পাঠকের মতামতঃ নারী ক্ষমতায়নের ফাঁপা বুলি

ফাইল চিত্র পুরুলিয়া ৮ মার্চ ২০১৬

 ‘নারীশক্তি কি ইয়ে উর্জা হি হামারে প্রাণবায়ু হ্যায়’ অর্থাৎ নারীর এই জীবনদায়ী শক্তিই আমাদের বেঁচে থাকার রসদ। মোবাইলের রেডিও থেকে বাক্যটা শুনে মনটা ভরে গেল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৯৯তম ‘মন কি বাত’-এ উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট বা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বলতে গিয়ে এই সুন্দর বিবরণটি দিয়েছিলেন। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে রাস্তাঘাটেও কম আলোচনা হয় না। কান ফেস্টিভাল থেকে অপারেশন সিঁদুর সর্বত্রই নারীর ক্ষমতায়ন। ওদের চোখ মুখে ‘আমরা নারী আমরা সব পারি’ এরকম একটা অনুভূতি প্রকাশ প্রায় ক্রমশ।

আচ্ছা সত্যিই কি নারীরা সব পারেন? তাঁদের পারার জন্য সমস্ত প্রতিবন্ধকতা নির্মূল হয়েছে? সরকার কি তা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে? নাকি নারী স্বাধীনতার বুলি আওড়ে স্বেচ্ছাচারিতার মোড়কে মুড়ে শুষে নিচ্ছে সব প্রাণরস?

সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের আখের খেতে কাজ করার জন্য জরায়ু অপসারণ করেতে হয়েছে ৮৪৩ জন মহিলা শ্রমিককে, যাদের মধ্যে ৪৭৭ জনের বয়স ৩০-৩৫-এর মধ্যে।

জরায়ু অপসারণের কারণ ঋতুস্রাব জনিত কারণে একদিন কামাই হলে মালিক কেটে নেয় ৫০০ টাকা। তাই এই পথ অবলম্বন করতে বাধ্য হন তাঁরা। কারণ পেট বড় বালাই। অগত্যা জরায়ু অপসারণ। তাতে দেহ ক্ষয় হয় ঠিকই। মৃত্যুভয়ও থাকে। কিন্তু একদিন কামাই করে মালিকেব রোষে পড়ে কাজ হারানোর ভয় থাকে না।

১৪৬ কোটি জনসংখ্যার গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে যেখানে মোট ভোটার ৯৯.১ কোটি। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫১.২ শতাংশ ও মহিলা ভোটার ৪৮.৩ শতাংশ। লোকসভায় শতকরা ১৩.৬ শতাংশ মহিলা সাংসদ প্রতিনিধিত্ব করছেন। রাজ্যসভায় ১০.৭ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি সর্বত্রই উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের ঝলকানি। সেই ঝলকানিতে চোখ ঢেকে যায়। অথচ তাঁরা পার্লামেন্টে কিংবা পার্লামেন্টের বাইরে প্রশ্ন করেন না– কেন এত বড় ঝুঁকি নিতে হয় এই মহিলা শ্রমিকদের?

উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের ঝলকানি হয়ত আরও বাড়বে। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কোনও এক সুপার উয়োম্যান চাঁদে গিয়ে হয়তো জমি কিনবে। শুধু ব্রাত্য রয়ে যাবে সত্যিকারের খেটে খাওয়া মহিলারা।

শবনম আখতারি, বেলেঘাটা