পাঠকের মতামতঃ টাকার জোরের গণতন্ত্র!

বিদায়ী সপ্তদশ লোকসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ঘোষিত সম্পদের গড় প্রায় ২১ কোটি টাকা– ২১-এর পর ৭টা শূন্য বসাতে হয়েছে! (যা ঘোষণা হয়নি তা নিয়ে কোনও কথাই হচ্ছে না। যেমন, কে কোন আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, কিংবা বিদেশের ব্যাংকে কার কত টাকা আছে ইত্যাদি)কাদের প্রতিনিধি তাঁরা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া যাক। ২০২৩ সালেও ভারতের দারিদ্র রেখা ছিল শহরে মাসে ১৯০০ টাকা ও গ্রামাঞ্চলে ১৬০০ টাকার সামান্য বেশি। বর্তমানে মাসে যাদের আয় ১৬০০-১৯০০ টাকা, তারা দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে পারবে কি না, এই প্রশ্নটা স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে। সরকারি হিসাব মেনে নিলেও দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যাটা দেশে ৫ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ ১৩০ কোটির দেশে, ৬ কোটি ৫০ লক্ষের বেশি মানুষ এখনও দারিদ্রসীমার নিচে।

মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে হিসাবটা কেমন? দেশের মোট কর্মরত জনসংখ্যার ১০ শতাংশের কম সংগঠিত ক্ষেত্রে নিয়োজিত। চাকরিজীবী শ্রেণির মধ্যে মাথাপিছু গড় মাসিক আয় ৩২ হাজার টাকার কাছাকাছি। অতি ধনী ও উপরের এই ১৫ শতাংশের বাইরের বাকি মানুষদের আয় এর মাঝামাঝি।

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ধরা হলে পশ্চিমবঙ্গে একজন সাংসদ গড়ে ২১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। সাংসদদের ৪০ শতাংশ নিজেদের পেশা হিসেবে পূর্ণ সময় রাজনীতি বা সমাজসেবার কথা উল্লেখ করেছেন। তা হলে তাঁরা এমন বিপুল ঘোষিত সম্পদের মালিক হন কী ভাবে? ক্ষেত্র বিশেষে সমাজসেবা কি তা হলে অতি অর্থকরী?

তা হলে এই অতি-ধনী সাংসদরা দেশের জনসাধারণের কোন অংশের প্রতিনিধি? কোন অর্থে তাঁরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন? দারিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবারের সদস্যদের জীবন কেমন ভাবে কাটে সে কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল। কিন্তু কোনও মধ্যবিত্তের জীবনের সংকট, তাদের আশা-আকাঙক্ষা, উত্থান-পতনের কোনও আঁচও কি কোটি কোটি টাকার মালিক এইসব প্রতিনিধিরা টের পান? তাঁদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব?

গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাটিকে যে ভাবে ব্যয়বহুল করে তোলা হয়েছে, তাতে কি কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং নির্বাচিত হওয়া সম্ভব? টাকার জোরই যদি জনপ্রতিনিধি হওয়ার একমাত্র শর্ত হয়ে দাঁড়ায়, তবে তাকে আর গণতন্ত্র বলা যায় কি না, ভাবা দরকার।

ডাঃ দেবেন্দ্র প্রসাদ মহন্ত

সল্টলেক, কলকাতা