ভারতের ৯০ শতাংশ শিশু ন্যূনতম খাদ্য পায় না৷ প্রতি ৫টির মধ্যে একটি শিশু কম ওজনের৷
সদ্য প্রকাশিত বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান আগের থেকে আরও পিছিয়েছে৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ইউনিসেফের হিসেবে, পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যুহারে ভারত প্রথম৷ ভারতের অর্ধেক শিশুই অপুষ্টির শিকার৷ গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ৷
মূলত চারটি মাপকাঠির নিরিখে ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স’ তৈরি করা হয়৷ অপুষ্টি, পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের বয়সের তুলনায় কম ওজন, পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা, পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যুর হার– এগুলির ভিত্তিতে ১১৭টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০২ (শূন্য থেকে শুরু)৷ এমনকি তালিকায় শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলিও ভারতের উপরে রয়েছে৷ আর্থিক দিক থেকে অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা আফ্রিকার দেশ নাইজার পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ভারতের থেকে৷
দেশের বেশিরভাগ শিশু কেন অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে, বহু মা–বাবা কেন তাদের সন্তানকে ন্যূনতম খাবারের জোগান দিতে পারছেন না, তা নিয়ে দেশের শাসকরা নীরব৷
মিড ডে মিল নিয়ে সরকারের চূড়ান্ত অবহেলাতেই প্রমাণ হয়ে যায়, শিশুদের পুষ্টি নিয়ে শাসকরা এতটুকুও ভাবিত নয়৷ সম্প্রতি মিড ডে মিল প্রকল্প বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চলেছে মোদি সরকার৷ এই প্রকল্পে এমনিতেই বরাদ্দ নামমাত্র৷ সম্প্রতি ১৩ পয়সা ও ২০ পয়সা বাড়িয়ে বিজেপি সরকার প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিকের শিশুদের জন্য বরাদ্দ করেছে মাথাপিছু যথাক্রমে ৪.৪৮ টাকা ও ৬.৭১ টাকা মাত্র এই টাকায় বর্তমান বাজার দরে কোন পুষ্টিকর খাদ্য কতটুকু মিলবে?
অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো হয় না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে না, নানা সংক্রমণ হয়৷ এমনকি সাধারণ অসুখে মৃত্যুপর্যন্ত হয়৷ অপুষ্ট শিশুদের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে ১২ গুণ বেশি৷ এই ধরনের শিশুরা যদি বেঁচেও থাকে, তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠা শিশুদের উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে পারে না৷ স্কুলে–কলেজে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কিংবা কাজের ক্ষেত্রে সর্বদা এই পার্থক্য বয়ে বেড়াতে হয় তাদের৷ ফলে অর্থনৈতিক ভাবেও তারা সচ্ছল হয় না৷ অসীম দারিদ্রের জীবনই তাদের ভবিতব্য৷ এসব কি বিজেপি সরকারের নেতা–মন্ত্রীরা জানেন না?
দীর্ঘদিন কেন্দ্রের মসনদে আসীন থাকা কংগ্রেস সরকার শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণে কোনও পদক্ষেপ করেনি৷ বর্তমানে ক্ষমতায় আসীন বিজেপি সরকার ‘বেটি বচাও, বেটি পড়াও’, ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’ স্লোগান দিয়েই দায়িত্ব সেরেছেন৷ এদের কাছে অপুষ্টি, দারিদ্র ভোট–রাজনীতিতে ফয়দা তোলার পুঁজিমাত্র৷ দেশের বিপুল সংখ্যক শিশু যে পুষ্টির অভাবে পরিপূর্ণ ভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না, তা নিয়ে তাদের কোনও হেলদোল নেই৷ কেন নেই? তা কি অর্থের অভাবের জন্য? না৷ সরকার দেশের পুঁজিপতিদের সর্বোচ্চ মুনাফার ব্যবস্থা করে দিতে সরকারি তহবিল থেকে যে পরিমাণ টাকা ঢালে তার একটা ক্ষুদ্র অংশ এই খাতে বরাদ্দ করলেই শিশুদের জীবন থেকে ক্ষুধাকে নির্মূল করা যেত৷ যেভাবে মন্ত্রী–সাংসদদের পিছনে টাকা ঢালা হচ্ছে তা না করে তার একাংশ শিশুদের পুষ্টির জন্য বরাদ্দ করা যেত৷ কিন্তু সরকার তা করে না৷ তার কারণ এই সরকার জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী নয়, পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষাকারী৷ তাই সমাজের দরিদ্র, নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের তারা ভবিষ্যৎ ভারতের নাগরিক বলে মনে করে না৷ তাদের সহ নাগরিক বলে মনে করে না৷ তাদের নাগরিকের সমান মর্যাদা দিতে তারা রাজি নয়৷ নানা আন্তর্জাতিক বাধ্যতার কারণে তাদের এমন প্রকল্পগুলি নিতে হয়েছে৷ তাই আন্তরিকতার কোনও ছোঁয়া এই মিড–ডে মিল প্রকল্পে নেই৷ নেতা–মন্ত্রীদের, সমাজের উঁচু তলার মানুষদের সন্তানরা যদি এই প্রকল্পে যুক্ত থাকত, তবে কি রাষ্ট্র পারত ভিক্ষার মতো এমন ক্ষুদকুঁড়ো ছুঁড়ে দিতে? শুধুমাত্র এই একটা প্রকল্প থেকে সরকারের চরিত্র স্পষ্ট হয়ে যায়৷ সেজন্য সম্পদশালীদের তালিকায় ভারত তরতর করে এগিয়ে গেলেও শিশু–পুষ্টির তালিকায় তলানিতে৷