রাজ্যে কলেজে কলেজে ‘ইন্ট্রো’-র নামে ব়্যাগিংয়ের অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ডায়মন্ডহারবার মেডিকেল কলেজের ছাত্র হিসাবে দেখছি, এই কলেজও ব্যতিক্রম নয়। দিনের পর দিন শাসক দলের ছাত্রনেতারা ছাত্রদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করছে। ছাত্রদের ন্যায়-নীতি, মূল্যবোধ ও চরিত্রের উপরে খারাপ প্রভাব ফেলছে।
জুনিয়র ছাত্ররা প্রতি বছর ব়্যাগিংয়ের শিকার হয়। পরে সিনিয়র হয়ে তারাও জুনিয়রদের উপর একই জিনিস চাপিয়ে দেয়। অজুহাত হিসাবে বলে, এতে নাকি সিনিয়রদের সঙ্গে ‘ভালো সম্পর্ক’ গড়ে উঠবে। ব়্যাগিং বা ইন্ট্রোর মধ্য দিয়ে কোনও সুস্থ ও সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে কি? নবাগত জুনিয়র ছাত্ররা কোনও রকম ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট চায় না বলেই এদের সব কথা মেনে নেয়। যারা প্রতিবাদ করে তাদের নানা ভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলে কলেজ ও হোস্টেলে। তাদের দিয়ে শুধু জোর করে নানা কাজ করিয়ে নেওয়া নয়, মেয়েদের সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করতে বাধ্য করা, অশালীন আচরণে প্ররোচিত করা, জোর করে মাদক খাওয়ানো, নারীদেহ নিয়ে নোংরা আলোচনাকে স্বাভাবিক বিষয় করে তোলা– ইত্যাদির মধ্য দিয়ে দিনের পর দিন এরা ছাত্রদের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে, মেডিকেল কলেজগুলির সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করে চলেছে।
একমাত্র ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার। ব়্যাগিং বন্ধ করার জন্য ছাত্রদের সাহায্য করা থেকে শুরু করে র্যাগিং বিরোধী প্রচার করা হয়েছে বিভিন্ন কলেজ সহ ডায়মন্ডহারবার মেডিকেল কলেজেও। শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি সেই ব়্যাগিং বিরোধী পোস্টার ছিঁড়েছে। এ থেকেই কি স্পষ্ট হয় না যে, ব়্যাগিং বিষয়টা শাসক দলের মদতেই হচ্ছে? তার মানে তারা তো এই ব়্যাগিং-সংস্কৃতিরই চর্চা করতে চায়! এরপরেও কি আপনারা লোকসভা নির্বাচনে এই দলকে ভোটে জিততে সাহায্য করবেন?
টিএমসিপি যখন ব়্যাগিং-এর মধ্য দিয়ে ছাত্রদের অমানুষ বানাতে চায়, তখন কলেজগুলিতে বড় মানুষদের জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা কোন সংগঠন বলে? উন্নত নীতি-আদর্শ চর্চার কথা কারা বলে? কলেজে কলেজে ছাত্রস্বার্থ বিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন কারা গড়ে তোলে? এমনকি ছাত্রদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলি নিয়ে কলেজ-প্রশাসনের কাছে কারা যায়? অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, টিএমসিপি কখনই নয়। একমাত্র ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও যে কোনও পরিস্থিতিতে ছাত্রদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। এআইডিএসও জানে, প্রকৃত শিক্ষা চেতনা দেয়, যা কখনও অন্যায় করতে বা সহ্য করতে শেখায় না। অতীতের বড় মানুষ ও বিপ্লবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে, এ যুগের মহান মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের আদর্শে বলীয়ান এআইডিএসও কলেজে কলেজে ব়্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই আদর্শকে ছাত্র সমাজের মধ্যে যত ছড়িয়ে দেওয়া যাবে, ব়্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে তত প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।
শান্তনু পাল
ডায়মন্ডহারবার মেডিকেল কলেজ