুক্তি? কোন শ্রেণির সঙ্গে কোন শ্রেণির সাম্য? গণতন্ত্র ব্যক্তিগত মালিকানার ভিত্তিতে, নাকি ব্যক্তিগত মালিকানা লোপের জন্য সংগ্রামের বনিয়াদে? ইত্যাদি।

‘অ্যান্টি-ডুরিং’ গ্রন্থে এঙ্গেলস বহু আগেই বলে গেছেন যে শ্রেণি বিলোপের অর্থে সাম্য না বুঝলে পণ্য-উৎপাদনী সম্পর্কের ছাঁচে-ঢালা চিন্তায় সাম্যের বোধটা পরিণত হয় একটা কুসংস্কারে। সাম্যের বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বোধের সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক বোধের পার্থক্যের এই প্রাথমিক সত্যটা ক্রমাগত ভুলে যাওয়া হচ্ছে। আর এ সত্য যদি না ভোলা হয়, তাহলে এ কথা স্বতঃস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, বুর্জোয়াকে উচ্ছেদকারী প্রলেতারিয়েত এর দ্বারা শ্রেণি বিলোপের দিকেই সবচেয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করছে, এবং তা সমাপনের জন্য প্রলেতারিয়েতকে শ্রেণি-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে রাষ্ট্রক্ষমতার যন্ত্রকে ব্যবহার করে এবং ক্ষমতাচ্যুত বুর্জোয়া ও দোদুল্যমান পেটি বুর্জোয়া প্রসঙ্গে সংগ্রাম, প্রভাব-বিস্তার ও চাপের বিভিন্ন রকম পদ্ধতি প্রয়োগ করে।

(অসম্পূর্ণ লেখা) ৩০/১০/১৯১৯

‘প্রাভদা’, ২৫০ সংখ্যা ৭ নভেম্বর, ১৯১৯

ভ. ই. লেনিন, ‘সংগৃহীত রচনাবলি’, ৫ম রুশ সংস্করণের বয়ান অনুসারে, ৩৯ খণ্ড, ২৭১-২৮২ পৃঃ

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ১৩ সংখ্যা ৫ নভেম্বর ২০২১