৫ ডিসেম্বর৷ ধর্মঘটে স্তব্ধ হয়ে গেল গোটা ফ্রান্স৷ ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষের বিক্ষোভ মিছিলে কেঁপে উঠল রাজধানী প্যারিস সহ দেশের অসংখ্য শহর–নগর৷ সরকারের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা ক্ষোভের এত সোচ্চার প্রকাশ গত কয়েক দশকে দেখেনি ফ্রান্সের মানুষ৷
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ ঘোষণা করেছেন পেনশনের নিয়ম বদলানো হবে৷ অবসরের বয়স বাড়িয়ে দিতে চাইছেন তিনি৷ এতদিন ৬২ বছর বয়সে অবসর মিলত শ্রমিক–কর্মচারীদের৷ নতুন নিয়মে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক–কর্মচারী বাধ্য হবেন আরও বেশি বয়স পর্যন্ত কাজ করতে৷ না হলে হারাতে হবে অবসরকালীন নানা সুযোগ–সুবিধা৷ এর বিরুদ্ধে এ দিন পথে নেমেছিলেন রেল কর্মচারী, শিক্ষক, হাসপাতাল–কর্মী, ছাত্রছাত্রী সহ সর্বস্তরের শ্রমিক–কর্মচারী সাধারণ মানুষ৷ বন্ধ ছিল ট্রেন, বাস এমনকি বিমান পরিষেবাও৷ খোলেনি স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়৷ ফ্রান্সে গত বছর থেকে লাগাতার চলছে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন৷ এ দিন ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীরাও নানা শহরে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন৷ স্লোগান ওঠে– মাকরঁ গদি ছাড়ো৷
বিক্ষোভ ভাঙতে যথারীতি ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ৷ প্যারিস সহ অন্যান্য শহরে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়৷ চলে ব্যাপক ধরপাকড় ও খানাতল্লাশি৷ কিন্তু পিছু হঠতে রাজি নন আন্দোলনকারীরা৷ ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকা ফ্রান্সের একটি শ্রমিক সংগঠন ‘জেনারেল কনফেডারেশন অফ লেবার’–এর সাধারণ সম্পাদককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, যতদিন না সরকার পেনশনের নতুন নিয়ম প্রত্যাহার করছে, ততদিন তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন৷
এর আগে ১৯৯৫ সালে আরও একবার পেনশনের নিয়ম বদলাতে চেয়েছিল ফ্রান্স সরকার৷ সেখানকার শ্রমজীবী মানুষের দীর্ঘ লাগাতার আন্দোলনের মুখে পিছু হঠতে হয়েছিল তাদের৷ কিছুদিন আগে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের চাপে প্রেসিডেন্ট মাকরঁ বাধ্য হন ভরতুকি বাড়িয়ে জ্বালানির দাম কমাতে৷ আন্দোলনের এই জয় আশা জাগিয়েছে মানুষের মনে৷ তাই পেনশন সংস্কারের নামে সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার সরকারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনেরই পথ ধরেছেন ফ্রান্সের খেটে–খাওয়া মানুষ৷
ভারত সহ দেশে দেশে সাধারণ মানুষের উপর শাসক শ্রেণির আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এই আন্দোলন অনুপ্রেরণা জোগাবে৷