সমাজতান্ত্রিক নভেম্বর বিপ্লব হওয়ার পর পরই সোভিয়েত ইউনিয়ন শান্তির লেনিনবাদী কর্মনীতি অনুসরণ করে আগ্রাসী যুদ্ধ নিবারণ, সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ এবং রাষ্ট্রগুলির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি রূপায়িত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে গেছে। পুঁজিবাদী বিশ্ব যদি সে কথায় কর্ণপাত করত তা হলে হয়তো পৃথিবীর এক জটিল সমস্যার চিরতরে নিরসন হয়ে যেত।
দীর্ঘদিন ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ। ইজরায়েল যেভাবে হামলা চালাচ্ছে তা গণহত্যা ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক আইন অগ্রাহ্য করে গাজায় স্কুল, হাসপাতাল এমনকি ত্রাণসামগ্রীর গুদামেও বোমা ফেলছে ইজরায়েল।
এই যুদ্ধে যে বিপুল অর্থ ও প্রাণশক্তির অপচয় হচ্ছে তার সঠিক হিসাব কোনও দিনই পাওয়া যাবে না। যুদ্ধবাজ দেশগুলো শত্রু দেশকেই শুধু ধ্বংস করে তাই নয়, যুদ্ধের ফলে তার নিজের দেশের মানুষও খাদ্য-শিক্ষা-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। তাই কোনও সাধারণ মানুষই যুদ্ধ চায় না। অথচ একের পর এক যুদ্ধ হয়ে চলেছে।
মহান লেনিন দেখিয়েছেন, সাম্রাজ্যবাদ যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন কেন ও কী ভাবে যুদ্ধের সম্ভাবনাও টিকে থাকবে। দেখিয়েছেন, সাম্রাজ্যবাদের যুগে যুদ্ধ আসলে একটা ব্যবসা। শাসক একচেটিয়া পুঁজিপতি শ্রেণির শোষণে গোটা বিশ্বের খেটে-খাওয়া মানুষ আজ নিঃস্ব। তাদের কেনাকাটা করার ক্ষমতা ক্রমে কমে আসছে। শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নিজস্ব নিয়মেই বিশ্ব জুড়ে আজ উৎপাদিত পণ্যের বিক্রির বাজারে ভয়ঙ্কর মন্দা। এই অবস্থায় নিজে যুদ্ধ বাধিয়ে এবং অন্য দেশগুলিকে যুদ্ধে উস্কানি দিয়ে অস্ত্র ব্যবসার রাস্তা খুলে দেওয়া ছাড়া পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির নিজেদের টিকিয়ে রাখার অন্য উপায় নেই।
তাই, প্রার্থনা-শুভকামনা অথবা পূজা-আর্চা করে এই যুদ্ধ-রোগ প্রতিরোধ করা যাবে না। যুদ্ধের জন্মদেওয়া মুনাফাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে মানুষের প্রয়োজনভিত্তিক সমাজের প্রতিষ্ঠা না হলে পৃথিবীর বুক থেকে যুদ্ধের বিভীষিকা দূর করা যাবে না।
সুশান্ত সাহু
সেকপুরা, পশ্চিম মেদিনীপুর