গণবিক্ষোভের চাপে নতি স্বীকারে বাধ্য হলেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো৷ জনগণের দাবি মেনে ১৩ অক্টোবর তিনি প্রত্যাহার করে নিলেন জনস্বার্থবিরোধী ৮৮৩ নম্বর ডিক্রি, যাতে জ্বালানির ওপর সমস্ত ভরতুকি তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল তাঁর সরকার৷
অক্টোবরের শুরু থেকে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে ইকুয়েডর বিক্ষোভে উত্তাল৷ খেটে–খাওয়া মানুষ, যাদের অধিকাংশ জনজাতি গোষ্ঠীভুক্ত, পুলিশ ও মিলিটারির বর্বর হামলার মুখে দাঁড়িয়ে মোরেনো সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ চলেছে সরকারি দপ্তর ঘেরাও ও রাস্তা অবরোধ৷ দাবি উঠেছে, প্রেসিডেন্ট মোরেনোকে পদত্যাগ করতে হবে৷
কেন এই বিক্ষোভ? দেশের মানুষ লক্ষ করছে, জনস্বার্থ রক্ষার দেদার প্রতিশ্রুতি বিলিয়ে সরকারে বসে মোরেনো দেশি–বিদেশি পুঁজিপতিদের মুনাফার ভাণ্ডার রক্ষা করার কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন৷ ধনকুবেরদের সাড়ে চারশো কোটি ডলার ট্যাক্স অবলীলায় মকুব করে দিয়েছেন তিনি৷ কর ফাঁকি দিতে ধনীদের শত শত কোটি ডলার অন্য দেশের ব্যাঙ্কে পাচার হয়ে যেতে দিয়েছেন৷ পাশাপাশি নির্মম ভাবে ছাঁটাই করেছেন গরিব মানুষের জন্য সরকারি ব্যয় বরাদ্দ৷ সম্প্রতি সাম্রাজ্যবাদী আর্থিক সংস্থা আইএমএফ–এর থেকে ১ হাজার কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর সরকার৷ আইএমএফ শর্ত দিয়েছে, ঋণ পেতে গেলে ইকুয়েডরে জ্বালানির ওপর থেকে ভরতুকি তুলে নিতে হবে৷ সরকারি কর্মী ছাঁটাই করতে হবে৷ যাদের কাজ বজায় থাকবে, কমিয়ে দিতে হবে তাদের বেতন৷ এছাড়া সমাজকল্যাণ খাতে সরকারি বরাদ্দে ব্যাপক কাটছাঁট করতে হবে৷
প্রেসিডেন্ট মোরেনো একে একে শর্তগুলি চালু করতে শুরু করেছিলেন৷ খেটে–খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্দশার অন্ধকার আস্তে আস্তে গাঢ় হচ্ছিল৷ এই অবস্থায় জ্বালানির ওপর ভরতুকি তুলে নেওয়ার সরকারি ঘোষণায় আগুনে ঘি পড়ে৷ কারণ জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অর্থ পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে জনজীবনের অতি প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্যের দাম বৃদ্ধি৷
এই অসহনীয় অবস্থার বিরুদ্ধে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া, গরিবি–বেকারি–ছাঁটাই জর্জরিত ইকুয়েডরের সাধারণ মানুষ দেশ জুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে৷ দিনের পর দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিলে স্পন্দিত হতে থাকে রাজপথ৷ অবরুদ্ধ হয় হাইওয়ে ও সরকারি দপ্তরগুলি৷ মোরেনো সরকারের নির্দেশে পুলিশ ও মিলিটারি ব্যাপক হামলা চালায় বিক্ষোভকারীদের ওপরে৷ মৃত্যু হয় ১০ জনের৷ আহত হন হাজারেরও বেশি মানুষ৷ গ্রেপ্তার হন দু’হাজার এবং ১০০ জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ জনজাতি গোষ্ঠীগুলির মানুষ ও তাদের সংগঠনগুলির ওপর ব্যাপক রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চলতে থাকে৷
এত ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও পিছু হঠেননি ইকুয়েডরের মানুষ৷ অবশেষে বাধ্য হয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দাবি মেনে নেন মোরেনো৷ ১৩ অক্টোবর তিনি ঘোষণা করেন, জ্বালানির ভরতুকি বহাল রাখা হবে৷ আন্দোলনের জয়ে আনন্দের ঢল নামে দেশ জুড়ে৷ যদিও পরদিনই মোরেনো সরকারের হিংস্র দাঁত–মুখ আরও একবার বেরিয়ে পড়ে, যখন তাঁর সরকারের পুলিশ আন্দোলনের নেতাদের বাড়ি একটা একটা করে খুঁজে বের করে খানাতল্লাশি চালায় এবং তাঁদের গ্রেপ্তার করে৷ মোরেনো সরকারের এই বর্বর কার্যকলাপের নিন্দায় সোচ্চার হয়েছেন গোটা বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ৷ ইকুয়েডরের এই জয় দেখালো, একমাত্র গণআন্দোলনই পারে জনগণের দাবি আদায় করতে৷ পাশাপাশি অত্যাচারী শাসকের আগ্রাসী আচরণ এও প্রমাণ করল যে, ইকুয়েডরের মানুষের আরও অনেক লড়াই এখনও বাকি৷