পাঠকের মতামতঃ জাল নোট বন্ধে চাই সঠিক পদ্ধতি

 

সম্প্রতি এক রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে, গত এক বছরে ৫০০ টাকার জাল নোট ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এই হিসেব শুধুমাত্র এক বছরে যে পরিমাণ জালনোট বাজেয়াপ্ত হয়েছে তার পরিসংখ্যান। ধরাছোঁয়ার বাইরে আরও যে বিপুল পরিমাণ জাল নোট রয়েছে তার হিসেব এই পরিসংখ্যানে নেই। তা হলে ২০০০ টাকার নোটের মতো ৫০০ টাকার নোটও কি আবার বাতিল করা হবে? শোনা যাচ্ছে ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের এক শরিক দলের নেতা ৫০০ টাকার নোট বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এই নোট বাতিলের মাধ্যমে আদৌ জাল নোটের কারবার, কালো টাকা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ কি সম্ভব হবে ?

২০১৬ সালে রাতারাতি এক ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১০০০ এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিল করেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসকদলের বক্তব্য ছিল এর ফলে জাল নোটের কারবার ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করা যাবে। পাশাপাশি কালো টাকার কারবারিরা জব্দ হবে। তাতে গরিব সাধারণ মানুষের দুর্দশাই শুধু বেড়েছিল। নোট বাতিলের ফলে দেশের জনসাধারণের দৈনন্দিন সমস্যাগুলিরও কোনও সুরাহা হয়নি। ২০১৬ সালে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সময় একটি রেস্পিরা সিরাপের দাম ছিলো ২০ টাকা। পশ্চিমবঙ্গের একজন জুট মিল শ্রমিকের সর্বোচ্চ দৈনিক বেতন ছিল (শতকরা ১ শতাংশ শ্রমিক) ৫০০ টাকার কম। বর্তমানে রেস্পিরা সিরাপের দাম ৬৩ টাকা এবং একজন জুটমিল শ্রমিকের সর্বোচ্চ দৈনিক বেতন প্রায় ৬০০ টাকা (শতকরা ০.৫ শতাংশ শ্রমিক)।

নোট বাতিলের ন’বছরে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকের বেতন বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ অথচ জীবনদায়ী ঔষধের দাম তিনগুণ বেড়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে, পেট্রল, ডিজেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দামবৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু জাল নোটের কারবার আরও বেড়েছে। কালো টাকা কত উদ্ধার হয়েছে তার কোনও হিসাব সরকার মানুষকে দেয়নি। ভারত এখনও দেশবিরোধী ও সন্ত্রাসবাদ মুক্ত হয়নি। হয়তো আবার নোট বাতিল হবে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এর দ্বারা দেশের কোন শ্রেণির জনগণ লাভবান হবে। পরিশেষে একটি কথাই বলার– দেশের দুর্দশা ঘোচাতে শুধুমাত্র হাতুড়ে টোটকা নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কারণ নির্ণয় করে সমাধানের সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন জরুরি।

সুজয় দাস, কলকাতা

এই লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা  ২০ – ২৬ জুন ২০২৫ এ প্রকাশিত