আজ জলের মতো পরিষ্কার যে, বেপরোয়া দুর্নীতিচক্রের হাতেই ঘটেছে অভয়াকাণ্ড। এই দুর্নীতির কোথায় শিকড়, কী ভাবে তা চলে, সেটাই মানুষ জানতে চায়। সকলেরই জানা, এই পরিস্থিতি ভারতের সমস্ত জায়গাতেই। তাই এর উন্মোচনে যারা ভয় পায়, তারা আসলে ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’। সত্য কতটা সামনে আসবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমাদের লড়াইয়ে তীব্রতার উপর। কোনও অবস্থাতেই আন্দোলন থামতে দিলে হবে না এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষই যে শেষ কথা তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ইতিহাসের শিক্ষা– মানুষ অধিকার চাইলেই শাসক তা দেয় না। মানুষকে তা কেড়ে নিতে হয়। শাসকের হাতে আইন, পুলিশ, প্রশাসন। সেগুলো কাজে লাগিয়ে সে কণ্ঠরোধ করতে চায় প্রতিবাদী মানুষের। সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচারের বিচার সে দিতে চায় না। মানুষ এটা জেনেই লড়তে আসে। লড়াই যদি তীব্রতর হয় অনেক সময় কিছু দাবি আদায় করা যায়। লড়াই শাসকের মনে ভয় ধরায়। এটাই আসল জয়।
মানুষ লড়ে তার বিবেকের তাড়নায়। লড়ে সে নিজেকে ঠকাতে চায় না বলে। সে জানে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না গড়ে উঠলে অন্যায় বাড়তেই থাকে। এই লড়াইয়ের সব থেকে বড় প্রাপ্তি শিরদাঁড়াযুক্ত মানুষের সন্ধান পাওয়া, আর অভিজ্ঞতা পাওয়া– যা নতুন লড়াইয়ের শিক্ষা হয়ে কাজ করবে। যেদিন পুলিশ ব্যারিকেড তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল, সেদিনই লড়াই জয়যুক্ত হয়েছিল। স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল অবস্থা সামনে এল, রাজনৈতিক দলগুলির চরিত্র সামনে এল। যারা এখন সাধু সাজার চেষ্টা করছে, তাদেরও কুকর্ম মানুষের সামনে এল– এখানেই লড়াইয়ের সার্থকতা। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও উন্নত হবে কি না, অভয়ার বিচার মিলবে কি না, ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিিচত হবে কি না– এ সবই নির্ভর করছে আন্দোলনের তীব্রতার ওপর।
মনে রাখতে হবে, শাসকের বিরুদ্ধে, গোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এ লড়াই কঠিন। একদিন মিছিলে হাঁটলেই ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না। তাই, আন্দোলন করে কী হল– এটা না ভেবে দরকার লড়াইকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যাতে দাবি আদায় হয়। এই লড়াই আমাদের শেখায় পথে একবার নামতে পারলে বন্ধুর অভাব হয় না। একটা মোমের আলো থেকে জ্বলে ওঠা হাজার হাজার মোমবাতি রাতের অন্ধকার মুছে দেয়।
গৌতম দাস, মালদা