পাঠকের মতামতঃ নির্বাচনে এই বিপুল খরচের উৎস কী

সর্বংসহা ভারতবাসী আরও একটা লোকসভা ভোট দেখল, সাথে অজস্র প্রতিশ্রুতির বুলি, যা আদৌ কোনও দিনও হয়ত পূরণ হবে না। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের পীঠস্থানে এইভাবেই ভোট আসে ভোট যায় কিন্তু আম-জনতার হাল বিশেষ বদলায় না।

প্রশ্ন হল, এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যে বিপুল পরিমাণ খরচ প্রার্থীর জন্য ব্যক্তিগতভাবে কিংবা দলের তরফ থেকে করা হয় সেটা আসে কোথা থেকে? যাঁরা সাংবিধানিক ও আভিধানিক অর্থেই ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ হতে চান তাঁদের নির্বাচনে জেতাবার জন্য এত খরচ করতে হয় কেন? যদি আমরা এই সারসত্যকে স্বীকার করে নিই যে নির্বাচনে খরচ হতে থাকা সমস্ত অর্থই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাধারণ মানুষের, তা হলে তো সেই সাধারণ মানুষের এটুকু জানার অধিকার আছে যে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা বাহিত হয়ে এই যে বিপুল অর্থের জোগান– এর উৎস কোথায়, কী ভাবে তা প্রবাহিত হচ্ছে এবং সবশেষে তা কোথায় গিয়ে পতিত হচ্ছে? এই যে এত প্রচার, তার জন্য এত জনসভা, দেশ কিংবা রাজ্যের এ মাথা ও মাথা কয়েক ঘণ্টায় চষে ফেলার জন্য কপ্টার কিংবা চপার কিংবা চার্টার্ড ফ্লাইটের এত আয়োজন সদা তৈরি থাকছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, মিটিং-মিছিলের সাফল্য দেখানোর জন্য জনতা-জনার্দনকে বাড়ি থেকে বয়ে এনে হাজির করিয়ে তাঁদের উদরপূর্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং কখনও কখনও ভোজন দক্ষিণা দিয়ে বিদেয় করা হচ্ছে– এ সবের জন্য বিপুল খরচ হচ্ছে। এছাড়া ফ্লেক্স, ব্যানার, ফেস্টুন, ছোট-বড়-মাঝারি মাপের নেতার জন্য কনভয়ে গাড়ির লাইন বাড়াতেও তো রাজনৈতিক দলগুলোর বিরাট খরচ হয়!

কিন্তু মূল কথাটি হল, যে পথে যে ভাবেই অর্থের জোগান আসুক না কেন তা কিন্তু সরাসরি জনগণেরই টাকা। জনগণের অর্থরাশি এভাবে খোলামকুচির মতো কি সত্যিই ব্যবহার করা যায়? এ প্রশ্ন সার্বিকভাবে উঠে আসছে না কেন? বাস্তবে প্রশাসন বা রাজনৈতিক স্তরেও এই অর্থ সরবরাহ প্রতিরোধের কোনও কার্যকর প্রয়াস নেওয়া হয় না। দেশে আইন আছে, প্রশাসন আছে, নির্বাচন কমিশনের নিয়মাবলি আছে, কিন্তু সবই ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’। জনগণের টাকায় এখনকার রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারের তালিকায় আমরা প্রত্যক্ষভাবে গণচেতনামূলক, আপাতভাবে জীবন-ছোঁয়া বিষয়গুলিকে স্থান পেতে দেখি না।

এই ব্যবস্থায় ভোটারকে শুধুই বোবা-কালা হয়ে থাকতে হয় নির্বাচনের রঙ্গমঞ্চে। তাই প্রয়োজন তথ্যগত অজ্ঞতা ও সমাজ সম্পর্কে উদাসীনতার ব্যাধি কাটানো। প্রত্যেকের কাছে একটাই বিনম্র আবেদন, জনমানসে প্রশ্ন রাখুন– আমজনতার ঘাম-রক্তের এই যে বিপুল টাকা নির্বাচনী প্রচারে একপ্রকার হোস-পাইপে করে খরচ হল, তা কি সাধারণ মানুষের প্রকৃত উন্নয়নে খরচ করা যেত না?

বিশ্বদীপ ভট্টাচার্য

অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগণা