নির্বাচনের ঢাক বেজে উঠেছে। জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যায় জর্জরিত মানুষকে ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনের মোহে বুঁদ করে রাখতে চাইছে। দেখা গেল ঠিক তখনই ২৩ মার্চ একদল তরুণ-তরুণী অন্য রকম বার্তা পৌঁছে দিল শহরতলির মানুষের কাছে।
এ দিন বিশেষ কাজে সাতসকালে বজবজে পৌঁছে দেখি স্টেশনের সামনে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী শহিদ-ঈ-আজম ভগৎ সিং-এর আত্মোৎসর্গ দিবস পালন করছে। তারা বলছে, নাগরিকত্ব মানুষের জন্মগত অধিকার। হাতে রয়েছে বিভ্রান্তিকর সিএএ বাতিলের দাবি-পোস্টার। স্টেশন চত্বরের পরিবহণ শ্রমিকরাও ওদের সাথে সামিল হয়েছেন। ওই কর্মসূচি থেকে তখন ভগৎ সিং-এর চিন্তাধারায় বর্তমান সময়ে মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখছেন একজন। পথচলতি সাধারণ মানুষ ও রেলযাত্রীরা দাঁড়িয়ে শুনছেন সেই বক্তব্য। কিন্তু ওরা কারা? হাতের পোস্টার ও ব্যানার দেখে জানা গেল ওরা মানবাধিকার সংগঠন সিপিডিআরএস-এর কর্মী-সমর্থক।
খানিক পরে দেখি, বাওয়ালি মোড়ে রাস্তার উপর জটলা। একদিকে অভিভাবকদের হাত ধরে ছোট শিশুরা, অন্য দিকে একদল তরুণ-তরুণী। দেখা গেল এখানেও বিপ্লবী ভগৎ সিং স্মরণে কর্মসূচি চলছে। জানা গেল, এখানে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদ বাওয়ালি শাখার সহযোগিতায় নবউন্মেষ সামাজিক মঞ্চের সদস্যরা বিকল্প শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করেন। বর্তমান সময়ে অপসংস্কৃতির গড্ডলিকা স্রোতের বিপরীতে শিশুদের রক্ষার উদ্দেশ্যে ওরা এই কর্মকাণ্ড নিয়েছে। কর্মসূচি শেষ হলে কৌতুহল নিয়ে ওদের সাথে বাওয়ালি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে শিক্ষাকেন্দ্রের পড়ুয়াদের সামনে ভগৎ সিং চর্চার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক নরেন্দ্রনাথ কুলে। উপচে পড়া হলে ওই অঞ্চলের শিক্ষানুরাগী ও সমাজকর্মী বাসুদেব কাবড়ি ও নবউন্মেষ সামাজিক মঞ্চের সংগঠক সঞ্জয় দাস এলাকায় এলাকায় সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলতে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আবেদন রাখেন।
ফেরার পথে চায়ের দোকানে গিয়ে শুনি ওদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা। কেউ বলছেন, ‘ভোটের মিটিংয়ের বদলে বিপ্লবী ভগৎ সিং স্মরণে এত লোকজন! একজন বৃদ্ধ বলে উঠলেন, ‘এত বছর ভোট দিয়ে তো আমাদের জীবনে বদল কিছু ঘটল না। কিন্তু ওদের দেখে কেমন যেন ভরসা হয়, ওরাই পারবে বদলাতে’। ফেরার ট্রেনে উঠে ভাবছিলাম, কবে এই শক্তি আরও বড় হয়ে এ পঙ্কিল জীবন থেকে মানুষকে মুক্তি দেবে। অপেক্ষা তারই।
ভক্তি বিশ্বাস
গোবরডাঙা, উত্তর ২৪পরগণা