সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ৮ জুলাই এক বিবৃতিতে বলেন, রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পিত নিষ্ক্রিয়তা এবং রাজ্য পুলিশের সচেতন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সক্রিয়তায় পঞ্চায়েত নির্বাচন পুরোপুরি প্রহসনে পরিণত হয়েছে। পুলিশ এবং কমিশনের চোখের সামনেই শাসক দলের হয়ে সমাজবিরোধীরা বোমাবাজি করে, গুলি চালিয়ে মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু করে ৪৩ জনকে হত্যা করেছে। ছাপ্পা ভোট দেওয়া, এক ঘণ্টার মধ্যে বাক্সে সিল দিয়ে ভোট শেষ করা, ভোটকেন্দ্রে ভাঙচুর, ব্যালট বক্স নিয়ে পালানো এবং ভোটার ও ভোটকর্মীদের উপর হামলার যে সব ঘটনা রাজ্য জুড়ে ঘটেছে, এরপর এটাকে নির্বাচন কিংবা গণতন্ত্র কোনওটাই বলা যায় না।
দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, উত্তর ২৪ পরগণা, বীরভূম সহ প্রায় গোটা রাজ্যেই একই চিত্র। বহু ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা সশস্ত্র পুলিশের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। যেখানে তারা ছিল সেখানেও হয় নীরব দর্শক থেকেছে নতুবা বিরোধীদের উপর নৃশংস হামলা চালাতে সাহায্য করেছে। তার পরিণতিতেই এত মানুষের প্রাণহানি। কুলতলীতে এস ইউ সি আই (সি)-র ১১ জন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং একজন কর্মী কাটারির আঘাতে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায় এস ইউ সি আই (সি) প্রার্থীর এজেন্ট বোমায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ওই জেলার হরিহরপাড়ার স্বরূপপুরে ৯টি বুথ দখল করে অবাধ ছাপ্পা দেয় তৃণমূল।
এই নির্বাচন ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক সিপিএমের তাণ্ডবকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর বিরুদ্ধে আমরা জনসাধারণকে, বিশেষ করে ছাত্র-যুব সমাজকে সচেতন ও সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
পুনর্নির্বাচনেও সন্ত্রাস
দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলী ব্লকের দেউলবাড়ি দেবীপুরে কাছারিমাঠ এফ পি স্কুলের ২টি বুথে ও জয়নগর-২ ব্লকের ময়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের বটতলা এফ পি স্কুলের ৩টি বুথে ১০ জুলাই পুনর্নির্বাচন হয়। দু’টি ব্লকেই আগের রাত থেকে পাড়ায় পাড়ায় মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ে, প্রার্থী ও এজেন্টের বাড়িতে ঢুকে সশস্ত্র বহিরাগত গুন্ডারা ভয় দেখায়, বুথে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সাধারণ ভোটারদের বাড়িতে গিয়েও একইরকম ভাবে তারা ভয় দেখায়। ফলে অনেককেই অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়। সকাল থেকে রাস্তার সমস্ত মোড়ে বহিরাগত সশস্ত্র গুন্ডারা পাহারা দিতে থাকে, যাতে ভোটার ও প্রার্থী বা এজেন্ট আসতে না পারেন। এই হুমকি উপেক্ষা করে এস ইউ সি আই (সি)-র এক এজেন্ট বটতলা স্কুলের একটি বুথে গেলে গুন্ডারা জোর করে তাঁকে বের করে দেয়। বুথের বাইরে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও তাদের ঘিরে থাকা গুন্ডাবাহিনীর বলয় ভেদ করে কোনও ভোটার ভিতরে আসতে পারেননি। অবাধে ছাপ্পা দিয়ে ভোট শেষ হয়। ফলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতেই ভোট প্রহসনে পরিণত হয়।